সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

(১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি।

(২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই।

(৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্হার দাবী কেও করে নাই। উদ্দেশ্য ছিল – হিন্দুদের পবিত্র ও নির্মল আনন্দ দোল উৎসব বন্ধ করা। একই সাথে হিন্দুরা হেজাবী মুসলিম নারীদের শ্লীলতা হানি করেছে – অজুহাতে শাখারী বাজার এলাকা হিন্দুদের আক্রমন করা। ব্যাপারটা যে পরিকল্পিত এবং পুলিশ যথাসময়ে কয়েকজন মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করলে এধরনের জঘন্য ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।

(৪) ৫ মে, ২০১৩ বায়তুল মোকারমে হেফাজত যখন শত শত কোরান পুড়িয়েছিল তখন কি কেউ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলেছিল?

(৫) ১২ মার্চ ২০১৮ তারিখে কক্সবাজারে একজন কোরানের ভিতরে পৃষ্ঠা কেটে সেখানে ইয়াবা ঢুকিয়ে পাচার করছিলো তখন কারও মনে হয়েছিল সেটা ধর্ম অবমাননা?
মনে হয়নি কারণ কোরআন অবমাননা পুরো বিষয়টিই সাম্প্রদায়িক টার্ম ও রাজনৈতিক টার্ম।

উপস্থিত কারো কাছে কি মনে হয় কোনো ধর্মপ্রাণ মানুষ ওই মন্ডপে কোরআন শরীফ রাখতে গেছে? কারো কাছে কি মনে হয় কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা পুজা মন্ডপে, মন্দিরে হামলা করেছে? কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কি সাধুদের খুন করেছে? ধর্ষন করেছে? যারা হিন্দুদের দোকান-বাড়ি-মন্দির-বসতি লুট করেছে, আগুন লাগিয়েছে তাদের মধ্যে কেও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি আছে?
তাহলে এগুলো কারা করেছে?? এধরনের প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হতে দেখেছি। তাদের লেবাস যাই হোক না কেনো – তাদের লক্ষ্য রাজনৈতিক। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া, তাদের লক্ষ্য হিন্দুদের সম্পদ কুক্ষিগত করা- এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এদের কাছে হিন্দুরা খারাপ কিন্তু তাদের সহায়-সম্পদ লুট করা হালাল। এরা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে চলেছে বছরের পর বছর।

বাংলাদেশে হিন্দু হওয়া কি অপরাধ?
আমি বলবো- হ্যাঁ, অপরাধ।
কেমন অপরাধ?
আমিরিকায় রেড ইন্ডিয়ান হওয়া যেমন অপরাধ, অষ্ট্রেলিয়ায় আদি অষ্ট্রেলিয়ান (Aboriginal) হওয়া যেমন অপরাধ, দখলদারদের সামনে অসহায় নির্যাতিত ভূমিপুত্র হওয়া যেমন অপরাধ - তেমন অপরাধ।

শ্রদ্ধেয় অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের গবেষণামূলক তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ১০৫২২ বর্গ কিলোমিটার জমি শত্রু সম্পত্তি হিসাবে (পোগতিশীলদের সংশোধনীতে অর্পিত সম্পত্তি) দখল হয়ে গেছে। জমির এই আয়তন ইজরাইল নামক রাষ্ট্রের অর্ধেক! মানে ইজরাইল ফিলিস্তিনিদের যে পরিমাণ জমি দখল করেছে বাংলাদেশ তার অর্ধেক দখল করে নিয়েছে কিন্তু টু শব্দটি হয়নি। কারণ বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ !!!!
সাম্প্রদায়িক বিষবাস্পে ভরা এই দেশে মুষ্টিমেয় শয়তান - সাম্প্রদায়িকতাকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুদের দেশ ছাড়া করছে, তাদের সম্পদ লুট করছে, তাদের মেয়েদের উপর নির্যাতন করছে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে শ্রদ্ধেয় রানা দাশগুপ্ত বলেন, “১৯৭২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যতগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭২-এর অক্টোবরে এই শারদীয়া দুর্গাপূজাতেই চট্টগ্রাম নগরীতেই অন্তত ১৫টি পুজামণ্ডপে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদুত মনোরঞ্জন ধরের ময়মনসিংহের বাড়ির পূজা মণ্ডপেও ভাঙচুর চালানো হলো। কোনো মামলা, গ্রেপ্তার, বিচার- কিছুই হলো না। ১৯৯০ সালে এরশাদের আমলে সারাদেশে তিন দিন, ১৯৯২ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার আমলে ২৭ দিন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, খুন নির্যাতনসহ নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করা হলো। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হাইকোর্টে মামলা করা হলো। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ অন্য মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ১৫ হাজার ঘটনার একটি তালিকা তৈরি করা হলো। সাহাবুদ্দিন কমিশন গঠন করা হলো। সেই কমিশন ২০১১ সালে ৫ হাজার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের একটি বিশদ তালিকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে দিল। আমরা দেখা করলাম, তিনি আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কোনো কাজ করলেন না। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আসা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছেও বিচার চেয়ে দেখা করলাম। তিনিও আশ্বাস দিলেন, কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হলো না। তাই বলছিলাম ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ চলছে আমাদের দেশে।“

আওয়ামীলীগ এখনো জামাত-বিম্পির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে। এই অস্থিরতা, এই গোলযোগ যদি বিএনপি কিংবা শিবিরের কর্মও হয়, তাহলেও সরকার হিসাবে এখানেই আপনারা ব্যর্থ। আপনাদের হাজার কোটি টাকা দিয়ে পালা প্রশাসন ব্যার্থ, গোয়েন্দা সংস্থা ব্যার্থ, আপনাদের নিয়ত ব্যার্থ, আপনারা স্রেফ ব্যার্থ। ১২/১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে ধর্মান্ধতার বীজ আপনারা আরো গভীরে রোপন করা ছাড়া আর কি করতে পেরেছেন???

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তার কতটুকু কী রাখে, তাতো আপনারা দেখতেই পারছেন।
গত নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে আওয়ামীলীগ সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। এর মধ্যে আরেকটি নির্বাচন সমাগত কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার এব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয় নাই। কিন্তু প্রতি নিয়ত হিন্দুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চলছে – একটি ঘটনারও উল্লেখযোগ্য কোনো বিচার সরকার করে নাই।
তাই প্রশ্ন জাগে আওয়ামীলীগ কী পাকিস্থানের পথে হাঁটছে !!!!!!!!
পাকিস্তানে একদিকে বিপুল উদ্যমী উদার তারুণ্য। অন্য দিকে মৌলবাদ। মাঝখানে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। নওয়াজ বা ইমরানের কাঁধে বন্দুক রেখে সেগুলোকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এদেশেও সেই একই ফরমুলা আমদানী করার চেষ্টা চলছে নাকি??
তাহলে কি ভোটের রাজনীতির কাছে আদর্শের রাজনীতি বিক্রি হয়ে গেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালির ট্যাক্সের টাকা দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তোষণের কারন কি? ওই সাম্প্রদায়িক শক্তি এই দেশের অর্থনীতিতে কি অবদান রাখছে?? যে আদর্শকে বাংলাদেশ ১৯৭১ এ রক্তাক্ত স্বাধীনতার মাধ্যমে অস্বীকার করেছে, সেই বিষবৃক্ষকে মহীরুহ হবার সুযোগ কেনো দিচ্ছেন??

সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, এদেশে সাম্প্রদায়িকতা একটা রাজনীতিক বানিজ্য। তাই হয়তো সরকার ও পুলিশের ইচ্ছে নেই সাম্প্রদায়িকতা থামানোর, যদি ইচ্ছে থাকতো তাহলে বিচার করতো। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছে।
অন্যদিকে এদেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর (যেমন ধর্ষন, খুন, সাম্প্রদায়িক হামলা) এক শ্রেনীর ইতর বের হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এদের কাজ হল অপরাধ কে নর্মালাইজ করে ফেলা।
কোথাও ধর্ষন হলে ওরা বলে মেয়ের পোশাক ঠিক ছিল না, মেয়ে ওই সময়ে ওখানে যাবে কেন? অর্থাৎ ভিক্টিম ব্লেইমিং শুরু হয়ে যাবে। পুরো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে দেবে এরা। এভাবে সমাজ আরো ধর্ষক তৈরী করে।
এরপর সাম্প্রদায়িক হামলা হলে, এইটা সব দেশে হয়, ভারতেও হয়, আমাদের ওখানে হয়েছিল তখন কি হিন্দুরা প্রতিবাদ করেছিল?
সব দেশে হয় তাই এখানে হওয়াটা খুব সিম্পল বিষয়, চুপচাপ মেনে নাও। ভারতে নির্যাতন হয় তাই তোমাদের উপরও হবে মেনে নাও। ইত্যাদি ইত্যাদি। অকামের বেলায় ষোল আনা আর ধরা পড়লে সহজ সরল এক আনা !
পৃথিবী অপরাধীদের জন্য নস্ট হয়না, নস্ট হয় যাদের প্রতিবাদ করার শক্তি ছিল তাদের নীরবতার কারনে। আর অপরাধকে নর্মালাইজ করা ইতরদের কারনে।

এই দেশে শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয়ের কারণে আমাদেরকে নিগৃহীত হতে হয়।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও ধর্মীয় ও জা‌তিগত সংখ্যালঘু নিপী‌ড়ন অব্যাহত গ‌তি‌তে চল‌ছে।
জ‌মি ও অন্যান্য সম্প‌ত্তি দখল, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, নারী নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় জড়া‌নো, ম‌ন্দি‌রের সম্প‌ত্তি দখল, দে‌বোত্তর সম্প‌ত্তি দখল, অ‌র্পিত সম্পত্তির কো‌নো সুরাহা না হওয়া- এসব কো‌নোকিছুই থে‌মে নেই।
ফলাফল, প্র‌তি আদমশুমারী‌তে হিন্দুরা কেবল কম‌ছেই।

এটা এই রাষ্ট্রের ব্যার্থতা, এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অপমান।
আমার নিরাপত্তার দায়িত্ত্ব এই রাষ্ট্রের। সারা বছর এই যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ঘুরে বেড়ায় তখন কোনো প্রতিবাদ হয় না। কে প্রতিবাদ করে? আমাকে যখন মালাউন গালি দেয় তখন কে প্রতিবাদ করে? আমাকে যখন ইন্ডিয়ার দালাল বলা হয়, তখন আমার দেশপ্রেম কে যখন প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় শুধুমাত্র আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে, এই দেশ আমার, আমার চৌদ্দ পুরুষ এই দেশে রয়েছে।
৪৭শে যাইনি, ৬৬তে যাইনি, ৭১-এ যাইনি, ২০০১-এ যাইনি - এই দিন দেখার জন্য??

আমি এই মাটির সন্তান। আমার পূর্বপুরুষ এখানেই জন্মেছে, এখানেই বংশ বিস্তার করেছে। আমার ভাষা, খাদ্য, পোশাক, সুর, বাদ্য, আচার, অনুষ্ঠান, রীতি, নীতি, ধর্ম, চর্চা, জীবন,,যাপন, সংস্কৃতি সবকিছুই এই মাটির উৎস থেকে উৎসরিত। যে পুরাকথায় দুর্গা বাপের বাড়ির আদরের মেয়ে হয়ে আসে সে পুরাকাহিনী এই মাটির গন্ধমাখা। এই মাটিতে আমার পদবীর ঠিকুজি পাওয়া যায় সর্বনিম্ন পনেরশ বছর আগে থেকে সর্বোচ্চ আড়াইহাজার বছর আগ অব্দি। আমি অন্য কোথাও থেকে কোনো কিছু ধার করে আনিনি। তাই আমার সংখ্যাধিক্যের দম্ভ নেই, কথায় কথায় ধার করে আনা জামায় দাগ লেগে যাবার ভয়ও আমার নেই। আমার আছে এই মাটির প্রাচীন উত্তরাধিকার এর গর্ব। আমাকে বিলোপ করা সহজ নয় এই মাটি থেকে। আমি সংখ্যায় হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো কিন্তু আমার অস্তিত্ব বিনাশ করা যাবেনা। আমি, আমার দার্শনিক পরম্পরা এবং আমার সংস্কৃতি অবিচ্ছেদ্যভাবে অবিনাশীভাবে মিশে থাকবো এই দেশের মাটিতে, আকারে এবং নিরাকারে; চেতনে ও অবচেতনে।

শুধুমাত্র হিন্দু হবার অপরাধে পাকিস্থান আমলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে নিগৃহীত হতে হয়েছে সেই একই অবস্থা যদি স্বাধীন বাংলাদেশেও চলতে থাকে - এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। এধরনের প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হতে দেখেছি।
সেখানে শুধু সম্পদ লুট হয়নি, লুন্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতার চেতনা, লুন্ঠিত হয়েছে মানবতা।
১। কক্সবাজারের রামু, ২। য‌শোরের মালোপাড়া, ৩। ঠাকুরগাঁও এর গড়েয়া, ৪। ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার নাসিরনগর, ৫। গাইবান্ধার সাঁওতালপল্লী, ৬। রংপুর এর ঠাকুরপাড়া, ৭। ভোলা'র বোরহানউদ্দিন, ৮। কু‌মিল্লার মুরাদনগর, ৯। সুনামগঞ্জের শাল্লা,
সর্বশেষ রক্তাক্ত দুর্গা পুজা ২০২১।
প্রত্যেকটি স্থানে আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হতে দেখেছি।
এই তালিকা আর কতো দীর্ঘ হলে এই তান্ডব থামবে??

যারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক ভাবেন তাদের নিজেদেরই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা-গ্রামে-শহরে। তাহলেই কেবল সাম্প্রদায়িকতা রুখা সম্ভব, আর দেরি করলে অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে।

সাম্প্রদায়িকতা রুখতে আজ থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো, সংঘবদ্ধ হবো। আমরা সবাই মিলে এই অপশক্তিকে রুখে দেবো। কারও ভরসায় বসে আমার দেশকে আফগানস্থান হতে দেবো না।

১৮/অক্টোবর/২০২১

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...