মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন।
এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন।
এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দেবালয়ে আক্রমণ, খুন, শারীরিক নিগ্রহ, সামাজিক ঘৃণার চাষাবাদের শিকার হলে কেমন অনুভুতি হয়।
কিন্তু এই সরকারের শাসনামলে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে দেখেছি- এই ঘটনাগুলো যখন ঘটে তখন ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়া হয় না, সুবিচার হয় না। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এধরনের ঘটনা ঘটার পরে সরকার দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। কিন্তু এই তথ্যের স্বপক্ষে শক্ত কোনো নজির নেই। কিছু মানুষকে ধরা হয়, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় তারা একপ্রকার স্বাধীন জীবন যাপন করে। এছাড়াও আমরা দেখেছি বেশিরভাগ ঘটনার সাথে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কোনো ঘটনারই আমরা দ্রুত এবং কঠোর কোনো শাস্তি দিতে দেখিনি। বরং অনেককে আমরা দেখেছি পরবর্তী নির্বাচনে তাদের নমিনেশন দিতে বা আরো বড় পদ দিতে। এর ফলে দিন দিন হিন্দুদের উপর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। আমরা এই মাটির ভূমিপুত্র। সেখানে এই দেশের সংবিধানে পরোক্ষভাবে আমাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানানো হয়েছে।
এছাড়া একাত্তর টিভি নিউজে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী বলেন, "নিজেদের মতো করে ধর্ম পালন করবে সবাই। তবে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কোন কথা বলা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।"
এই কথা তিনি কাদের উদ্দেশ্যে বললেন আমি স্পষ্ট নই। আমার ধর্ম পালন এবং আমাদের হাজার বছরের রীতিনীতি যদি কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?? আমরা কি মুর্তি পূজা বাদ দেবো? আমরা কি নাচ-গান বাদ দেবো?? আমরা কি সিঁদুর পরা বাদ দেবো?
অপরদিকে প্রতিনিয়ত ওয়াজসহ, সামাজিক মাধ্যমে দেদারসে হিন্দুদের এসব ব্যাপারে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালানো হয়। এমনকি আজ দেখলাম একটি ছোট্ট বাচ্চা যে কিনা মাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে সে ক্রিকেটার সৌম্য সরকারের সাথে কথা বলতে চায় না, কারণ সৌম্য হিন্দু!!! এই বাচ্চা এই জ্ঞান কোত্থেকে পেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী??
আবার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান করেছেন, নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবতে ।
এই কথার তাৎপর্য কি?
স্বদেশে জনশুমারীতে হিন্দুদের সংখ্যা যতই কমুক, যতই নির্যাতনের ঘটনা ঘটুক, বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পিতৃভূমিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়া এই জাতির "সংখ্যালঘু" স্বীকৃতি এই সরকার দেবে না!! সুতরাং জাতিসংঘ স্বীকৃত সংখ্যালঘুদের প্রদেয় কোনো সুযোগ-সুবিধা হিন্দুরা ও আদিবাসীরা পাবেন না। মানে, সরকার দিতে নারাজ।
সরকারের ভাষ্য হলো, আপনারা সমান সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার ভোগ করবেন।
হা হা হা। সরকার নিজেই কতটা বৈষম্য করেন সেটা কি আমরা বুঝি না? বাজেট বিশ্লেষণ করলে সেটা স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারেও সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিশন ও সুরক্ষা আইনের অঙ্গীকার করেছিল। এখন ক্ষমতায় বসে বলেন, নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। চার বছর পার হতে চললো, কোনো সাড়াশব্দ নেই। অর্থাৎ হিন্দুদের দাবি-দাওয়া ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফালাফিই সার হবে।
আসলে এই ১২/১৩ বছরে বাংলাদেশের সংবিধানের যে চার মূলনীতি তথা স্বাধীনতা চেতনার বাস্তবায়নে কি করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী??
