সাক্ষাৎকারের প্রথমদিকে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কেন্দ্রিক হৃদয় বিদারক ঘটনা নিয়ে নানা কথা বলেছেন। একপর্যায়ে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের উপর নির্যাতন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "যতদিন আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা সব সময় এটাকে গুরুত্ব দেই এবং আমি সবসময় তাদের (সংখ্যালঘুদের) বলি যে, আপনারা আমাদের নাগরিক। দেশের প্রতি আপনাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটলেও সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেই। এটা কখনও কখনও হয়, এটি ঘটেছে, এটি খুব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি কিন্তু আপনি জানেন যে এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, এমনকি ভারতেও কখনও কখনও সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।"!!!
আমরা তথা বাংলাদেশের হিন্দুদের আদি পিতৃভুমি বাংলাদেশ। আমাদের কোনো পূর্বপুরুষ ভারত কিংবা বৈদেশ হতে বাংলাদেশে আসে নাই। অতএব এই দেশ আমাদের না ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু মহামহিম প্রধানমন্ত্রী- দিনের অতিথি, রাত হলে যখন ডাকাতের রূপ ধারণ করে, তখন গৃহস্থ কি করবে??
এরপর তিনি এদেশের হিন্দুদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আসলে কি বলতে চান? দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় হিন্দুরা কিভাবে দিলে তিনি খুশি হন?
অর্পিত সম্পত্তি আইন করে হিন্দুদের সব সম্পত্তি সরকারি ভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছেন৷ প্রতিনিয়ত হিন্দুদের জান-মাল-সম্মানের উপর নির্যাতন হচ্ছে এবং সরকার কোনো বিচার করছে না। সরকারী চাকুরি, স্বায়ত্বশাসিত এমন কি বেসরকারী চাকুরি যেখানে একান্ত মেধা ছাড়া নিয়োগ হয় না, সেটা ব্যতীত সর্বত্র হিন্দুরা অবহেলিত। রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে এমন আবহ তৈরি করা হয়েছে যে, দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ হিন্দুদের ঘৃণা করে। সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন-অফলাইন, ওয়াজ-মাহফিলে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের ধর্ম, কম্যুনিটি সম্পর্কে নিরন্তর কুৎসা রটানো হয়। যারা এগুলো করে তারা সিনা টান করে ঘুরে, কিন্তু যারা এগুলোর প্রতিবাদ করতে যায়, তখনই তারা ডিজিটাল আইনের শিকার হয়। কেনো?? একদেশে দুই আইন কেনো?? প্রায় প্রতিটি পূজায় প্রতিমা ভাঙ্গা, হিন্দুদের উপর আক্রমণ, তাদের বাড়ি-দোকান লুট, জান-মাল-পেশা-সম্মানের উপর আক্রমণ হয়। কিন্তু একটি ঘটনারও সঠিক বিচার সম্পন্ন হয় নাই। এবং এসব ঘটনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা যুক্ত বলেই আমরা জেনেছি। কিন্তু আপনি আপনার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "আমি মনে করি যে উভয় দেশেরই উদারতা দেখানো উচিত, আপনি জানেন বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং আমাদের এখানে অনেক ধর্ম রয়েছে। আর এখানে ধর্মের সম্প্রীতি খুব বেশি। তাই একটি বা দুটি ঘটনা যখন ঘটে তখনই... বিশেষ করে আমার দল... আমার দলের লোকেরা, তারা অনেক বেশি সচেতন এবং আমার সরকারও। আমরা অবিলম্বে ব্যবস্থা নিই।" !!!
আপনার দলের লোকের পক্ষ নিয়ে আপনি সাফাই গাইলেন !!! অর্থাৎ যারা এধরনের হিন্দু নিধনের সাথে যুক্ত আপনি তাদের কি মেসেজ দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী??
আরেকটা যুক্তি দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে ভারতেও এরকম ঘটে।
সেই দশম শ্রেণীতে থাকতে বিতর্ক করার সুবাদে ফ্যালাসি অব লজিক সম্পর্কে কম বেশি জানতে হয়েছিলো। ভারতে যা হবে তা বাংলাদেশে হলে হালাল হয়ে যাবে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
পাকিস্থান, আফগানিস্থানেও এক সময় হিন্দু প্রধান ছিলো। সেসব হিন্দুরা আজ কোথায় গেছে?? কি তাদের ভাগ্যে ঘটেছিলো?? এমনকি এখনো ২/১ জন হিন্দু যারা পাকিস্থান এবং আফগানিস্থানে আছে তাদের ভাগ্যে কি ঘটছে?? কেনো ঘটছে?? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশটাকে কি পাকিস্থান তৈরিতে আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন? ভারতের সাথে যদি তুলনা দেন- তাদের মতো পুলিশ প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। হিন্দু প্রধান দেশ হয়েও তারা কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রাক্টিস করে। আর বাংলাদেশের তো সাংবিধানিকভাবে হিন্দুদের ২য় শ্রেণীর নাগরিক বানানো হয়েছে।
আপনি যদি আমার সমালোচনা করতে পারেন, তাহলে আমারও আপনার সমালোচনা করার অধিকার থাকতে হবে। আপনি শুধু ওয়াজ শুনাবেন, অন্যদিকে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, জেল দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করাবেন- এই দ্বৈতনীতি বন্ধ করুন।
কিছুদিন আগে জন্মাষ্টমী'র সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন হিন্দুরা যেনো নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবে। এই কথার মাধ্যমে তিনি মেসেজ দিলেন? নির্বাচনের পূর্বে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন করার কথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টো’তে ওয়াদা দেয়া ছিলো। ইংগিতে প্রধানমন্ত্রী কি বলে দিলেন সেটা আর হবে না??
শেখ হাসিনা প্রায়ই পরিবারের কথা বলে প্রকাশ্যে কান্নাকাটি করেন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে না তিনি ৭২ এর সংবিধানে যেতে পারলেন; না তিনি সংবিধানের চার মুলনীতি বজায় রাখতে পারলেন। পিতার রক্তের সাথে তিনি কতটুকু ইনসাফ করছেন তা রীতিমতো প্রশ্নসাপেক্ষ।
কওমি মাতা আজ মদিনা সনদ বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া। হয়তো তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পাকিস্থানের নীতি গ্রহন করতে যাচ্ছে, যে পাকিস্থানের কবর তাঁর পিতার হাতে হয়েছিলো।
ANI News Link