সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাচ্চাদের মনে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে ঘৃণার চাষাবাদ করছে কারা?

রাজীব রানা দাস এর টাইম লাইন থেকেঃ

 ১.
পুরো সেকশনে আমার ছেলে একমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী। ওদের স্কুলে রেগুলার পিরিয়ডে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ক্লাস হয়। সে সময় ওকে ক্লাসরুমেই বসে থাকতে হয়। বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সবগুলি পিরিয়ড শেষ হলে একদম স্কুল ছুটির আগে বাদবাকি সব সেকশনের সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের নিয়ে সম্পুর্ণ আলাদা কক্ষে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা ক্লাস নেয়া হয়। সেসময় ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোন ছাত্র আর ক্লাসে থাকেনা। যেহেতু সব ক্লাস শেষ তাই তারা যার যার মত বাড়িতে চলে যেতে পারে।

২.
কৌশিক আজ বললো "সা**" নামের একটা ছেলে ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ ক্যান্সেল করেছে। জিজ্ঞেস করলাম, কেন ক্যান্সেল করলো? কৌশিক বললো, "আমি হিন্দু, তাই"। সম্প্রতি আরো একটি বাচ্চা কৌশিককে প্রতিদিনই বলে মুসলিম হয়ে যা। লা ইলাহা....বল। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ঢুকে না এত ছোট ছোট (ক্লাস থ্রি)  বাচ্চাদের মাথায় এসব কে ঢুকায়!! 

৩.
আচ্ছা, জাতীয় শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা কি খুব জরুরী? সরাসরি ধর্ম শিক্ষার বদলে " মানবিকতা/সিভিক সেন্স/সহমর্মিতা" এসব আরো বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না? ইসলাম/হিন্দু/খ্রিস্টান ধর্মীয় শিক্ষা অষ্টম বা নবম শ্রেণি থেকেও শুরু করা যায়। বাচ্চারা তো পরিবার থেকেই ধর্ম শিক্ষা লাভ করতে পারছে। সবার বাড়িতেই হুজুর রাখা হয়। বা যার যার ধর্মীয় অনুশাসন শেখানো হয়। ওদের ম্যাচিউরিটি বাড়লে তখন না ক্লাসরুম আলাদা করা যেতে পারে।

৪.
যে জাতির শিশুদের মনে বাড়ন্ত সময় থেকেই স্কুলে আলাদা করে ধর্মীয় শিক্ষার নামে বিভেদের বিষবৃক্ষ রোপন করে দেয়া হচ্ছে, সেই জাতির মুক্তি কোথায়? আর আমরাই বা কোথায় যাব? অল্প কয়টা ঘরই তো অবশিষ্ট আছি!!

রাজীব রানা দাস এর ফেসবুক লিংকঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid027fqERTjj1fd6pe6ShZYyYVxBy8XWvBsk87GKnjMT3KY1SmS9vAAvr3jmTGn8LRnTl&id=1354870009



Anjon Acharya, কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এর লেখা থেকেঃ

"গদ্য যখন স্কুল থেকে ফেরে, আমি তখন অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিই। ফেরার পর প্রতিদিনই দরজায় কলিংবেল বাজায় সে। বেলের শব্দ শুনেই বুঝতে পারি, গদ্য এসেছে। কারণ, তার বেল চাপা অন্যদের মতো নয়। একাধিকবার বাজায়। বাচ্চারা যেমনটা করে। আজ বেল বাজার পর দরজার পিপ হোলে চোখ রাখতে হলো। দেখি, ওপাশে গদ্য দাঁড়ানো। মনে খটকা জাগলো। বড়দের মতো করে এক বেল তো ও চাপে না। 

দরজা খুলতেই মন খারাপের মেঘ নিয়ে ঘরে ঢুকলো সে। এসেই ঘরের ফ্লোরে শুয়ে পড়ে। বাইরে থেকে ফেরার পর সাধারণত ও নিজ থেকে হাত-মুখ ধোয়। আজ ফ্রেশ হতে বললাম। কথায় কোনো সায় নেই। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? কোনো উত্তর নেই। তারপর সময় যেতে যেতে একসময় বলল, তার ক্লাসের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সাইফ তাকে আজ মেরেছে। শিশুদের স্কুলে একে-অপরে মারামারি করা নতুন কিছু নয়। ওটা তাদের খেলার অংশ বলা যায়। এমন কাণ্ড অনেক দিন হয়েছে। কিন্তু আজ কেমন জানি লাগে গদ্যকে। বললাম, কেন মেরেছে? গলায় কষ্টের স্বর টেনে বলল, সাইফ তাকে বলেছে, “তুমি হিন্দু, হিন্দুরা খারাপ, তারা পাপী। তুমি মুসলমান হয়ে যাও।” এ কথার প্রতিত্তোরে গদ্য বলেছে, “না, আমি মুসলমান হব না।”

এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে গদ্যকে সাইফ কিল-ঘুষি দিতে শুরু করে, তাকে মুসলমান হতে জোরজবরদস্তি শুরু করে। আঘাত পেয়ে এক পর্যায়ে গদ্য ক্লাসে কান্না করে ওঠে। ক্লাস টিচার এসে জানতে চায়, কী হয়েছে? কাঁদতে কাঁদতেই গদ্য সব খুলে বলে তার টিচারকে। অথচ তার এই বন্ধুটির জন্য গতরাতে আনা মিষ্টি আঁখটি নিজে না খেয়ে কেটে টুকরো করে নিয়ে গিয়েছিল একসঙ্গে খাবে বলে। এর আগে তাকে গিফট করা চকলেট, লিচু, আম, জন্মদিনের কেক, টিফিরের জন্য ঘরে বানানো খাবার, বিশেষ করে চিকেন আইটেম—প্রায় প্রতিদিনই নিজের পছন্দের কিছু না কিছু খাবার সাইফের জন্য নিয়ে যায় গদ্য। আজ সে বলছে, এখন থেকে সে আর সাইফের জন্য কিছু নেবে না। সাইফ তাকে মেরেছে। কিন্তু এই গদ্যই আজকের আগ পর্যন্ত ‘সাইফ’ বলতে ছিল অজ্ঞান।

পশ্চিম ধানমণ্ডির বেসরকারি একটি স্কুলে ক্লাস টু-তে পড়ে গদ্য। বয়স ৮ বছর। সাইফও একই ক্লাসে পড়ে। তার বয়সও একই। সাইফের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ বা বক্তব্য নেই। ও তো শিশু। কিন্তু কথা হলো, এই শিক্ষা তাকে দিলো কে? কেন এইটুকু বয়সেই তার কোমল মগজে কাজ করলো, অন্য ধর্ম খারাপ, সেই সঙ্গে ধর্মান্তর করার চেতনা? কে তাকে শেখালো অন্য ধর্মের প্রতি এমন ঘৃণা ও বিদ্বেষ? কোমলমতি একটি শিশুর মুখে এমন ধর্মান্ধ কথা কে শিখিয়েছে তাকে? আমাদেরও তো ছেলেবেলা ছিল। আমাদের পাড়াটি হিন্দু অধ্যুষিত হলেও সেখানে বাস ছিল কয়েকটি মুসলিম পরিবারের। টিটু, টিপু, অমি আমাদের ছেলেবেলার বন্ধু। প্রতি ঈদের সকালে নতুন জামা-কাপড় পরে টিপুদের বাসায় সেমাই খাওয়া, অমিদের বাসায় পোলাও-মাংস খাওয়া ছিল ধরাবাঁধা। প্রতি দুর্গাপূজায় বা শ্যামাপূজায় টিপু আমাদের সঙ্গে নতুন জামা-কাপড় পরে পূজার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতো।

আমরা কখনও ধর্ম দিয়ে একে অপরকে চিনিনি। এমনকি ধর্ম বিষয়টি কখনও আমাদের মাথায় কাজও করেনি। তবে আজ কেন গদ্যকে কাঁদতে হলো? তার প্রিয়তম বন্ধু সাইফের মুখে এ কথা কেন তাকে শুনতে হলো? আগামীকাল আবার গদ্য স্কুলে যাবে, সাইফের সঙ্গে দেখাও হবে। জানি না, কী হবে? কিন্তু এমন অঙ্কুরেই ধর্ম এসে তাদের নির্মল বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল তুলে দেবে, তা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি গদ্য, আমিও ভাবতে পারছি না।"


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...