সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”।
এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন। 
-------

কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না।

কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন অনেকের অনেক বলার মধ্যেই ছিল না।

বছর-কয়েক পূর্বে, মহাত্মার অহিংস অসহযোগের যুগে এমনি একটা কথা এদেশে বহু নেতায় মিলিয়া তারস্বরে ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, হিন্দু-মুসলিম মিলন চাই-ই। চাই শুধু কেবল জিনিসটা ভাল বলিয়া নয়, চাই-ই এইজন্য যে, এ না হইলে স্বরাজ বল, স্বাধীনতা বল, তাহার কল্পনা করাও পাগলামি। কেন পাগলামি এ কথা যদি কেহ তখন জিজ্ঞাসা করিত, নেতৃবৃন্দেরা কি জবাব দিতেন তাঁহারাই জানেন, কিন্তু লেখায় বক্তৃতায় ও চীৎকারের বিস্তারে কথাটা এমনি বিপুলায়তন ও স্বতঃসিদ্ধ সত্য হইয়া গেল যে, এক পাগলা ছাড়া আর এত বড় পাগলামি করিবার দুঃসাহস কাহারও রহিল না।

তার পরে এই মিলন-ছায়াবাজীর রোশনাই যোগাইতেই হিন্দুর প্রাণান্ত হইল। সময় এবং শক্তি কত যে বিফলে গেল তাহার ত হিসাবও নাই। ইহারই ফলে মহাত্মাজীর খিলাফৎ-আন্দোলন, ইহারই ফলে দেশবন্ধুর প্যাক্ট। অথচ এতবড় দুটা ভুয়া জিনিসও ভারতের রাষ্ট্রনীতিক ক্ষেত্রে কম আছে। প্যাক্টের তবু বা কতক অর্থ বুঝা যায়; কারণ কল্যাণের হউক, অকল্যাণের হউক, সময়-মত একটা ছাড়রফা করিয়া কাউন্সিল-ঘরে বাঙলা সরকারকে পরাজিত করিবার একটা উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু খিলাফৎ-আন্দোলন হিন্দুর পক্ষে শুধু অর্থহীন নয়, অসত্য।

কোন মিথ্যাকেই অবলম্বন করিয়া জয়ী হওয়া যায় না। এবং যে মিথ্যার জগদ্দল পাথর গলায় বাঁধিয়া এত বড় অসহযোগ-আন্দোলন শেষ পর্যন্ত রসাতলে গেল, সে এই খিলাফৎ। স্বরাজ চাই, বিদেশীর শাসন-পাশ হইতে মুক্তি চাই, ভারতবাসীর এই দাবীর বিরুদ্ধে ইংরাজ হয়ত একটা যুক্তি খাড়া করিতে পারে, কিন্তু বিশ্বের দরবারে তাহা টিকে না। পাই বা না পাই, এই জন্মগত অধিকারের জন্য লড়াই করায় পুণ্য আছে, প্রাণপাত হইলে অন্তে স্বর্গবাস হয়। এই সত্যকে অস্বীকার করিতে পারে জগতে এমন কেহ নাই। কিন্তু খিলাফৎ চাই—এ কোন্‌ কথা? যে-দেশের সহিত ভারতের সংস্রব নাই, যে-দেশের মানুষে কি খায়, কি পরে, কি রকম তাদের চেহারা, কিছুই জানি না, সেই দেশ পূর্বে তুর্কীর শাসনাধীন ছিল, এখন যদিচ, তুর্কী লড়াইয়ে হারিয়াছে, তথাপি সুলতানকে তাহা ফিরাইয়া দেওয়া হউক, কারণ, পরাধীন ভারতীয় মুসলমান-সমাজ আবদার ধরিয়াছে। এ কোন্‌ সঙ্গ-ত প্রার্থনা? আসলে ইহাও একটা প্যাক্ট। ঘুষের ব্যাপার। যেহেতু আমরা স্বরাজ চাই, এবং তোমরা চাও খিলাফৎ—অতএব এস, একত্র হইয়া আমরা খিলাফতের জন্য মাথা খুঁড়ি এবং তোমরা স্বরাজের জন্য তাল ঠুকিয়া অভিনয় শুরু কর। কিন্তু এদিকে বৃটিশ গভর্নমেন্ট কর্ণপাত করিল না, এবং ওদিকে যাহার জন্য খিলাফৎ সেই খলিফাকেই তুর্কীরা দেশ হইতে বাহির করিয়া দিল। সুতরাং এইরূপে খিলাফৎ-আন্দোলন যখন নিতান্তই অসার ও অর্থহীন হইয়া পড়িল, তখন নিজের শূন্যগর্ভতায় সে শুধু নিজেই মরিল না, ভারতের স্বরাজ-আন্দোলনেরও প্রাণবধ করিয়া গেল। বস্তুতঃ এমন ঘুষ দিয়া, প্রলোভন দেখাইয়া, পিঠ চাপড়াইয়া কি স্বদেশের মুক্তি-সংগ্রামে লোক ভরতি করা যায়, না করিলেই বিজয় লাভ হয়? হয় না, এবং কোনদিন হইবে বলিয়াও মনে করি না।

এই ব্যাপারে সব চেয়ে বেশী খাটিয়াছিলেন মহাত্মাজী নিজে। এতখানি আশাও বোধ করি কেহ করে নাই, এতবড় প্রতারিতও বোধ করি কেহ হয় নাই। সেকালে বড় বড় মুসলিম পাণ্ডাদের কেহ-বা হইয়াছিলেন তাঁহার দক্ষিণ হস্ত, কেহ-বা বাম হস্ত, কেহ-বা চক্ষু-কর্ণ, কেহ-বা আর কিছু,—হায়রে! এত বড় তামাশার ব্যাপার কি আর কোথাও অনুষ্ঠিত হইয়াছে! পরিশেষে হিন্দু-মুসলমান-মিলনের শেষ চেষ্টা করিলেন তিনি দিল্লীতে—দীর্ঘ একুশ দিন উপবাস করিয়া। ধর্মপ্রাণ সরলচিত্ত সাধু মানুষ তিনি, বোধ হয় ভাবিয়াছিলেন, এতখানি যন্ত্রণা দেখিয়াও কি তাহাদের দয়া হইবে না! সে-যাত্রা কোনমতে প্রাণটা তাঁহার টিকিয়া গেল।
ভ্রাতার অধিক, সর্বাপেক্ষা প্রিয় মিঃ মহম্মদ আলিই বিচলিত হইলেন সবচেয়ে বেশি। তাঁহার চোখের উপরেই সমস্ত ঘটিয়াছিল,—অশ্রুপাত করিয়া কহিলেন, আহা! বড় ভাল লোক এই মহাত্মাজীটি। ইঁহার সত্যকার উপকার কিছু করাই চাই। অতএব আগে যাই মক্কায়, গিয়া পীরের সিন্নি দিই, পরে ফিরিয়া আসিয়া কলমা পড়াইয়া কাফের-ধর্ম ত্যাগ করাইয়া তবে ছাড়িব।

শুনিয়া মহাত্মা কহিলেন, পৃথিবী দ্বিধা হও।

বস্তুতঃ, মুসলমান যদি কখনও বলে—হিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন।

একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুঠ করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে, বস্তুতঃ অপরের ধর্ম ও মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত ও অপমান করা যায়, কোথাও কোন সঙ্কোচ মানে নাই।

দেশের রাজা হইয়াও তাহারা এই জঘন্য প্রবৃত্তির হাত হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে নাই। ঔরঙ্গজেব প্রভৃতি নামজাদা সম্রাটের কথা ছাড়িয়া দিয়াও যে আকবর বাদশাহের উদার বলিয়া এত খ্যাতি ছিল, তিনিও কসুর করেন নাই। আজ মনে হয়, এ সংস্কার উহাদের মজ্জাগত হইয়া উঠিয়াছে। পাবনার বীভৎস ব্যাপারে অনেককেই বলিতে শুনি, পশ্চিম হইতে মুসলমান মোল্লারা আসিয়া নিরীহ ও অশিক্ষিত মুসলমান প্রজাদের উত্তেজিত করিয়া এই দুষ্কার্য করিয়াছে। কিন্তু এমনিই যদি পশ্চিম হইতে হিন্দু পুরোহিতের দল আসিয়া, কোন হিন্দুপ্রধান স্থানে এমনি নিরীহ ও নিরক্ষর চাষাভূষাদের এই বলিয়া উত্তেজিত করিবার চেষ্টা করেন যে নিরপরাধ মুসলমান প্রতিবেশীদের ঘরদোরে আগুন ধরাইয়া সম্পত্তি লুঠ করিয়া মেয়েদের অপমান অমর্যাদা করিতে হইবে, তাহা হইলে সেই-সব নিরক্ষর হিন্দু কৃষকের দল উহাদের পাগল বলিয়া গ্রাম হইতে দূর করিয়া দিতে একমুহূর্ত ইতস্ততঃ করিবে না।

কিন্তু, কেন এরূপ হয়? ইহা কি শুধু কেবল অশিক্ষারই ফল? শিক্ষা মানে যদি লেখাপড়া জানা হয়, তাহা হইলে চাষী-মজুরের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানে বেশি তারতম্য নাই। কিন্তু শিক্ষার তাৎপর্য যদি অন্তরের প্রসার ও হৃদয়ের কাল্‌চার হয়, তাহা হইলে বলিতেই হইবে উভয় সম্প্রদায়ের তুলনাই হয় না।
হিন্দুনারীহরণ ব্যাপারে সংবাদপত্রওয়ালারা প্রায়ই দেখি প্রশ্ন করেন, মুসলমান নেতারা নীরব কেন? তাঁহাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা যে পুনঃ পুনঃ এতবড় অপরাধ করিতেছে, তথাপি প্রতিবাদ করিতেছেন না কিসের জন্য? মুখ বুজিয়া নিঃশব্দে থাকার অর্থ কি? কিন্তু আমার ত মনে হয় অর্থ অতিশয় প্রাঞ্জল। তাঁহারা শুধু অতি বিনয়বশতঃই মুখ ফুটিয়া বলিতে পারেন না, বাপু, আপত্তি করব কি, সময় এবং সুযোগ পেলে ও-কাজে আমরাও লেগে যেতে পারি।

মিলন হয় সমানে সমানে। শিক্ষা সমান করিয়া লইবার আশা আর যেই করুক আমি ত করি না। হাজার বৎসরে কুলায় নাই, আরও হাজার বৎসরে কুলাইবে না। এবং ইহাকেই মূলধন করিয়া যদি ইংরাজ তাড়াইতে হয় ত সে এখন থাক। মানুষের অন্য কাজ আছে। খিলাফৎ করিয়া, প্যাক্ট করিয়া, ডান ও বাঁ—দুই হাতে মুসলমানের পুচ্ছ চুলকাইয়া স্বরাজযুদ্ধে নামান যাইতে পারিবে, এ দুরাশা দুই-একজনার হয়ত ছিল, কিন্তু মনে মনে অধিকাংশেরই ছিল না। তাঁহারা ইহাই ভাবিতেন—দুঃখ-দুর্দশার মত শিক্ষক ত আর নাই, বিদেশী বুরোক্রেসির কাছে নিরন্তর লাঞ্ছনা ভোগ করিয়া হয়ত তাহাদের চৈতন্য হইবে, হয়ত হিন্দুর সহিত কাঁধ মিলাইয়া স্বরাজরথে ঠেলা দিতে সম্মত হইবে। ভাবা অন্যায় নয়, শুধু ইহাই তাঁহারা ভাবিলেন না যে, লাঞ্ছনাবোধও শিক্ষাসাপেক্ষ। যে লাঞ্ছনার আগুনে স্বর্গীয় দেশবন্ধুর হৃদয় দগ্ধ হইয়া যাইত, আমার গায়ে তাহাতে আঁচটুকুও লাগে না। এবং তাহার চেয়েও বড় কথা এই যে, দুর্বলের প্রতি অত্যাচার করিতে যাহাদের বাধে না, সবলের পদলেহন করিতেও তাহাদের ঠিক ততখানিই বাধে না। সুতরাং, এ আকাশকুসুমের লোভে আত্মবঞ্চনা করি আমরা কিসের জন্য? হিন্দু-মুসলমান-মিলন একটা গালভরা শব্দ, যুগে যুগে এমন অনেক গালভরা বাক্যই উদ্ভাবিত হইয়াছে, কিন্তু ঐ গাল-ভরানোর অতিরিক্ত সে আর কোন কাজেই আসে নাই। এ মোহ আমাদিগকে ত্যাগ করিতেই হইবে। আজ বাঙলার মুসলমানকে এ কথা বলিয়া লজ্জা দিবার চেষ্টা বৃথা যে, সাতপুরুষ পূর্বে তোমরা হিন্দু ছিলে; সুতরাং রক্ত-সম্বন্ধে তোমরা আমাদের জ্ঞাতি। জ্ঞাতিবধে মহাপাপ, অতএব কিঞ্চিৎ করুণা কর। এমন করিয়া দয়াভিক্ষা ও মিলন-প্রয়াসের মত অগৌরবের বস্তু আমি ত আর দেখিতে পাই না। স্বদেশে-বিদেশে ক্রীশ্চান বন্ধু আমার অনেক আছেন।
কাহারও বা পিতামহ, কেহ-বা স্বয়ং ধর্মান্তর গ্রহণ করিয়াছেন, কিন্তু নিজে হইতে তাঁহারা নিজেদের ধর্মবিশ্বাসের পরিচয় না দিলে বুঝিবার জো নাই যে, সর্বদিক দিয়া তাঁহারা আজও আমাদের ভাইবোন নয়। একজন মহিলাকে জানি, অল্প বয়সেই তিনি ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন, এতবড় শ্রদ্ধার পাত্রীও জীবনে আমি কম দেখিয়াছি! আর মুসলমান? আমাদের একজন পাচক ব্রাহ্মণ ছিল। সে মুসলমানীর প্রেমে মজিয়া ধর্মত্যাগ করে। এক বৎসর পরে দেখা। তাহার নাম বদলাইয়াছে, পোশাক বদলাইয়াছে, প্রকৃতি বদলাইয়াছে, ভগবানের দেওয়া যে আকৃতি, সে পর্যন্ত এমনি বদলাইয়া গিয়াছে যে আর চিনিবার জো নাই। এবং এইটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। বস্তির সহিত যাঁহারই অল্পবিস্তর ঘনিষ্ঠতা আছে,—এ কাজ যেখানে প্রতিনিয়তই ঘটিতেছে—তাঁহারই অপরিজ্ঞাত নয় যে এমনিই বটে! উগ্রতায় পর্যন্ত ইহারা বোধ হয় কোহাটের মুসলমানকেও লজ্জা দিতে পারে।

অতএব, হিন্দুর সমস্যা এ নয় যে, কি করিয়া এই অস্বাভাবিক মিলন সংঘটিত হইবে; হিন্দুর সমস্যা এই যে, কি করিয়া তাঁহারা সঙ্ঘবদ্ধ হইতে পারিবেন এবং হিন্দুধর্মাবলম্বী যে-কোন ব্যক্তিকেই ছোট জাতি বলিয়া অপমান করিবার দুর্মতি তাঁহাদের কেমন করিয়া এবং কবে যাইবে। আর সর্বাপেক্ষা বড় সমস্যা—হিন্দুর অন্তরের সত্য কেমন করিয়া তাহার প্রতিদিনের প্রকাশ্য আচরণে পুষ্পের মত বিকশিত হইয়া উঠিবার সুযোগ পাইবে। যাহা ভাবি তাহা বলি না, যাহা বলি তাহা করি না, যাহা করি তাহা স্বীকার পাই না—আত্মার এত বড় দুর্গতি অব্যাহত থাকিতে সমাজগাত্রের অসংখ্য ছিদ্রপথ ভগবান স্বয়ং আসিয়াও রুদ্ধ করিতে পারিবেন না।

ইহাই সমস্যা এবং ইহাই কর্তব্য। হিন্দু-মুসলমানের মিলন হইল না বলিয়া বুক চাপড়াইয়া কাঁদিয়া বেড়ানই কাজ নয়। নিজেরা কান্না বন্ধ করিলেই তবে অন্য পক্ষ হইতে কাঁদিবার লোক পাওয়া যাইবে।

হিন্দুস্থান হিন্দুর দেশ। সুতরাং এ দেশকে অধীনতার শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিবার দায়িত্ব একা হিন্দুরই। মুসলমান মুখ ফিরাইয়া আছে তুরস্ক ও আরবের দিকে,—এ দেশে চিত্ত তাহার নাই। যাহা নাই তাহার জন্য আক্ষেপ করিয়াই বা লাভ কি, এবং তাহাদের বিমুখ কর্ণের পিছু পিছু ভারতের জলবায়ু ও খানিকটা মাটির দোহাই পাড়িয়াই বা কি হইবে! আজ এই কথাটাই একান্ত করিয়া বুঝিবার প্রয়োজন হইয়াছে যে, এ কাজ শুধু হিন্দুর,—আর কাহারও নয়।

মুসলমানের সংখ্যা গণনা করিয়া চঞ্চল হইবারও আবশ্যকতা নাই। সংখ্যাটাই সংসারে পরম সত্য নয়। ইহার চেয়েও বড় সত্য রহিয়াছে যাহা এক দুই তিন করিয়া মাথা-গণনার হিসাবটাকে হিসাবের মধ্যে গণ্য করে না।

হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে এতক্ষণ যাহা বলিয়াছি তাহা অনেকের কানেই হয়ত তিক্ত ঠেকিবে, কিন্তু সেজন্য চমকাইবারও প্রয়োজন নাই, আমাকে দেশদ্রোহী ভাবিবারও হেতু নাই। আমার বক্তব্য এ নয় যে, এই দুই প্রতিবেশী জাতির মধ্যে একটা সদ্ভাব ও প্রীতির বন্ধন ঘটিলে সে বস্তু আমার মনঃপূত হইবে না। আমার বক্তব্য এই যে, এ জিনিস যদি নাই-ই হয় এবং হওয়ারও যদি কোন কিনারা আপাততঃ চোখে না পড়ে ত এ লইয়া অহরহ আর্তনাদ করিয়া কোন সুবিধা হইবে না। আর না হইলেই যে সর্বনাশ হইয়া গেল এ মনোভাবেরও কোনও সার্থকতা নাই। অথচ, উপরে-নীচে, ডাহিনে-বামে, চারিদিক হইতে একই কথা বারংবার শুনিয়া ইহাকে এমনিই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসিয়াছি যে জগতে ইহা ছাড়া যে আমাদের আর কোন গতি আছে, তাহা যেন আর ভাবিতেই পারি না। তাই করিতেছি কি? না, অত্যাচার ও অনাচারের বিবরণ সকল স্থান সংগ্রহ করিয়া এই কথাটাই কেবল বলিতেছি—তুমি এই আমাকে মারিলে, এই আমার দেবতার হাত-পা ভাঙ্গিলে, এই আমার মন্দির ধ্বংস করিলে, এই আমার মহিলাকে হরণ করিলে,—এবং এ-সকল তোমার ভারী অন্যায়, ও ইহাতে আমরা যারপরনাই ব্যথিত হইয়া হাহাকার করিতেছি। এ-সকল তুমি না থামাইলে আমরা আর তিষ্ঠিতে পারি না। বাস্তবিক ইহার অধিক আমরা কি কিছু বলি, না করি? আমরা নিঃসংশয়ে স্থির করিয়াছি যে, যেমন করিয়াই হউক মিলন করিবার ভার আমাদের এবং অত্যাচার নিবারণ করিবার ভার তাহাদের। কিন্তু, বস্তুতঃ হওয়া উচিত ঠিক বিপরীত। অত্যাচার থামাইবার ভার গ্রহণ করা উচিত নিজেদের এবং হিন্দু-মুসলমান-মিলন বলিয়া যদি কিছু থাকে ত সে সম্পন্ন করিবার ভার দেওয়া উচিত মুসলমানদের 'পরে।

কিন্তু দেশের মুক্তি হইবে কি করিয়া? কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, মুক্তি কি হয় গোঁজামিলে? মুক্তি অর্জনের ব্রতে হিন্দু যখন আপনাকে প্রস্তুত করিতে পারিবে, তখন লক্ষ্য করিবারও প্রয়োজন হইবে না, গোটা-কয়েক মুসলমান ইহাতে যোগ দিল কি না।

ভারতের মুক্তিতে ভারতীয় মুসলমানেরও মুক্তি মিলিতে পারে, এ সত্য তাহারা কোনদিনই অকপটে বিশ্বাস করিতে পারিবে না। পারিবে শুধু তখন যখন ধর্মের প্রতি মোহ তাহাদের কমিবে, যখন বুঝিবে যে-কোন ধর্মই হউক তাহার গোঁড়ামি লইয়া গর্ব করার মত এমন লজ্জাকর ব্যাপার, এতবড় বর্বরতা মানুষের আর দ্বিতীয় নাই। কিন্তু সে বুঝার এখনও অনেক বিলম্ব। এবং জগৎসুদ্ধ লোক মিলিয়া মুসলমানের শিক্ষার ব্যবস্থা না করিলে ইহাদের কোনদিন চোখ খুলিবে কিনা সন্দেহ। আর, দেশের মুক্তিসংগ্রামে কি দেশসুদ্ধ লোকেই কোমর বাঁধিয়া লাগে? না ইহা সম্ভব, না তাহার প্রয়োজন হয়। আমেরিকা যখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করিয়াছিল, তখন দেশের অর্ধেকের বেশি লোকে ত ইংরাজের পক্ষেই ছিল। আয়ার্লন্ডের মুক্তিযজ্ঞে কয়জনে যোগ দিয়াছিল? যে বলশেভিক গভর্নমেন্ট আজ রুশিয়ার শাসনদণ্ড পরিচালনা করিতেছে, দেশের লোকসংখ্যার অনুপাতে সে ত এখনও শতকে একজনও পৌঁছে নাই। মানুষ ত গরু-ঘোড়া নয়, কেবলমাত্র ভিড়ের পরিমাণ দেখিয়াই সত্যাসত্য নির্ধারিত হয় না, হয় শুধু তাহার তপস্যার একাগ্রতার বিচার করিয়া। এই একাগ্র তপস্যার ভার রহিয়াছে দেশের ছেলেদের 'পরে। হিন্দু-মুসলমান-মিলনের ফন্দি উদ্ভাবন করাও তাহার কাজ নহে, এবং যে-সকল প্রধান রাজনীতিবিদের দল এই ফন্দিটাকেই ভারতের একমাত্র ও অদ্বিতীয় বলিয়া চিৎকার করিয়া ফিরিতেছেন তাঁহাদের পিছনে জয়ধ্বনি করিয়া সময় নষ্ট করিয়া বেড়ানও তাহার কাজ নহে। জগতে অনেক বস্তু আছে যাহাকে ত্যাগ করিয়াই তবে পাওয়া যায়। হিন্দু-মুসলমান-মিলনও সেই জাতীয় বস্তু। মনে হয়, এ আশা নির্বিশেষে ত্যাগ করিয়া কাজে নামিতে পারিলেই হয়ত একদিন এই একান্ত দুষ্প্রাপ্য নিধির সাক্ষাৎ মিলিবে। কারণ, মিলন তখন শুধু কেবল একার চেষ্টাতেই ঘটিবে না, ঘটিবে উভয়ের আন্তরিক ও সমগ্র বাসনার ফলে।


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...