সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমার মৃতদেহের ওপর হবে। পণ্ডিত নেহেরু বললেন : পাকিস্তান ইজ এ ফ্যান্টাস্টিক ননসেন্স। সর্দার প্যাটেল বললেন : ভারত বিভাগ এ তো একটা পরিহাস মাত্র। এমন কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাঁর বিরাট গ্রন্থ “ইন্ডিয়া ডিভাইডেড” লিখে প্রমাণ করলেন, পাকিস্তান একটা অসম্ভব অবাস্তব ব্যাপার। বেশীরভাগ মুসলমান জাতীয়তাবাদী, আর তারা কংগ্রেসের মধ্যে। সুতরাং অদূরদর্শী এবং সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাই পাকিস্তানের কথা বলে আতঙ্ক ছড়াতে চাইছেন। এইসব নেতাদের লক্ষ লক্ষ অনুগামী কোটি কোটি মানুষকে এই মিথ্যে কথাটা বোঝালো। কিন্তু বাস্তবে কি ঘটেছিল? অসংখ্য প্রাণ, চোখের জল, নারীর সম্ভ্রম আর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান রচিত হল। হিন্দু এবং মুসলমান দুটো পৃথক জাত এই সত্যকে স্বীকার করে ভারতকে দুভাগ করা হল। দেড় কোটি হিন্দুর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাড়ানো হল পাকিস্তান থেকে। এখনও নিয়মিত তাড়ানো হচ্ছে এবং তাড়ানো হবে।

এখন এদেশের জাতীয় নেতাদের এবং তাদের অনুগামীদের কি বলা হবে? ভণ্ড মিথ্যাবাদী, আত্ম-প্রবঞ্চক, অদূরদর্শী, ক্ষমতা লোভী? প্রত্যেকটি বিশেষণ এঁদের কীর্তির উপযুক্ত। কিন্তু আমি তা বলব না। এঁরা লোকান্তরিত তাই এঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই বলব, এঁরা ছিলেন দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন। এঁদের কোন আচরণই বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দু তার জীবন উৎসর্গ করেছে স্বর্গীয় প্রেরণায়। মুসলমান তার স্ট্র্যাটেজী তৈরী করেছে ভারতে মুসলীম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার কামনায়। পূর্ববাংলা পাকিস্তান হল মুসলমানের সংখ্যা বেশী বলে। ফাঁসীর মঞ্চে প্রাণদানের সংখ্যা পূর্ববঙ্গের সর্বাধিক। কিন্তু আত্মদানের তালিকায় পূর্ববঙ্গে কেন গোটা বঙ্গেও একজন মুসলমান নেই। স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজের সহযোগিতা করে মুসলমানরা পুরস্কার পেল পাকিস্তান, বাংলাদেশ। আর ফাঁসীতে গুলিতে প্রাণ দিয়ে পূর্ব-বঙ্গের হিন্দুরা হল বাস্তুচ্যুত , শরণার্থী, রিফিউজী। মাতৃভূমি থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হল যারা আসামে আশ্রয় নিল তাদের পরিচয় হলো বিদেশী বহিরাগত। যারা বাংলাদেশে রয়ে গেল তারা হয়ে গেল জিম্মি মালাউন কাফের। আর যারা ত্রিপুরায় গেল সংবাদপত্রের ভাষায় হলো অনুপজাতি।

কি করুণ পরিণতি! অথচ শ্যামাপ্রসাদ ছাড়া একজনও আত্মসম্মান-সম্পন্ন নেতা ছিলেন না গোটা দেশে, এই ঘটনা যাঁকে বিচলিত করেছে। তাঁর প্রচেষ্টায় রক্ষিত হয়েছিল এই পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব। তাঁকে সবাই বলেছিল সাম্প্রদায়িক। শ্যামাপ্রসাদ কাশ্মীরের চূড়ান্ত ভারত ভুক্তি চেয়েছিলেন। ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ চেয়েছিলেন। তিনি মধ্যপথে সীজ ফায়ার না করে যুদ্ধ চালিয়ে পুরো কাশ্মীর উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে হত্যা করা হলো। যারা কাশ্মীরের অর্ধাংশ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে বাকীটাকে প্রায় পাকিস্তান করে রেখে দিল। যাদের জন্য কাশ্মীর আজ অগ্নিগর্ভ তারা প্রগতিশীল ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক। যাঁরা ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ করে কাশ্মীর সমস্যার সত্যিকারের সমাধান চায় তাদের সাম্প্রদায়িক বলার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতারা আজও দেশের নেতৃত্বে। ভারতের অর্ধাংশ কাশ্মীরের অর্ধেক উপঢৌকন দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে আবার সেই একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কাশ্মীর সবটাই চলে যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কাশ্মীর আজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কাশ্মীর চালাচ্ছে পাকিস্তান এবং তাদের বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংস্থা। 

ভারত আবার খণ্ডিত হতে পারে। বিদেশী অর্থে পুষ্ট হয়ে অধিকাংশ মুসলমান সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলির নির্বিচার তোষণে তারা ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বে-আইনীভাবে সরকারী জমি দখল করে পার্কসার্কাসে অসংখ্য বাড়ী করেছে। রাজাবাজারে গড়ে তুলেছে মসজিদ। ‘৮৬-তে প্রজাতন্ত্র বয়কট করেছে। দিল্লীর ইমাম বলেছে, আমরা এদেশের আইন-কানুন মানি না। বাবরী মসজিদ না পেলে আবার হোমল্যান্ডের আওয়াজ তুলব। পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়ে দেব। উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে দাঙ্গা বাধাচ্ছে মীরাটে, আলিগড়ে, দিল্লীতে, বরোদায়। এই অবস্থাটা বুঝে যারা কিছু বলতে যাচ্ছে তাদেরই বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক। এই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন নেতাদের অর্ধেক ভারতবর্ষ হারিয়েও কাণ্ডজ্ঞান ফেরেনি। হিন্দু মুসলমানের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হল। কিন্তু এ দেশের নেতাদের একজাতিতত্ত্বের মিথ্যে নেশাটা কাটাল না। পাকিস্তান হিন্দু শূন্য, বাংলাদেশ প্রায় হিন্দু শূন্য,কিন্তু লোক বিনিময়ের মতো একটা বাস্তব সমাধান হাতের কাছে পেয়েও তা ব্যবহার করা হল না। তাই যে মুসলমানরা হিন্দুর সঙ্গে থাকলে ধর্মবিপন্ন হবে বলে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, তারা ভারতেই রয়ে গেল। তাদের কিছু হারাতে হল না। পাকিস্তান, বাংলাদেশ রইল তাদের ফিক্সড্ ডিপোজিট। ওগুলো মুসলিম রাষ্ট্র। ওখানে কারো হাত দেওয়া চলবে না। ভারত হল যৌথ সম্পত্তি। এখান থেকে যতটা পারো লুটে নাও। ভারতকে দু-টুকরো করার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান হল মুসলীম রাষ্ট্র। ভারত কিন্তু হিন্দুরাষ্ট্র হল না। হিন্দু রাষ্ট্রে অন্য কোন ধর্ম বিপন্ন হয় না। 

নেপাল হিন্দুরাষ্ট্র, সেখান থেকে একটি মুসলমানকে পালাতে হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান বাংলাদেশের হিন্দুরা বলির পাঁঠার মতোই অসহায়। যখন খুশী তাদের ওপর অত্যাচার করা যায়। বিতাড়িত করা যায়। যে কোন হিন্দু নারীকে ইচ্ছা করলেই অপহরণ করা যায়। বিবাহ করা যায়। ভারতের একজন মুসলমানেরও কিন্তু এ জন্য কষ্ট হয় না। কোনদিন একটা মৌখিক প্রতিবাদ করে না। এই সেদিন পঞ্চাশ হাজার চামকা হিন্দুকে চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করা হল। বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে নিতে চাইছে। তাবা ভয়ে ফিরতে চাইছে না। কারণ ইসলামিক রাষ্ট্র মানে কি তারা জানে।

ভারতে সেই শতকরা সাতানব্বই জন পাকপন্থীই রয়ে গেছে। ধর্মসংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রেখেই। এরা মুজিব মারা গেলে খুশী হয়। ভুট্টোর ফাঁসী হলে বাস পোড়ায়, সিনেমা হল পোড়ায়। ক্রিকেট, হকিতে পাকিস্তান জিতলে রেডিওতে মালা দেয়। রাজাবাজারে, পার্কসার্কাসে ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল বার করে। ফুটবলে মহামেডান স্পোর্টিং জিতলে আল্লা হো আকবর ধ্বনি দেয়। এই সব আচরণের একটাই অর্থ, এদের অধিকাংশেরই আনুগত্য দেশের বাইরে। লখনউয়ের মুসলমানেরা ইরাক কিংবা ইরানের সমর্থক। বাড়ীতে বাড়ীতে খোমেইনি আর সাদ্দাম হোসেনের ছবি। ওখানে প্রায়ই যে শিয়া সুন্নীর প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয় তা আসলে ইরাকপন্থী এবং ইরানপন্থী মুসলমানের সংঘর্ষ। এখন যদি কোন ব্যক্তি প্রশ্ন তোলে, ভারতবর্ষে ভারতপন্থী মুসলমান কই? সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষ সেই ব্যক্তিকে বলেন সাম্প্রদায়িক। কেন বলেন? এরা দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে। এদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তিনটি মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এই তিনটি আদর্শই নির্ভরশীল গরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যার ওপর। ভারতীয় উপমহাদেশের যেখানে হিন্দুর সংখ্যা কম হয়ে গেছে, সেখানেই এগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে।

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশে এসব কথা বলার লোক আর নেই। আফগানিস্তানের নাম একদিন গান্ধার ছিল, দেশটা হিন্দুদের ছিল, ভারতের অংশ ছিল এই কথাটাই অনেকের মনে নেই। কাশ্মীরে একটাকা কেজি চাল খাইয়ে দুটাকা কেজি চিনি খাইয়ে এবং এম.এ. ডাক্তারী ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যন্ত বিনা পয়সায় পড়িয়েও সেখানে মার্ক্সবাদী সমাজতন্ত্র, গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র সবই অচল। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি চেষ্টা করলেও এক ইঞ্চি জমি কিনতে পারবেন না। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় পশ্চিম পাঞ্জাবের হাজার বিশেক হিন্দু মুসলমানদের হাত থেকে প্রাণ বাচানোর তাগিদে পালিয়ে এসেছিল কাশ্মীরে। তাদের সংখ্যা এখন পঁচাত্তর হাজার। তাদের আজ পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তারা কাশ্মীরে অবাঞ্ছিত।

শেক আব্দুল্লার আমলে কাশ্মীরে একটা বিল এলো, যাতে পাকিস্তানে চলে যাওয়া মুসলমানদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অথচ পূর্ববঙ্গে হিন্দুর সম্পত্তি মানে শত্রুর সম্পত্তি। প্রয়াতা ইন্দিরা গান্ধী সারা দেশে ‘এসমা' প্রয়োগ করেছিলেন, কিন্তু কাশ্মীরে পারেন নি। এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক নেতারাও নির্বাক। দেশদ্রোহীতার অপরাধে যাকে এগারো বছর জেলে রাখতে হয়েছিল, এবং যার হাতে শ্যামাপ্রসাদের খুনের রক্ত লেগে আছে সেই শেখ আবদুল্লাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হয়। আবদুল্লা মারা গেলে ফারুককে। শুধু সেখানে হিন্দু সংখ্যালঘু বলে। গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে তিনশো হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। তিনলক্ষ হিন্দুকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়েছে। দেশের অধিকাংশ নেতা এই ঘটনা জানেন কিন্তু তাঁরা সকলেই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন, তাই প্রতিবাদ করার মতো কাণ্ডজ্ঞান তাঁদের হয়নি।

রাষ্ট্রসঙ্ঘ একটি সমীক্ষায় হিসাব কষে দেখিয়েছে মুসলমানদের অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার এবং বিপুল অনুপ্রবেশ দুহাজার সালের মধ্যেই ভারতে হিন্দুদের সংখ্যালঘু করে দেবে। ব্যাপকভাবে হিন্দুদের গণধর্মান্তর করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা আসছে। একথা ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের। হাজার বছরের পুরানো স্থান মীনাক্ষীপুরমে মাত্র সাড়ে আটশো হিন্দু মুসলমান হবার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা হয়ে গেল রহমতনগর। ভারতে হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেলে ভারত আর ভারত থাকবে? এই ছোট্ট কাণ্ডজ্ঞানের কথাটা দেশের দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন ধর্মীয় গুরু, রাজনৈতিক নেতা, সাধু-সন্ত, বুদ্ধিজীবী কারো মাথায় ঢুকছে না। বরং তারা এ বিষয়ে আরো গোলমাল পাকিয়ে দিচ্ছে নানাভাবে।

রামকৃষ্ণ মিশনের একটি সম্মেলন হয়েছিল বেলুড়ে ১৯৮১ সালে। তিনদিন ধরে আলোচনা হল কি করে সব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় করা যায়। এই দায়িত্বটা যেন শুধু হিন্দুদেরই। শিলং-এ খ্রীষ্টানদের হাতে মিশনের সন্ন্যাসী মার খেলেন সে কথা আলোচনা হল না। চেরাপুঞ্জির রামকৃষ্ণ মিশনে জলের পাইপ কেটে দিল। কত ভাবে অত্যাচার করল, সে কথা কেউ বললেন না। অন্য ধর্মের হাতে মার খাওয়া আর সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা করা এটা এদেশের অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের একমাত্র কাজ।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালযের প্রাক্তন উপাচার্য বর্ধমান শহর থেকে টেরেসাকে একলক্ষ টাকা তুলে দিলেন। শুধু উপাচার্য নন, মন্ত্রীরা এবং বহু বিশিষ্ট হিন্দু লক্ষ লক্ষ টাকা মহিলাকে সংগ্রহ করে দিলেন। মা করুণাময়ী জগজ্জননী বলে কি নাচানাচিই না হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে ইনি এদেশের হাজার হাজার হিন্দুকে খ্রীষ্টান তৈরি করবেন। এই কাজে সাফল্য দেখানোর জন্যই খ্রীষ্টান রাষ্ট্রগুলো তাঁকে নোবেল পুরস্কার দিল। উত্তর পূর্বাঞ্চলে আজ যাবতীয় সমস্যার উৎস এই ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানরা। ত্রিপুরায় কয়েক হাজার হিন্দুকে হত্যা করল ওরাই। এখনও করে চলেছে। নিহত হিন্দুদের জন্য জগজ্জনীর চোখ থেকে এক ফোঁটাও জল পড়েনি। কলেজ স্ট্রীটের এক ছোট ব্যবসায়ী বিবাহের জন্য একটি অনাথিনী মেয়ে চেয়েছিল জননীর কাছে। জবাব এলো খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলে তবেই মেয়ে পাওয়া যেতে পারে। এই হচ্ছে মাদারের আসল পরিচয়। খ্রীষ্টান সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট। খ্রীষ্টান না হলে তিনি কারো স্থায়ী সেবা করেন না। বাংলাদেশ টেরেসাকে প্রবেশের অনুমতিই দিল না। আর এই হিন্দু সমাজ। গরু যেমন গরুর মাংস গাড়ীতে করে নির্বিকার চিত্তে বয়ে নিয়ে যায়, কোন প্রতিক্রিয়া হয় না, পরমানন্দে জাবর কাটে, এরাও তেমনি। চৈতন্যহীন, একটা জাত। ভালমন্দ বিবেচনা করার শত্রু-মিত্র চেনার ক্ষমতাও আর তাদের নেই। হিন্দুত্বের সম্পূর্ণতা, শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। 

পৃথিবীতে কেউ সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে না। শুধু হিন্দুরা বলে। কিন্তু এ কথা বলতে গেলেও যে আগে হিন্দু ভূমির দরকার, হিন্দু জনসংখ্যার দরকার এই কাণ্ডজ্ঞানটুকুও এদের নেই। বাস্তবতাবর্জিত দিব্যভাব, তুরীয়ভাব, দাঁড়িয়ে গেছে ভণ্ডামি মিথ্যাচারে আর আত্মপ্রবঞ্চনায়। এই দীর্ঘস্থায়ী ভাবের ঘরে লুকোচুরি গোটা হিন্দু জাতটাকে মেরুদণ্ডহীন, আত্মরক্ষায় অসমর্থ করে দিয়েছে। তাই অতীতে, বর্তমানে শুধু দেখি হিন্দু মার খায়, কাঁদে পালায় ধর্মান্তরিত হয়। একটা জাতের যদি আত্মরক্ষার শক্তিই না থাকে, তার উচ্চ দর্শন, সহস্র মহাপুরুষ থেকেই বা কি লাভ? এই রকম দুর্বল জাতকে কেউ শ্রদ্ধা করে না, করুণা করে। এখন হিন্দুদের কেউ করুণাও করে না। শিকার বলে মনে করে। সব শিকারীর লক্ষ্য এখন হিন্দু সমাজ। সেবা আর প্রলোভনের টোপ হাতে নিয়ে হাজার হাজার শিকারী হিন্দুদের শিকার করতে এসেছে, আসছে।

খ্রীষ্টানরাষ্ট্র, মুসলীম রাষ্ট্রগুলি থেকে টাকা, কর্মী ভারতে আসে কোন সাহসে? কারণ তারা জেনে গেছে কোন ঝুঁকি নেই। হিন্দু বাগাড়ম্বর বিলাসী, শিথিল, ক্রয়যোগ্য, উদাসীন, আত্মরক্ষায় অসমর্থ, নিজেকে মনে করে উদার সর্বজ্ঞ। এমন আত্মনাশী জাত বিশ্বের আর কোথায় পাওয়া যাবে? অতএব শিকার কর। আরব রাষ্ট্রের টাকা আসছে ভারতে। খ্রীষ্টান মিশনারীরা শুধু ঘুরে বেড়ায় হিন্দু পাড়ায়। তাই এখন এদেশের ধর্মীয় গুরু রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণকে রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। যোগী, সাধক, ভক্ত, বৈষ্ণব সকলকে মনে রাখতে হবে; জপ করুন, সাধনা করুন, কীর্তন করে কেঁদে ভাসিয়ে দিন, আপত্তি নেই, সর্বাগ্রে মনে রাখুন হিন্দু ভূমি, হিন্দু সমাজ, হিন্দু জাতি না থাকলে, কিংবা হিন্দুর সংখ্যা কম হয়ে গেলে ও সব কিছু থাকবে না। রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীদের মনে রাখতে হবে, মার্ক্সবাদ গান্ধীবাদ মমতাবাদ যাই বলুন এ সব তত দিনই বলা যাচ্ছে, যতদিন এদেশে হিন্দু বেশী আছে। মার্ক্সবাদে সুপণ্ডিত কিংবা গান্ধীবাদের তাত্ত্বিক নেতাদের মনে রাখতে হবে, তাঁদের সব তত্ত্বজ্ঞান মূল্যহীন হয়ে গেল, পূর্ববঙ্গে হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে গেল বলে। প্রয়াত প্রমোদ দাশগুপ্ত এখানে যত গর্জনই করুন তিনি ভাবতেই পারেননি তাঁর স্বপ্নের মার্ক্সবাদ জন্মভূমি ফরিদপুরে গিয়ে প্রচার করবেন। প্রফুল্ল সেন ভুলেও ভাবেন নি তাঁর জীবনাদর্শ গান্ধীবাদ পিতৃভূমি খুলনায় গিয়ে প্রচারের আর সুযোগ হবে। 

ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পর্কে তাঁর শিষ্যদের দাবী, তিনি পুরুষোত্তম, পূর্ণব্ৰহ্মা। তিনি বহু শিষ্যকে বলেছেন ধর্ম সবই সমান। কিন্তু পাকিস্তান হবার আগেই তিনি সৎসঙ্গের মূল আশ্রম পাবনা ছেড়ে পালিয়ে এলেন দেওঘরে। তাঁর দিব্যজ্ঞান তাঁকে দিয়ে অনেক উদার মহৎ কথা বলিয়েছে, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান বলেছে: যা পালা হিন্দুস্তানে, যেখানে হিন্দু বেশী আছে। তোর ব্রহ্মের শক্তি দিয়ে তুই এখানে আত্মরক্ষা করতে পারবি না। তাই কাল বিলম্ব না করে তিনি পালিয়ে এলেন। হিন্দুর সংখ্যা কম হয়ে গেলে পূর্ণব্রহ্মেরও মর্যাদা থাকে না। এই সরল সত্যটা ঠাকুরের শিষ্যদের সর্বাগ্রে বুঝতে হবে।

এই বঙ্গে আর একজন খ্যাতিনাম গুরু ছিলেন। ইনি জন্মসিদ্ধ ঠাকুর বালক ব্রহ্মচারী। জন্ম ঢাকা জেলার মেদিনীমণ্ডল গ্রামে। পূর্ববঙ্গ পাকিস্তান হয়ে গেলে তাঁর সিদ্ধাই কোনও কর্মে লাগল না। তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হল কোথায়? যেখানে হিন্দু বেশী আছে। হিন্দু কম হলে পূর্ণব্রহ্মও ক্ষমতাহীন। জন্মসিদ্ধ ব্রহ্মচারীও তাই। এগুলো দিব্যজ্ঞানের কথা নয়। রাগের কথাও নয়। প্রমাণিত সত্য। কিন্তু এই আঘাত, পলায়ন থেকে এঁরা কিছুই শিক্ষা নিলেন না। সন্তানদল একটি গানের রেকর্ড বার করেছে যার প্রথমে আজান এবং পরে কথা, যে আল্লা সেই রাম, রামনারায়ণ রাম। আল্লা এবং রামের সহাবস্থান পূর্ববঙ্গে হল না। আল্লার অনুগামীদের দাপটে হিন্দুদের চৌদ্দ -পুরুষের ভিটে ছেড়ে চলে আসতে হল। তার পরেও এই গান নিশ্চয়ই ঔদার্য এবং সহিষ্ণুতার লক্ষণ। কিন্তু এটি কাণ্ডজ্ঞানহীনতার, আত্মহত্যার লক্ষণও বটে। এত উদার কিংবা ভণ্ড জাত কখনও বাস্তবের সম্মুখীন হতে পারে না। তাই যখনই হিন্দু সমাজের ওপর আঘাত এসেছে, এই সব দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন মার্ক্সবাদী, পূর্ণব্রহ্ম ঠাকুর, ব্রহ্মচারীরা দিশেহারা হয়ে গেছেন। পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাঁদের ঔদার্য, পাণ্ডিত্য, বাগ্মীতা, ব্রহ্মত্ব, সিদ্ধান্ত কোনো কাজে লাগেনি।

ভারতে এসে এঁদের প্রথম দায়িত্ব ছিল ধর্মের একটা ভিত্তি তৈরি করা। হিন্দু সমাজের সকল সম্প্রদায়কে একটা কমন প্লাটফর্মে আনা। হিন্দুজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। প্রাণের আধার যেমন শরীর তেমনি হিন্দু ধর্মের আধার হচ্ছে হিন্দু জাতি, হিন্দু সমাজ। সংগঠিত হিন্দু সমাজ না থাকলে তেত্রিশ কোটি দেবদেবী, হাজার হাজার ধর্মগুরু, পণ্ডিত রাজনৈতিক নেতা কেউ নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন না। পালাতে হয়, মরতে হয়, ধর্মান্তরিত হতে হয়। এই খণ্ডিত বঙ্গে এখন মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা পঁয়ত্রিশ। এই সংখ্যা একান্নতে পৌঁছলেই গান্ধীবাদ, মার্ক্সবাদ, মমতাবাদ, ভজন, কীর্তন, মালা, টিকি মহোৎসব, ভোগারতি সব শেষে হয়ে যাবে। ‘সব ধর্ম সমান’, "খেটে খাওয়া মানুষের কোন জাত নেই”, “হিন্দু মুসলিম ঐক্য চাই', ‘এ দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ’, ‘এখানে শুধু হিন্দুর কথা বলেছেন কেন'—এসব বলার জন্য তখন কেউ থাকবে না। পূর্ববঙ্গে এই দিব্যজ্ঞানযুক্ত কথা আর কেউ বলে না। বলতে পারে না। রমনার বিখ্যাত কালীবাড়ীটা যখন কামান দেগে চূর্ণ করে ট্যাঙ্ক দিয়ে সমান করা হল তখন কেউ একটা কথা বলেনি। এগুলো ফলিত সত্য। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে হাজার হাজার হিন্দুমন্দির ধ্বংস করা হলো। সবাই কিন্তু নির্বাক। এই বাস্তব সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আজ সকলকে ধর্মের কথা, রাজনীতির কথা, ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে।

হিন্দু সংগঠিত, শক্তিশালী এবং সংখ্যাগুরু না থাকলে শুধু তার ধর্মই লাঞ্ছিত হয় না, তার জীবন সম্পত্তিও নিরাপদ থাকে না। এ শুধু পূর্ববঙ্গ কিংবা পাকিস্তানের ইতিহাস নয়। এক হাজার বছরের ইতিহাস। গত হাজার বছর ধরে হিন্দুর দেবদেবী যেভাবে লাঞ্ছিত অপবিত্র হয়েছে তাতে দেবতাদের মর্যাদা বাড়েনি। বহু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমাদের দেবদেবীর মহিমা শুধু পুঁথিপত্রে, কথাবার্তায়। কথাটা মিথ্যে নয়। এদেশে একশ বছর আগে জনসংখ্যা ছিল ত্রিশ কোটি, দেবতার সংখ্যা তেত্রিশ কোটি। অর্থাৎ একটা দেবতা একজন মানুষের কল্যাণ করলেও আমরা তিন কোটি দেবতাকে বিদেশে কল্যাণের জন্য রপ্তানি করতে পারতাম। তাহলে এদেশে এত রোগ, শোক, দারিদ্র, অশিক্ষা, ভণ্ডামী, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা কেন? এ দেশে মঠ মন্দিরের সংখ্যা চৌত্রিশ লক্ষ, সাধু সন্ন্যাসী, মোহান্ত, পণ্ডিত, পূজারীর সংখ্যা আটান্ন লক্ষ। এঁদের দায়িত্ব হিন্দু সমাজকে অভয় দেওয়া সাহস যোগানো।

অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার, এঁরাই ভীত সন্ত্রস্ত সংকুচিত মাত্র কয়েক হাজার দেশী বিদেশী মৌলভী আর পাদ্রীদের সামনে। কেন? কোথাও নিশ্চয় ফাঁকি আছে। আসলে জাত হিসেবে আমরা অত্যন্ত স্বার্থপর ফাঁকিটা সেখানেই। সাধু-সন্ন্যাসী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত, পুরোহিত যাই হোন না কেন বেশীর ভাগ হিন্দুর জীবন আত্মকেন্দ্রিক। ব্যক্তি এবং পরিবারকে কেন্দ্র করেই তার সব চিন্তা ও কর্ম সীমাবদ্ধ। জীবনীশক্তির সবটুকু এতেই ব্যয়িত। মানুষের ওপর তার বিশ্বাস নেই। সোজাসুজি ঈশ্বর, গুরু, জ্যোতিষীর উপর নির্ভরশীল। হিন্দুর জীবনচর্চায় রাষ্ট্র নেই, সমাজ নেই, দেশ নেই। এটাই বৃহৎ ফাঁকি, এই ফাঁকিই সমগ্র হিন্দু সমাজকে স্ববিরোধী, আত্মবিশ্বাসশূন্য করে দিয়েছে। হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজকে তারা সংকীর্ণ কাজ মনে করে। অথচ তাদের দিন কাটে জীবন কাটে ইউনিয়ন রাজনীতিতে গ্রুপিং করে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, জাতপাত, দলাদলি, ভেদ-বুদ্ধি, ঈর্ষা আর পরচর্চায় পূর্ণ উত্তেজনায়।

পাড়ায় বন্ধু নেই, প্রতিবেশীর সঙ্গে মামলা চলছে, নিজের বাবাকে খেতে দেয় না, সাঁইবাবার ভজনা করছে। গর্ভধারিণী মা ভিক্ষে করছে আর ছেলে তারাপীঠ ঠনঠনিয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে মা মা চীৎকার করে। এরাই রাজনীতিতে হিন্দু মুসলীম ঐক্যের আওয়াজ তুলছে। দুনিয়ার শ্রমিককে এক করার কথা বলছে। হীন প্রবৃত্তিপরায়ণ, স্বার্থপর হিন্দু, ভগবানকে পর্যন্ত নির্বোধ ভাবতে শুরু করেছে। তাই সকলকে বঞ্চিত করে জপে, কীর্তনে পুজোয় ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাইছে। স্ববিরোধী মানুষের দিব্যজ্ঞান থাকে, কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। ভণ্ডামী করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। স্ববিরোধী জাতের পায়ের তলায় মাটি থাকে না। আমাদের ধর্ম রাজনীতি সব কিছু একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। তাই হিন্দুদের ইতিহাসের বেশীর ভাগ অংশটাই দাঁড়িয়ে মার খাওয়ার ইতিহাস।

গৌরাঙ্গদেব বলে গেলেন : 'ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর' এ যুগের মহামন্ত্র। আমরা পাগলের মত নাম-গানে মেতে গেলাম। তিনি বললেন : 'সঙ্ঘ শক্তি কলৌযুগে'। কলিযুগে সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি ছাড়া বাঁচা যাবে না। সে কথাটা ভুলেই গেলাম। আমাদের একটা দেবতা নেই যার হাতে অস্ত্র নেই। অথচ যে কোন হিন্দু বাড়ীতে দেখা যাবে একদঙ্গল ঠাকুর দেবতা আছেন। একগাছা লাঠি নেই। বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের কাছে দরিদ্ররা সারা বছর উপেক্ষিত। শুধু বন্যায় দুর্যোগে দরিদ্ররা নারায়ণ হয়। ভাল কথা। কিন্তু বিবেকানন্দ যে বলে গেলেন : 'সমাজকে সংগঠিত করা দরকার। আগামী পঞ্চাশ বছর তোমাদের আরাধ্য দেবী হোক ভারতজননী' অর্থাৎ রাষ্ট্র সাধনা। সে কথা সযত্নে বাদ দিলাম, মূল গাছটায় জল না দিয়ে আমরা শুধু ডালপালার সেবাযত্ন করে চলেছি। ফলে গাছটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। জাত বাঁচলে, রাষ্ট্র বাঁচলে আমরা সবাই বাঁচব। সকল চিন্তাশীল মানুষের ভাবনা চিন্তাগুলো এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে করতে হবে।

ভারতবর্ষে তাই এখন সবচেয়ে ইতিহাসসম্মত বুদ্ধি-গ্রাহ্য কাণ্ডজ্ঞানযুক্ত কাজ হচ্ছে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা। অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, প্রাদেশিকতা থেকে মুক্ত করে হিন্দুদের একটা বিশাল শক্তিতে পরিণত করা। রাজনীতি যাদের ব্যবসা তাদের জন্যও এটা দরকার। হিন্দু সমাজ না থাকলে তাদের ব্যবসা অচল হয়ে যাবে। কোন অসাম্প্রদায়িক দলও মুসলমান এলাকায় হিন্দু প্রার্থী দাঁড় করাতে সাহস পায় না। মুসলমানদের মধ্যে যারা দেশপ্রেমিক উদারপন্থী আছেন, তাদের জন্যও হিন্দু সমাজের সংগঠিত থাকা দরকার। এম.সি. চাগলার মত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির মুসলমান সমাজে কোন স্থান ছিল না। ইরানে কিংবা পাকিস্তানে থাকলে তাঁকে কোতল করা হত। হিন্দু সমাজ তাঁকে সম্মান দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী নূরজাহানকে, হিন্দুরা শ্রদ্ধায় ভালবাসায় আপন করে নিল। অথচ সুর আমার কাছে প্রার্থনা, সঙ্গীত আমার কাছে ঈশ্বর', বলায় পাকিস্তানে দাবী উঠল নূরজাহানকে নতুন করে মুসলমান হতে হবে। 

দাউদ হায়দার নামে একজন বাংলাদেশী কবি মহম্মদের সমালোচনা করায় তার প্রাণদণ্ডের দাবী উঠেছিল। তাকে পালিয়ে এসে আত্মরক্ষা করতে হয় ভারতে। ভারত মুসলিম রাষ্ট্র হলে তার মৃত্যু অবধারিত ছিল। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে যে দাউদ হায়দার কোন সময় মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে। যেমন বিহারে আবদুল গফুর, মহারাষ্ট্রে আন্তলে, রাজস্থানে বরকতউল্লা, আসামে আনোয়ারা তৈমুর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে একজন হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী হবে কেউ ভাবতে পারেন? পারেন না। অতএব যা কিছু কল্যাণময় এবং শুভকর তা রক্ষার জন্যই যে কোন মূল্যে হিন্দু সমাজকে জীবিত রাখতে হবে। যারা হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে চাইছে তাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করুন, সহযোগিতা করুন। ‘আর্য্যসমাজ', ‘ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ’ ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ' সর্বশক্তি দিয়ে হিন্দুজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে এদের গতি বৃদ্ধি করুন। নিজে কপট উদার সেজে এদের সাম্প্রদায়িক বলে আত্মহত্যার পথ প্রশস্ত করবেন না। একটু কাণ্ডজ্ঞান দেখান। আমাদের দিব্যজ্ঞানের ফলে অর্ধেক ভারত আজ পাকিস্তান। পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে পঁচিশ কোটি মুসলমান, এক কোটি খ্রীষ্টান। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ খুব অল্প সময়ে আট লক্ষেরও বেশী মুসলমান ও খ্রীষ্টানকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে এসেছে। আরো আনবে। 

দেশদ্রোহিতার অপরাধে মাইকেল স্কট, ফাদার ফেরারকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। সম্প্রতি ফাদার ডি. সুজাকে গ্রেপ্তার করা হল। বিদেশী এজেন্ট খ্রীষ্টান ফাদাররাই।  অন্য দিকে বিহার-শরীফে মোরাদাবাদে মর্টার, বন্দুক তৈরির কারখানা পাওয়া গেল মুসলমানপাড়ায়। লক্ষ্ণৌয়ের মসজিদে পাওয়া গেল পনেরো হাজার তাজা বোমা, ধানবাদের মুসলিম হোটেল থেকে পাওয়া গেল বাক্স বাক্স জোরালো ডিনামাইট। টনটন আর ডি এক্স রয়েছে মুসলীম মাফিয়াদের হাতে। ধর্ম প্রচারের নামে খ্রীষ্টান ও মুসলমানদের খোলাখুলি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ অচলায়তন হিন্দু সমাজের টনক নড়িয়ে দিয়েছে। তার লক্ষণ ফুটে উঠেছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এমন কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও। বিপুল শক্তি নিয়ে হিন্দু সমাজের জাগরণ ঘটছে। 

'হিন্দুর শক্তি বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রদ্রোহী ছাড়া কারো আতঙ্কিত হবার কারণ নেই। হিন্দু কারো মসজিদ ভেঙেছে গীর্জা ভেঙেছে—ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত নেই। কিন্তু আজও একটি হিন্দু নারী মুসলমান দ্বারা অপহৃত হলে হিন্দু মন্দির মুসলমান কর্তৃক ধ্বংস হলে কোন মুসলমান তার প্রতিবাদ করে না। নীরবে সমর্থন করে। এগুলো- বিদ্বেষ সৃষ্টি নয় বাস্তব অবস্থার কথা। হিন্দুর বাঁচার কথা। সারাদেশে আইন সকলের জন্য সমান হয়। এখানে মুসলমানদের জন্য বিবাহ আইন পৃথক। হিন্দু বিয়ে করবে একটি, পরিবার পরিকল্পনা করে সন্তান রাখবে দুটি। তাদের শ্লোগান, আমরা দুই, আমাদের দুই। আর একজন মুসলিম বিয়ে করবে চারটি, পরিবার পরিকল্পনা করবে না। তাদের শ্লোগান, আমরা পাঁচ, আমাদের পঁচিশ। এই ব্যবস্থা পাশাপাশি চললে ভারত মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে কত দিন? শুধু কি এখানেই শেষ? শিবঠাকুরের আপন দেশে আইন-কানুন সর্বনেশের মতোই ভারতের ব্যাপার স্যাপার। 

যে মুসলমানের কাছে বিবাহের কোন পবিত্রতা নেই স্থায়িত্ব নেই। আজ বিয়ে করে কাল তালাক দিয়ে পরশু নিকাহ করতে পারে। তিনি বিবাহ করতে পারবেন চারটি। আর যে হিন্দু বিশেষ কারণ না ঘটলে কিছুতেই দুটো বিয়ে করবে না, নিয়ন্ত্রণ আনা হলো তার জন্য। এই সেকুলারিজমের আরও মহিমা আছে। হিন্দু দুটি বিয়ের চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করতে পারবে তিনটে স্ত্রীর মালিক মুসলীম পুলিশ অফিসার। তাকে বিচার করে সাজা দিতে পারবে চারটে স্ত্রীর মালিক মুসলমান বিচারপতি। সাজাটি কি? সাতবছর সশ্রম কারাদণ্ড । জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস না হওয়ার কারণ—নেতা, সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবীদের কল্যাণে জনগণকেও ক্রমশঃ কাণ্ডজ্ঞানশূন্য করে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এদেশের সব দলের নেতারাই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন নয়তো আরবের অর্থপুষ্ট।

এখন তো প্রমাণিত বিজেপি ছাড়া সব দল দাউদ, মেমন, রশিদের এজেন্ট। তাই প্ল্যান করে তারা দেশটাকে মুসলমানদের করে দিতে চাইছে। যারা এই সত্য কথাগুলো জনসমক্ষে বলছে, আরবীয় এজেন্টরা তাদের সাম্প্রদায়িক বলে নিজেদের মুখ রক্ষা করতে চাইছে। এই দ্বিমুখী চক্রান্তের প্রতিরোধ করে দেশকে বাঁচাবে কে? হিন্দুর সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি। পাকিস্তানে, বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক বিবি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, এখানে হবে না কেন? কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতৃত্ব রয়েছে বলে ? নেতারা নৈবেদ্যর ওপর মণ্ডার মতো। আমরা হচ্ছি নৈবেদ্যের চাল। হিন্দু সমাজ গা ঝাড়া দিলেই এই স্বার্থপর হিন্দু বিরোধী মণ্ডারূপী নেতারা অদৃশ্য হয়ে যাবে। পরিবার পরিকল্পনা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করার এবং হিন্দু কোড বিল তুলে দেবার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিন। নেতারা হিন্দুর সেন্টিমেন্টের কোন পরোয়াই করে না। তারা জানে হিন্দুরা অসংগঠিত আত্মবিস্মৃত। হিন্দুদের অপমান করে স্বার্থক্ষুণ্ণ করে বহাল তবিয়তে নেতাগিরি করা যায়। তাই শুধু মুসলমানদের তুষ্ট করে, তোষণ করে, হিন্দু কোড বিল চালু রাখে। গো হত্যার পক্ষে কথা বলে, শাহবানু মামলার রায় পাল্টে দেয়। রামের মন্দির ভেঙ্গে বাবরের তৈরি মসজিদ বিলুপ্ত হলে সবাই বৎস হারা গাভীর মত হয়ে যায়। হিন্দুর উপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠে। রামচন্দ্রকে কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক চরিত্র বলে বাবরকে বেশী মর্যাদা দেবার চেষ্টা করে। এরাই বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শরণার্থী আত্মরক্ষা করার জন্য ভারতে এলে পুশব্যাক করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়, ভারতে থাকতে দেয় না।

বিদেশী অনুপ্রবেশকারী মুসলমান হলে একটি কথাও বলে না। বাংলাদেশ থেকে এক কোটি অনুপ্রবেশকারী মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। একথা বলছে ঢাকার সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা। মেটিয়াবুরুজ, পার্কসার্কাস, মুর্শিদাবাদে কাতারে কাতারে ঢুকেছে। শুধু কলকাতায় চার লক্ষ বিদেশী মুসলমানদের হিসেব আছে সরকারের খাতায়। ধর্মতলায় ব্যাগ বিক্রেতাদের কিম্বা হাওড়ার সাবওয়ের আশেপাশে তাকালেই এদের দেখা যায়। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এদের প্রশ্রয়দাতা। সি.পি.এম. রেশন কার্ড করে দিচ্ছে তো কংগ্রেস ভোটার লিস্টে নাম তুলে দিচ্ছে। শুধু লক্ষ্য সামনের নির্বাচন। কলকাতায় হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে জ্যোতি বসু সব হিন্দু হকারদের তুলে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে আসা বিহারী মুসলমানদের তুলতে পারলেন না। তাদের পিছনে এসে দাঁড়ালেন মিঞা কলিমুদ্দিন। তখন ডেপুটি স্পীকার এখন খাদ্যমন্ত্রী মুসলিম কনফারেন্সের সভাপতি। প্রত্যেকটি মিটিংয়ে বলেন, আমি আগে মুসলমান, পরে ভারতীয়। এই কথায় প্রতিবাদ করতে পারে কোন দলে এমন নেতা নেই।

সুতরাং আজ গভীরভাবে ভাবতে হবে কাদের হাতে আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ তুলে দিয়েছি; ভাবতে, বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলে অনুশোচনা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। ধর্মগুরু, রাজনৈতিক নেতাদের মতো সাহিত্য সাংবাদিকতার জগৎটাও আজ নিয়ন্ত্রণ করেছে, দিব্যজ্ঞানী ও স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবিরা। দেশের ধর্ম সংস্কৃতি, হিন্দুত্বকে আঘাত করা এদের লক্ষ্য। হিন্দু সমাজের সর্বনাশ করে এরা মানবতাবাদী সাজতে চায়। দেশের ছদ্ম বুদ্ধিজীবীরা যুক্তিহীন অর্থহীন প্রবন্ধ লেখে সংবাদপত্র হিন্দু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিন্দু-সংগঠনের বিরুদ্ধে। আহাম্মকের মতো লেখে হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বললে শিখেরা বৌদ্ধরা পৃথক রাষ্ট্র চাইবে। মুসলমানেরা আলাদা রাষ্ট্র চাইবে। এই হতভাগ্যেরা ভারতের সংবিধানটা একবার খুলে দেখে না। যাতে লেখা আছে শিখ বৌদ্ধ জৈন এরা হিন্দু সমাজের অন্তর্গত। এরা স্মৃতিভ্রংশ অথবা শয়তান। নইলে এদের মনে পড়ত শতকরা ২৩ ভাগ মুসলমান ভারতের ৩০ ভাগ জমি নিয়ে পাকিস্তান তৈরি করেছে। তারপরেও দেড়কোটি হিন্দুকে তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু জমি দেয়নি।

এদেশের কিম্ভুতকিমাকার রাজনৈতিক নেতারা এবং অপদার্থ বুদ্ধিজীবীরা বড়োই বিচিত্র। এরা হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা দশ লক্ষ প্যালেষ্টাইনী মুসলমান উদ্বাস্তুদের জমি দেবার জন্য সহানুভূতি দেখাতে পারেন। সরকার আর্থিক সাহায্য দিতে পারে। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের নেতারূপে তাদের জন্য বিশ্বজনমত তৈরি করতে পারে, পারে না শুধু অন্যায়ভাবে পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া দেড় কোটি হিন্দুর জন্য ন্যায়ত আইনত প্ৰাপ্য জমি চাইতে।

বঙ্গসেনা, বি.এল. ও বাংলাদেশের আটটি জেলা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গ-ভূমির দাবী করছে। তার জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করছে। জনমত এই দাবীর পিছনে সংহত হলেও, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি হিন্দু এই আন্দোলনে আশার আলো দেখলেও ভারতের সংবাদপত্র নির্বাক। নেতারা, পণ্ডিতেরা বলতে পারছেন না এদাবী ন্যায্য আইনসংগত এবং মানবিক দাবী। অনেক আগে এই দাবী উচ্চারিত হওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা এসব ভাবতে পারেন না। রুগ্ন পরাজিত বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তাঁরা ভাবেন এসব বললে ভারতের মুসলমানেরা আবার যদি রাষ্ট্র চায়। এঁরা ভুলে যান যে, মুসলমানেরা দেশ ভাগ করে নিজেদের রাষ্ট্র বুঝে নিয়েছে। যতটা জমি পাওয়া উচিত তার বেশী জমি নিয়েছে। অতএব মুসলমানেরা আবার রাষ্ট্র চাইলে তাদের সীমান্ত পার করে দিতে হবে। এটাই হচ্ছে যুক্তি এবং ইতিহাসের শিক্ষা।

কাণ্ডজ্ঞানহীন পণ্ডিত বুদ্ধিজীবীরা এ শিক্ষা নেয় না, তারা গোটা দেশকে বিভ্রান্ত করে। সর্বনাশ আড়াল করতে চায়, হিন্দু বিরোধিতায় উৎসাহ প্রদান করে। কোরান না পড়ে ইসলামকে না জেনে অকারণে তার প্রশংসা করে। কোরানে ঠিক কি আছে তা নিয়ে কোন বিদগ্ধ লেখক কোনদিন আলোচনা করেন না। কেন করে না? এঁরা সকলেই দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে। ‘আনন্দবাজার’, ‘আজকাল’ অকারণে গরু খাওয়ার পক্ষে ওকালতি করে। বিপক্ষে চিঠি লিখলে ছাপে না। গল্পে উপন্যাসে প্রবন্ধে হিন্দুদের ছোট করে দেখানো লেখক বুদ্ধিজীবীদের ফ্যাশন। প্রগতিশীল হবার তীব্র ইচ্ছা এদের বুদ্ধিকে বিকৃত করে দিয়েছে। এরা জানে ইসলামে গরু কাটার কোন বাধ্যতা নেই।

কোরানের জন্মভূমিতে গরু নেই। অথচ এটা গোপালের দেশ। গরুর প্রতি মানুষের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা। গরু কাটলে শতকরা পঁচাশিজন মানুষের প্রাণে লাগে । মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন—স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেয়ে গোহত্যা বন্ধের প্রশ্নকে আমি বেশী জরুরী মনে করি। নেতাজী ঐক্যের জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজে গরু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের ডাক্তার কর্নেল চ্যাটার্জী তার লেখা বইয়ে একথার উল্লেখ করেছেন। সংবিধানে গোহত্যা বন্ধ্যের নির্দেশ আছে। সুপ্রীম কোর্টের ফুল বেঞ্চ গোহত্যা নিষেধের পক্ষে রায় দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট গোহত্যা বন্ধের রায় দিয়েছে। বিনোবা ভাবে গোহত্যা বন্ধ করার জন্য অনশন করে নিজের প্রাণটাই দিয়ে দিলেন। তবু গোহত্যা বন্ধ হল না। পবিত্র সংবিধান, মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট, অধিকাংশ মানুষের শ্রদ্ধাকেন্দ্র — সবকিছুকেই অপমানিত করে পার পাওয়া যায়, কারণ হিন্দু সমাজ অসংগঠিত।

মুসলমানরা সংগঠিত তারা তাদের অন্যায় ইচ্ছাকেও সমর্থন করতে চায়। সহস্র যুক্তি থাকলেও এ দেশের কোন লেখক শুয়োর খাবার জন্য কলম ধরতে পারে না। যাত্রায়, নাটকে, সিনেমায় সর্বত্র হিন্দুর শ্রদ্ধাকেন্দ্রগুলোকে লাঞ্ছিত করা হয়। হিন্দু মুসলমানের মিলন দেখাতে হিন্দুর মেয়েকে মুসলমানে নিয়ে যাবেই। সিনেমায় নায়ক-নায়িকা বিপদে পড়লে শুধু আশ্রয় পায় মসজিদে কিংবা গীর্জায়, হিন্দু ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, সন্ন্যাসীদের দেখান হচ্ছে খল চরিত্ররূপে। তাদের কমণ্ডুলে মদ, ঝুলিতে গাঁজা, তারা চোরাচালানদার বদমাইস। আর ফাদার এবং মৌলভীরা স্নেহ ক্ষমার প্রতিমূর্তি! শুধু তাই নয় অধিকাংশ সিনেমায় মুসলমান এবং খ্রীষ্টান চরিত্রের মুখে ডায়ালগ থাকে তাদের ধর্মের স্বপক্ষে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেখানো হয় আল্লার মহিমা। যীশুর মাহাত্ম্য। যে কোন মুসলীম চরিত্র নাটকের প্রয়োজনে মারা গেলে ভেসে আসবে করুণ আজানের সুর। পর্দায় ফুটে উঠবে মক্কার কাবা। লক্ষ লক্ষ মুসলমান সেখানে নামাজ পড়ছে।

আরো আশ্চর্যের ব্যাপার। জার্মান নাট্যকার ব্রেখটের নাটক বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে তার মধ্যে ক্লাউনের মতো আমদানী করা হচ্ছে ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিবকে। তাদের মুখে বলানো হচ্ছে শালীনতাবর্জিত ভাষা। সফোক্লিশের নাটক বাংলা করতে গিয়ে, ইবসেনের নাটক চিত্রায়িত করতে গিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ পরিচালক অকারণে আঘাত করেছেন শুধুমাত্র হিন্দু সংস্কারকে। গীতিকার শিল্পীরা কৃষ্ণকে নিয়ে গৌরাঙ্গদেবকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ গান রচনা করছে, গাইছে, রেকর্ড বেরুচ্ছে। বিচিত্র এদেশের হিন্দু ধর্মাচরণকারীরা। এসবে তাদের কোনো কষ্ট হয় না। কোনো ভক্তের প্রাণে এ সব লাগে না। ভিখারীর বৈরাগ্য, নপুংসকের ব্রহ্মচর্য, শক্তিহীনের ভক্তি এইরকমই হয়। চ্যাংড়া নাট্যকার ফক্কড় সাংবাদিকরাও তার পরোয়া করে না।

এদেশের সাংবাদিককুল হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনে কোথাও দাঙ্গা হলে লেখে, ‘দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ', দাঙ্গা যাতে না ছড়ায় এই বৃহত্তর স্বার্থে সত্য গোপন করা হয়। ভাল কথা, কিন্তু হিন্দুদের দুটি সম্প্রদায়ে একটু কিছু হলে বিরাট হেডলাইন আসে ‘হরিজনদের প্রতি বর্ণহিন্দুদের নারকীয় অত্যাচার'—কেন এমন লেখা হয় ?

কারণ অধিকাংশ সাংবাদিক হিন্দুত্ব বিরোধী দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন। তারা চায় না হিন্দু সমাজ ঐক্যবদ্ধ হোক, শক্তিশালী হোক। মালদহের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংবাদে লেখা হল ঘোষেদের সঙ্গে মুসলমানদের দাঙ্গা। ঘোষেরা যেন হিন্দু নয়। হিন্দুর সংহতি নষ্টকারী এইসব প্রাণীগুলো আসামের ঘটনা সব জেনেও স্পষ্ট করে বলতে পারলেন না আসাম আন্দোলনের প্রকৃত চরিত্রটি কি ছিল। বিভিন্ন ঘটনা, আন্দোলন বহির্ভূত বিষয় নিয়ে সাতকাহন পাঁচালী গেয়ে প্রমাণ করতে চাইলেন এবারেও সেই আগের মতো বাঙালী বিতাড়ন আন্দোলন। এর আগেও এই সাংবাদিকরা শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন।

বাঙালী বাঙালী করে এরা অস্থির হয়ে যান, কিন্তু আসাম থেকে কোনদিন বাঙালী মুসলমান বিতাড়িত হয়নি কেন? বাঙালী মানে কি শুধু ‘হিন্দু বাঙালী’? পূর্ব বাঙলার তো সবাই বাঙালী। দফায় দফায় যারা বিতাড়িত হয় তারা শুধু হিন্দু কেন? এই সোজা কথার জবাব এঁদের কাছে নেই। বাঙালীদের জন্য যাদের বেশী দরদ, যারা বাঙালীর স্বার্থরক্ষায় বাঙালীস্তান গড়তে চায় সেই ‘আমরা বাঙালীও এ প্রশ্নে নীরব। বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য এরা কোনদিন একটা কথা বলে না। এবারও এঁরা সব সময়ে চেয়েছেন আসামের আন্দোলনকে লঘু করে দেখাতে। এত দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে কখনও হয়নি। 

হিন্দু পৃথিবীর যেখান থেকেই আসুক এখানে সে বিদেশী নয় অনুপ্রবেশকারী নয়, এমন কি শরণার্থীও নয়, এদেশ তার মাতৃভূমি। অসমীয়া হিন্দুরা একথা বুঝেছে, কিন্তু তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। আসামে ঊনপঞ্চাশ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমানের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশ বন্ধ করতেই হবে। না পারলে আসামের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। আসাম হবে আর একটা পাঞ্জাব কিম্বা কাশ্মীর। আসামের তরুণেরা এ ব্যাপারে সচেতন সতর্ক হচ্ছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে এটাই আশার কথা। কিন্তু হিতেশ্বর সাইকিয়া, প্রফুল্ল মহান্তী সরকার সবটাই উল্টে দিচ্ছে।

পাঞ্জাব আজ অগ্নিগর্ভ। সেখানে তৈরী হয়েছে শিখ মুসলিম সুহৃৎ সমিতি। এর পিছনে আছে পাকিস্তান এবং এখানকার মুসলমানদের একটি অংশ। হিন্দু সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে শিখেরা কখনোই এতো নিষ্ঠুর নৃশংস হতে পারে না। তিনশো বছরের শিখ ইতিহাসে এরকম নজীরও নেই। নির্মম হিন্দু হত্যায় তাই ফুটে উঠেছে পরিচিত ইসলামিক বর্বরতা। এই বাস্তব অবস্থার ভয়ংকরত্ব এবং সমস্যা সমাধানের কথা কেউ বলতে পারছে না। ঔদার্য নিয়ে, দিব্যজ্ঞান নিয়ে মিথ্যের চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে নিজের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে হিন্দুসমাজ। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা নিরীহ, উদার পরমতসহিষ্ণু মনুষ্যগোষ্ঠী। যারা শুধু সর্বমানবে নয়, পশুপক্ষী, কীটপতঙ্গ প্রতিটি ধূলিকণায় ঈশ্বরকে কল্পনা করেছে। মানবাত্মার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছে যাদের ধর্ম-দর্শনে, সেই হিরণ্ময় ঐতিহ্যের ধারক হিন্দুসমাজ আজ বিপন্ন। তথ্য-প্রমাণ- যুক্তির আলোয় এই কঠিন সত্য নগ্নভাবে প্রকটিত। যতদূর সম্ভব ঐক্যবদ্ধ সংগঠিত করে হিন্দুত্বকে বাঁচানো আজকের হিন্দুদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।

যে যাই বলুন ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনের মূল ধারা মানে হিন্দু ধারা। হরিদ্বার থেকে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে গঙ্গায় অনেক নদী এবং নর্দমার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাতে গঙ্গার স্বকীয়তা, পবিত্রতা নষ্ট হয়নি। গঙ্গা গঙ্গাই রয়ে গেছে। হিন্দুও তাই। শক্তির অভাব আমাদের নেই। আছে আত্মিক শক্তি এবং সংখ্যা শক্তি। শুধু নেই আত্মবিশ্বাস এবং সংগঠনশক্তি। ফলে হিন্দু সমাজের অবস্থা অনেকটা উটপাখীর মত। উটপাখী দৌড়াতে পারে ঘণ্টায় চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মাইল। লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দিতে পারে একটা তাজা ঘোড়াকে। পায়ে তার এতো জোর। আত্মবিশ্বাস না থাকার ফলে বিপদ দেখলে প্রত্যেকটি উটপাখী কি করে? চোখ দুটো বন্ধ করে ঠোঁটটা বালিতে গুঁজে দেয়। ভাবে বিপদ এড়িয়ে গেলাম। তখন তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় ঘেয়ো কুকুর আর রুগ্ন শেয়ালের দল। যারা তার একটা পদাঘাতের যোগ্য নয়। এ অবস্থা চলতে পারে না। সহ্যের অতীত হিন্দু সমাজ সংগঠিত হচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে। হতেই হবে। কারণ লক্ষ লক্ষ বছরের ঐতিহ্যসম্পন্ন পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ শুভ্র এবং পবিত্র জীবনদর্শনের উজ্জ্বল উত্তরসূরী হিন্দু জাতির ভবিষ্যৎ আমরা কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনীতিক বালখিল্য বুদ্ধিজীবী অথবা ভণ্ড ধার্মিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না। কারণ এটা হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন।

যদি না পারি? পঁচিশ বছর পরেই কিছু স্পেসিমেন মনুষ্য আমরা চিড়িয়াখানায় দেখতে পাবো। বাধ্যতামূলক ধর্মান্তরিত অহিন্দু পিতারা তাদের বালক পুত্রদের হাত ধরে বলবে : এই দ্যাখ, অতীতে এই দেশে এক ধরনের প্রাণী ছিল এরা সংখ্যায় ছিল প্রচুর, শক্তিও ছিল যথেষ্ট। এদের নাম ছিল হিন্দু। এদের বেদ ছিল, বেদান্ত ছিল, গীতা উপনিষদ ছিল। মার্ক্সবাদ গান্ধীবাদ ছিল, কিন্তু বাস্তববুদ্ধি ছিল না। তাদের ব্রহ্মজ্ঞান ছিল, দিব্যজ্ঞান ছিল শুধু কাণ্ডজ্ঞান ছিল না। তাই তারা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। দুচারটি প্রাণী মাত্র এখন দেখা যায়, তাই দ্রষ্টব্য বস্তু বলে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছে, মারা গেলে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে আরক মাখিয়ে যাদুঘরে রেখে দেওয়া হবে।

দীর্ঘদিনের কলংক কালিমা বাবরী মসজিদ হিন্দুরা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। বিশাল হিন্দু সমাজে আত্মবিশ্বাস এসেছে।

দূর্নীতি দূষিত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির অভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

আর্যসমাজ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের চেষ্টায় এ পর্যন্ত পঞ্চাশ লাখ মুসলমান এবং পাঁচ লাখ খ্রীষ্টান হিন্দু সমাজে ফিরে এসেছে।

মীরাটের ইমাম সৈয়দ মেহেবুব আলী, মাদ্রাজের ইমাম শেখ আমীর মহম্মদের মত শতাধিক পণ্ডিত হিন্দু ধর্মের প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।

খ্রীষ্টান ধর্মের প্রচারক এ্যাণ্ডারসন মাউরি হিপসন রায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে হিন্দুধর্ম সংস্কৃতির প্রসারে ব্যস্ত রয়েছে।

প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল দাউদ ইব্রাহিম, রশিদ খানের এজেন্ট প্রমাণিত হয়ে যাওয়ায় তারা সবাই এক হয়ে হিন্দু সমাজ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষের নগরে বন্দরে গ্রামে গঞ্জে হিন্দু সংগঠন এখন ঠিক দাবানলের মতোই ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ঘুমন্ত সিংহ হাই তুলছে। আড়মোড়া ভাঙছে। রাষ্ট্রদ্রোহীরা চিন্তিত হয়ে উঠেছে। হিন্দুর জাগরণের আর দেরী নেই।

===========================
দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

============================

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...