সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি “বর্নপ্রথা”? না অন্য কিছু? - ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

“হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি “বর্নপ্রথা”? না অন্য কিছু?”  -ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

মানুষ নিজের পুর্ব পুরুষের আচার, বিচার, ধর্ম, সংষ্কার এমন কি ‘রাজনৈতিক মত পথ’ পরিবর্তন কেন করে? কারন নানাবিধ। 

আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছি। তার মধ্যে এমন কিছু দেশে গিয়েছি যেখানে ধর্ম পরিবর্তন করার এক এবং একমাত্র কারন ‘ভয়’ বা শুধু মাত্র মৃত্যুর হাত থেকে বেচে থাকার জন্য। পেরু, মেক্সিকো, বা অন্য ল্যাতিন আমেরিকার দেশে যান, দেখবেন সেখানকার মানুষ আজ সবাই খ্রীষ্টান। সেই সঙ্গে তাদের পুর্ব পুরুষের আচার,বিচার, ধর্মীয় পদ্ধতির নিদর্শন আজো বিদ্যমান। রোমান ক্যাথলিক ‘স্প্যানিয়ার্ডরা যখন ওই সব জায়গায় গেলো, তখন মেতে উঠলো মানুষ মারার উন্মাদনায়। তবে যদি ধর্ম পরিবর্তন করে ‘ রোমান ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহন করো’ তাহলে মরতে হবে না। নিরীহ মানুষ কি করবে?

এই কিছুদিন আগে, আই এস আই এস যখন ইরাকে তান্ডব চালাচ্ছিলো তখন ওই সব জায়গায় বসবাস কারী ‘ইয়াজিদি’ এবং খ্রীষ্টানরা দল বেধে মুসলিম হয়ে গেছে। খবরের কাগজে পড়েছিলাম মাত্র একদিনে “মসুল” শহরে ১৫০০০ খ্রীষ্টান মুসলিম হলো। এতো সেদিনের ঘটনা। একটূ খোজ নিন জানতে পারবেন। 

আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে বেশ কিছু মানুষ আছেন তারা দলে দলে মুসলিম হবার পিছনে ‘জাতি প্রথা বা বর্ন প্রথাকে’ দ্বায়ী করেন। এই কথা আজকাল খুব বেশী করে বলা হচ্ছে, রাস্তার পাশে মিটিং মিছিল করেও বলা হচ্ছে। আমি নিজে কোনো উচ্চ বর্নের নই। কিন্তু মাইক লাগিয়ে উচ্চ বর্নের নামে যে সব কথা বলা হয় তা আমার কানে আসে। ভাষাগুলো শুনেই কানে আঙ্গুল দিতে ইচ্ছে করে। 

আমি নিজে মনে করি, যারা বলেন, তাদের বেশীর ভাগ এই “বর্ন প্রথা’ কি তার কিছুই জানেন না। তবুও বলে যান। তাদের মুল বক্তব্য “ বর্ন প্রথার চাপে দলে দলে নিম্ন বর্গের হিন্দুরা মুসলিম হয়ে গেলো”। একটু তলিয়ে ভাবুন। 

৬৩২ সালের পর মাত্র ৭ বছরের মধ্যে মিশর, ইরাক এবং ইরান ৯৯% মুসলিম কেনো হলো? আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার দেশ গুলি, সেখানকার উপজাতিরা সামান্য কয়েক বছরের মধ্যেই মুসলিম হয়ে গেলো। পুর্ব ইউরোপের যে সব অঞ্চল মুসলিম দখলে এসেছিলো সেখানেও সেই একই কথা, “মুসলিম হও বেচে যাও”। ভিয়েতনামের চম্পা রাজ্যের হিন্দুরা ( যাদের বলা হয় ‘চাম’,) তারা আজো ঘর ছাড়া। মেকং নদীর মোহনায় নৌকা তে থাকে। তাদের বলা হয় “বোট পিপল”। এরা হিন্দু ছিলো। 

উচ্চ বর্নের হিন্দুদের জন্য ভারতের হিন্দুরা সব দলে দলে মুসলিম হয়েছে, এই কথা যারা বলেন, হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, এই উপরি উক্ত দেশ গুলির কোন দেশে “বর্ন প্রথা” ছিলো??????? চুপ করে থাকবেন না। উত্তর দিন। এরা কেনো মুসলিম হলো? পৃথবীর সব চেয়ে মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেশ ‘ইন্দোনেশিয়াতে’ কোন কালে উচ্চ বর্নের হিন্দুরা নিম্ন বর্নের হিন্দুদের উপরে অত্যাচার করেছে? তো, এরা কেনো মুসলিম হলো??? কোন চ্যাটার্জী, মুখার্জী, গাঙ্গুলী, ব্যানার্জী, ভট্টাচার্য, এই সব দেশ গুলিতে আছে? কোথাও নেই??? তাহলে??? 

ঐতিহাসিক কে এস লাল, শ্রী বাস্তব, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, স্যার যদু নাথ সরকার এদের লেখা পড়েছেন কি???? না পড়েন নি। পড়লে দেখতে পেতেন, মাথায় বুদ্ধি থাকলে বুঝতে পারতেন, কতো অত্যাচার এই আরবী, তুর্কি, আফগানী, উজবেকী, ঘুরী, বুখারি এরা আমাদের দেশে করেছে। সুফি দরবেশ নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খান জাহান আলি এবং আরো শত শত রা কি ভাবে ছল, বল, কৌশল করে আমাদের পুর্ব পুরুষ দের ধর্মান্তরিত করেছে। 

আপনারা যে ‘তৈমুর’ এর নামে নানা কথা টিভি তে দেখেন সেই তৈমুর আলি খান, যে তৈমুরের নাম অনুসরন করে নাম পেয়েছে, তার বানী শুনুন--- 

জেহাদী তৈমুর বলেছিলো, আমি ভারতে গিয়েছিলাম শুধু দুটি কারনে, এক, অবিশ্বাসীদের সংগে যুদ্ধ করে তাদের খতম করা। আর দুই, ইসলামের সৈনিক রা অবিশ্বাসীদের সম্পত্তি লুট করে সম্পদ পাবে”. He said, “My main objective in coming to Hindustan has been to accomplish two things. The first was to war with the infidels, the enemies of the Mohammadan religion.---- The other was that the army of Islam might gain something by plundering the wealth and valuables of the infidels”. এই তৈমুর উজবেকিস্তানের সমস্ত হিন্দুদের মেরে তাদের মাথার খুলি একটি মিনার বানিয়ে সেই মিনারের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। বিবি খানুম নামে সমরখন্দে এক মসজিদ আছে। সেটা বহু প্রাচীন এক শিব মন্দিরের রুপান্তর ঘটিয়ে বানিয়েছিলো এই তৈমুর। নাম ‘বিবি খানুম মসজিদ’। (নিজের স্ত্রীর নাম অনুসারে)। সেই বিবি খানুম মসজিদের পাশেই সেই মিনার আছে। আপনাদের প্রিয় বাবুর, একটি নয় দুটি ওই রকম মিনার বানিয়েছিলো যা আজো আছে। 

জানেন কি, চেঙ্গিজ খানের এক বংশধরের নাম? জানেন না। আপনাদের অতি অতি প্রিয় এক বলিউড অভিনেতার নাম। 

পৃথিবীতে যতো ধর্ম আছে, তার মধ্যে একমাত্র ‘জেহাদী ধর্মে’ বলা আছে কাফের দের মারলে “গাজী” উপাধি পাওয়া যায়। “ হজ করলে হাজি কাফের মারলে গাজী”। 

আন্দামানে ‘উইম্বার্লিগঞ্জ’ নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে ‘মোপলা’ বিদ্রোহীদের নিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেখানে আজো শুনতে পাবেন “ আমার বাবা ---গুলো হিন্দুকে কচুকাটা করেছিলো’। শুনেছেন কোনোদিন?? আমি অনেক দিন অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছি, শুনেছি। এই মারের হাত থেকে বাচার জন্য, হিন্দু হয়ে বেচে থাকার জন্য, জিজিয়া করের হাত থেকে বাচার জন্যই এতো নিম্ন বর্গের হিন্দু ভারত বর্ষে মুসলিম হয়েছে। 

যে মনু সমহিতার দোহাই দিয়ে, অনেকে উচ্চ বর্নের হিন্দুদের গাল পাড়ে যেই মনু সমহিতা তৈরী হয়েছিলো প্রায় ৮০০০ বছর আগে। সাতজন মনুর শেষ মনু হচ্ছেন বিবস্বান মনু। তার আদেশে ভৃগুমুনি এই “ মানূষের জীবনের সংবিধান” রচনা করেন এবং দশজন মুনি সেই সংবিধান সারা জম্বুদ্বীপে প্রচার করেন। তার মধ্যে এই উচু নিচু কিছুই ছিলো না।

মুসলমানী অত্যাচারে যখন ব্রাহ্মনদের সব পাঠশালা, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলো, ধংস হয়ে গেলো, তখন পেটের দ্বায়ে এই কর্ম হীন ব্রহ্মন রা সেই মনুস্মৃতিতে অনেক নিয়ম কানুন যোগ করেছে। সেই দ্বায় তাদের ঘাড়ে না চাপিয়ে যাদের অত্যাচারে সেই সব করতে হয়েছে , তারা বাধ্য হয়েছে তাদের দোষারোপ করুন। 

সতীদাহ শুরু হয়েছে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের অত্যাচারের ভয়ে যখন রাজা দাহিরের “আলোর দুর্গে” রানী রানীবাই ৬০০০ মহিলা সমেত অগ্নিকুন্ডে ঝাপ দেন ‘সহমরন’ হিসাবে। বিবাহিত মহিলাদের চেয়েও অবিবাহিত মেয়েরা ‘আদিম প্রবৃত্তি’র পুরনে বেশী ভালো, তাই অবিহিতা মেয়েদের জোর করে হারেমে বা খানকায় (পতিতা পল্লী) নিয়ে যাওয়া শুরু হলো, তখন থেকে ‘বাল বিবাহ চালু হলো’। এটাও ওই মুসলিম রাই করতে বাধ্য করেছে। 

কিন্তু সেই সমাজ কি আছে? না নেই। উচ্চ বর্নের আধিপত্য তো কবে শেষ হয়ে গেছে। মনুস্মৃতি হিন্দুদের মানসিকতায় গভীর ভাবে গ্রথিত হয়ে যাওয়ায়, আজো ভারতে বেশ কিছু হিন্দু আছে। নইলে মিশর, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আন্দুলেশিয়া হয়ে থাকতে হতো ভারতকে। হিন্দু বলে কেউ থাকতো না।

লেখক: মৃণাল কান্তি দেবনাথ

https://www.facebook.com/mrinalkanti.debnath

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...