সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা ১০ অক্টোবর ১৯৪৬। জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা ১০ অক্টোবর ১৯৪৬

জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী
তারিখ ৩১/১০/১৯৪৬

লক্ষ্মীপূজার দিন শুক্রবার বেলা ১০টার সময় প্রথমে বহুলােক টেটা, বল্লম, দুটো বন্দুক নিয়ে আসে, তখন আমরা মেয়েরা সকলেই ছাদের উপরে উঠি। তখন দুবৃত্তরা চারিদিকে আগুন লাগাইয়া দেয়। মণীন্দ্রবাবু, কানু রায় (প্যারী রায়ের ছেলে) দুজনে গিয়ে মাপ চাইতে যায় এবং মাপ চাইতে না চাইতেই মণিকে নিয়াই কাটিয়া ফেলে, কানুর বুকে বল্লম মারে। তারপর অনর্গল ইট-বর্ষণ হয় এবং বর্ণনাকারিণীর চোখের উপরেই ইট লাগে। তারপর ছাদের উপর হইতে পুরুষ ও মেয়েরা মাপ চাইতে থাকে। দুর্বত্তরা নীচু হইতে অস্ত্র শস্ত্র ছুড়িয়া মারিতে সকলেই ছাদের উপরে শুইয়া পড়ে। সকলেই অল্পবিস্তর আহত (হন) এবং উঠিয়া মার্জনা প্রার্থনা করে যে আমাদের মারবেন না, যা চান বলুন আমরা দিতেছি। তাহাতে জনতা বলে তােমরা আগে নামিয়া এসাে। তখন মেয়েরা বলেন যে চারিদিকে আগুন জ্বলিতেছে আমরা কেমনে নামিব। তখন নীচু হইতে নারিকেল গাছ কাটিয়া উপরে উঠিয়া বলে মু$লমান হবি কিনা? আমরা অনেকেই স্বীকার করি, এবং দাবি (করি) যেন আমাদের উপরে কোন অত্যাচার করা না হয়। তখন তাহারা বলে যে নির্ভয়ে নাম। তখন তাহারা আমাদিগকেই হাত ধরিয়া নামিতে সাহায্য করে। এবং নামাইবার সময় গা হইতে অলংকারগুলি টানিয়া খুলিয়া লওয়া হয়।

এর আগে পুরুষদিগকে পিটাইতে থাকে। এবং রাজেনবাবুকে খোঁজ করিতে থাকে। রাজেন বাবুকে কলার পাতায় ঢাকিয়া রাখা হইয়াছিল। তারপর খোঁজ করিয়া ধরিয়া ফেলে। রাজেনবাবুর স্ত্রী বলেন যে আগে আমাকে হত্যা না করিয়া উহাকে মারিতে পারিবেন না কয়েকজন মিলিয়া রাজেনবাবুর স্ত্রীকে ধরিয়া রাখে এবং রাজেনবাবুকে হাত বাঁধিয়া নীচে নামান হয় এবং তিনি নামিবামাত্রই একজন টেটা ছুড়িয়া তার প্রতি নিক্ষেপ করে, তাহা আসিয়া রাজেনবাবুর পাছায় লাগে। তখন তিনি বলেন যে আমার মাথা ঘুরিতেছে, দাঁড়াইতে পারিতেছি না। তারপর রাজেনবাবুকে ধরিয়া আম গাছের তলায় গোলাম সরোয়ার  বিশ হাত তফাতে দাঁড় করান হয় এবং বিশ (হাত) তফাত থেকে গোলাম সরোয়ার  তাহাকে গুলি করিয়া মারে, গুলি রাজেনবাবুর বুকে লাগে। তাহাকে একটু দূরে লইয়া গিয়া মাথা কাটা হয়। তারপর গোলাম  সরোয়ার  হুইসিল দেয় এবং সকলে থামে। যখন এই কাণ্ড চলিতেছিল তখন অন্যান্য পুরুষদিগকে ছাদ হইতে এক এক করিয়া নামাইয়া হত্যা করা হইতেছিল। নগেন রায়ের আট বছরের ছেলেকে ছাদের উপর থেকে আগুনে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছিল, কিন্তু তাহার মৃত্যু হয় নাই, বাঁচিয়া গেছে। তারপরেই গােলাম সরােয়ার যখন চলিয়া যাইতে থাকে তার পিছনে বাড়ীর সমস্ত মেয়েদের লইয়া চলিতে থাকে। যাইবার সময় আমি দুই পাশে তাকাইয়া দেখিতে পাই ভাতের ডেকচিতে নগেন রায়কে কাটিয়া রাখা হয় এবং ডালের ডেকচিতে সতীশবাবুর আধকাটা শরীর রহিয়াছে। গােলাম সায়েরের বাড়ীতে যখন পৌছান হইল তখন রাত্রি হইয়া গিয়াছিল। আমাদের দেখিয়া যাহারা আমাদের লইয়া গিয়াছিল তাহাদের ধমক দিয়া বলে যে কেন ইহাদের এখানে আনিয়াছ? ইহাদের বাড়ীতে ফিরাইয়া দাও। কিন্তু বাড়ী তখন পুড়িতেছিল। আমাদের তখন ভিন্ন ভিন্ন হি.ন্দু ও মু$লমান বাড়ীতে রাখা হয়। সকাল বেলায় আমরা বাড়ীতে ফিরি ও ছােট ঘরে আশ্রয় লই। সকাল ৮টার সময় কয়েকজন বড় বড় বেতের বড় ঝুরি ও দা লইয়া আসে এবং নিহত ব্যক্তিদের মাথা কাটিয়া ঝুড়ি ভরিয়া লইয়া যায়। একমাত্র কানুবাবু ভীষণভাবে আহত হইয়া একটি ঝোপের মধ্যে পড়িয়া ছিলেন। তাহাকেইহারা দেখিতে পায় নাই। রাত্রে তাহার আর্ত্নাদ শুনিয়া মজুমদার বাড়ীর লােকেরা তাহাকে লইয়া যায়। পরের সোমবার লাসগুলি সরাইয়া লইয়া যাওয়া হয়। কানুবাবু সেইদিন মারা যায়, কানুবাবুকে ওরা আসিয়া কবর দেয়। এরপর একদিন ডাফরান সাহেব আসিয়া রাজেনবুর স্ত্রী ও মেয়েদিগকে লইয়া যান; অন্য কাহাকেও লইতে অস্বীকার করেন।

সাতদিন পরে লামচর হইতে প্রথমে পুলিশ দেখা দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছাদ ধ্বসিয়া মাত্র তিনজনের মৃত্যু হয়, বাকী সকলের অস্ত্রাঘাতে মৃত্যু হয়। ইহার মধ্যে ছিনাইয়া লওয়া কালাচাদের রায়ের স্ত্রী, নমিতা, খুকু

নিহতদের তালিকা

(১)কালীকুমার রায় ও আর দুইজন ছাদ ধ্বসিয়া মৃত্যু হয়। (৪)রাজেনবাবু (৫)চিন্তাহরণবাবু (৬)সতীশবাবু  (৭)মণীন্দ্রবাবু (৮)গােপাল (৯)নগেন্দ্রবাবু (১০)জয়চন্দ্র  (১১)মনােমােহন  (১২)হরেন্দ্র রায়  (১৩)ব্রজনাথ দাস  (১৪)যশােদ ধুপী  (১৫)বারুই বাড়ীর দুটি ছেলে (১৬)প্রসন্ন রায়  (১৭)কালু রায় (১৮)অক্ষয় রায় (১৯)সুর্য্য রায়  (২০)মােনা  (২১)খােকা  (২২)নেপু (সূর্যাযরায়ের ছেলে)  (২৩)মজুমদার  (২৪)কালীপদ রায়।

তথ্যসূত্রঃ~ সাতচল্লিশের ডায়রি :নির্মলকুমার বসু।

 _______________________________________________

সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন:- ❝ যে জাতির ইতিহাস নাই তাহার ভবিষ্যৎ নাই। ❞

তাই বাঙালিকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আর কতদিন বাঙ্গালী ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে তার ওপরেই নির্ভর করছে বাঙ্গালী হিন্দুর ভবিষ্যৎ














এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...