❌হিন্দু মেয়েদের টার্গেট করে লাভ জিহাদ করা হয়
❌হিন্দু ছেলেদের টার্গেট করে অনুভূতি জিহাদ চালানো হয়
❌হিন্দু শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবিদের টার্গেট করে হয়রানী, মব লিঞ্চিং করা হয়
❌শত্রু সম্পত্তি আইন/ অর্পিত সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে হিন্দুদের জমি গ্রাস করা হয়েছে, যার মোট সাইজ প্রায় ফিলিস্থিনের সমান। ২৬ লাখ একর জমি বেদখল করা হয়েছে।
❌সেনাবাহিনীতে নেয়া হয় না
❌বেশিরভাগ সরকারী চাকুরিতে চেষ্টা করা হয় হিন্দুদের নিয়োগ না দেবার।
❌বাজেটে নামমাত্র বরাদ্ধ দেয়া হয়, তাও খরচ করা হয় না।
❌মুসলিমদের ওয়াজে হিন্দুদের টার্গেট করে ঘৃণামুলক কথা বলা হয়।
❌সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
❌মুসলিম ছেলেমেয়েদের বাবা মা তাদের বাচ্চাদের হিন্দু বাচ্চাদের সাথে মিশতে মানা করে।
❌স্কুলের মুসলিম শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা হিন্দু শিক্ষার্থীদের হেয় করা, ভেদাভেদ করার প্রবণতা দেখা যায়।
❌কোচিং করানোর নামে হিন্দু ছেলে-মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার মগজ ধোলাই করানো হয়।
❌রমজানে হোটেল খোলা রাখতে বাধা দেয়া হয়। গরু না রাখলে রেস্টুরেন্ট চালাতে দেয়া হয় না। এমন কি হিন্দু মালিকাধীন হোটেলেও গরুর গোশত রাখার জন্য জোর করা হয়।
❌নামাজের টাইমে পুজা করতে দেয়া হয় না।
❌হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেয়া হয় না।
❌ইতিহাস বইয়ে হিন্দু রাজাদের শাসনামল অনুপস্থিত।
⛔সর্বোপরি, হিন্দু মানেই খারাপ মানুষ- এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে।
আমাদের সমস্যাসমূহঃ
১। বিশ্বস্থ নেতৃত্বের অভাব
২। যোগ্য নেতৃত্বের অভাব
৩। অনুভূতি জিহাদের মাধ্যমে হিন্দুদের ব্যবসা, সম্পত্তি, চাকুরি গ্রাস
৪। লাভ জিহাদের মাধ্যমে মেয়েদের নিরাপত্তাহীন করা,
৫। অন্য ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে আসার ব্যবস্থা নেই বা কম
৬। হিন্দুদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা, লোভ, হিংসা, অলসতা, নগদ ফলের আশা ইত্যাদি রয়েছে
৭। বিভিন্ন গুরুবাদ, মতবাদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক, একে অপরের নামে হিংসা ছড়ানো
আমাদের যা জানা একান্ত প্রয়োজনঃ
১। চিন্তার মুক্তি, বা সঠিকভাবে চিন্তা করা শিখতে হবে। সঠিক চিন্তা সঠিক কর্ম করতে সহায়তা করবে, সঠিক সুন্দর কথা এবং আচরণ প্রকাশ পাবে।
২। সুযুক্তি, কুযুক্তি (ফ্যালাসি অব লজিক) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আজেবাজে যুক্তি দিয়ে হিন্দুদের মগজধোলাই চলছে।
৩। সিন্ধু সভ্যতা, বৈদিক সভ্যতার উত্তরসূরী আমরা। আমরা আমাদের সেই মহান সভ্যতা এবং সেসময় থেকে এপর্যন্ত যেসব মহান মানুষ আমাদের মাঝে এসেছেন তাদের সম্পর্কে জানতে হবে। যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে সেসব সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। ভারতবর্ষের ইতিহাস ৫ হাজার বছর বা তার চেয়েও পুরানো। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রকৌশলবিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা সহ জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় যে উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন- সেসব সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। অজন্তা-ইলোরা, মহাবালীপুরামের ইতিহাস আগ্রার চেয়ে সহস্রগুন ঐতিহাসিক এবং রোমাঞ্চকর।
৪। অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে ও নিজের ধর্ম সম্পর্কে তুলনামুলক পার্থক্য জানা জরুরি। অনেকে ধর্ম পরিবর্তন করে হুজুগে পড়ে বা প্রেমের ফাঁদে পড়ে। পরবর্তীতে সেখান থেকে শত চেষ্টা করেও ফিরে আসতে পারেন না। সারাজীবন নিপীড়নের শিকার হন।
আমাদের যা করণীয়ঃ
১। কর্মে বিশ্বাসী হতে হবে। ফল লাভে নয়। ফলের আশা বাদ দিয়ে সঠিক কর্মটি করে যেতে হবে।
২। স্বজাতির ভিতরে একে অপরের সাথে সংযুক্তি বাড়াতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ইগো থাকা যাবে না। ছোট-বড়, ইতর-মহাজন সবার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন এবং তা লালন করতে হবে।
৩। স্বজাতির আর্থিক ও মানসিক মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতে হবে। যেমনঃ
=> স্কিল ডেভলপ কর্মশালা
=> বিতর্ক, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা
=> বৈদিক যুগ/ সনাতন সভ্যতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, সভা-সেমিনার
=> নিয়মিত ধর্মচক্র করা। সেখানে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বর্তমান বিষয় নিয়ে নিজেদের ভিতর আলোচনা করা
=> বাচ্চাদেরকে ধর্মীয় ইতিহাস, আচরণ-রীতিতে অভ্যস্থ করা। প্রতি সপ্তাহে ২/৪ বার মন্দিরে নিয়ে যাওয়া।
=> বছরে অন্তত একবার গীতা পাঠের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা।
=> স্বজাতির ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, চাকুরি, ব্যবসায় সাহায্য, ঋণ প্রদান
=> একে অপরের সাথে লেনদেনের ব্যাপারে ১০০% সৎ থাকা
৪। সঠিকভাবে চিন্তা করা অনুশীলন করা। একটি বিষয়কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিভিন্নজনের দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করা।
৫। যে কোনো বিষয়ে কারো সাথে কুতর্ক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। না বোধক কথা এবং না বোধক শব্দ এড়িয়ে চলতে হবে। গঠনমূলক এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিবেন।
৬। অনলাইনেও যে কোনো কুতর্ক থেকে বিরত থাকবেন।
আমাদের লক্ষ্যঃ
একটি বাসযোগ্য পৃথিবী, যেখানে শিশুরা সম-অধিকার, সম সুযোগ নিয়ে বেড়ে উঠবে। ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসাবে পালিত হবে। ধর্ম কখনো কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবে না, ধর্ম রাষ্ট্রের কোনো বিষয়ে নাক গলাবে না। যেসব ব্যক্তি ঘৃণামূলক কথা বলবে সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে বয়কট করতে হবে। মেধা এবং সুন্দর আচরণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ একটি সভ্য দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
প্রারম্ভঃ
আমাদেরকে জানতে হবে কারণ আমরা নিপীড়িত। নিপীড়িতের প্রধান অস্ত্র হলো জ্ঞান। এই জ্ঞানকে সম্বল করেই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এই জ্ঞানকে সম্বল করেই কর্মপন্থা ঠিক করতে হয়। নিজেকে সবল করতে হয়।
নিজেকে সবল কেন করতে হয়? সবল কেন হতে হয়?
কেননা দুনিয়া সবলের কথা শুনে। দুর্বলকে পায়ে দলে। এবার চিন্তা করুন দুর্জন যদি সবল হয় তাহলে দেশের-সমাজের-পৃথিবীর কি অবস্থা হয়?
ব্রুনোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল -পৃথিবী ঘোরে -এই সত্য কথাটা বলার জন্য। কারা তাকে এই মৃত্যু দন্ড দিয়েছিল? তখনকার রাজা এবং পাদ্রীরা। সেই ক্ষমতাবানরা সত্যটা মেনে নিতে পারে নাই তাই দ্বিমত প্রকাশকারীকে তারা খুন করেছিল।
অর্থাৎ আপনি সত্যটা জানেন, যুক্তির আলোয় তা যতই উদ্ভাসিত হোক না কেন, সেটা প্রকাশ করার অনুকূল পরিবেশ দেশে বিরাজ না করলে সেই মত আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না।
তাই আমাদের সবল হবার কোন বিকল্প নেই।
সনাতন বা হিন্দু ধর্মে জ্ঞানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গীতায় বলছে
ন হি জ্ঞানেন সদৃশং, পবিত্রমিহ বিদ্যতে।
তৎস্বয়ং যোগসংশিদ্ধঃ, কালেনাত্মনি বিন্দতি॥
বাংলা অনুবাদ:
এই জগতে জ্ঞানের মতো পবিত্র কিছুই নেই।
যে ব্যক্তি যোগে সিদ্ধ হয়, সে নিজে ক্রমান্বয়ে তার অন্তরে এই জ্ঞানকে উপলব্ধি করে।
(অধ্যায় ৪, শ্লোক ৩৮)
বেদ, স্মৃতি, ভারতীয় দর্শন, ষড়দর্শন, রামায়ণ, মহাভারত যদি শুধু এই গ্রন্থ, শাস্ত্র ও দর্শনগুলোর কথা ধরি- পাঁচ হাজার বছর এবং তৎপুর্বে এসব গ্রন্থের মাধ্যমে আমাদের ঋষিরা তাদের জ্ঞানের যে ভান্ডার আমাদের দিয়ে গেছেন, এর তুল্য প্রাচীন এবং আধুনিক জ্ঞানভান্ডার অন্য কোন সম্প্রদায়ের নেই।
আব্রাহামিক রিলিজিয়নের সাথে ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম বা সনাতন ধর্মের বেসিক তফাৎ আছে। তাদের ঈশ্বর ভাবনার সাথে আমাদের ঈশ্বর ভাবনা যোজন যোজন তফাৎ বিদ্যমান।
✪✪
শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় অর্জুনকে বিশ্বাস, যুক্তি ও তর্ক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। গীতার বিভিন্ন শ্লোকে তিনি বিশ্বাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন, তবে সেই বিশ্বাস যেন যুক্তির আলোতে পরিশুদ্ধ হয়, সেটিও স্পষ্ট করেছেন। এখানে গীতার কিছু মূল দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো—
১. বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, পরম সত্য ও সনাতন ধর্ম উপলব্ধি করতে হলে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
শ্লোক:
"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মমেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ॥" (গীতা ১৮.৬৬)
অর্থ:
"সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে শুধু আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব, ভয় কোরো না।"
এখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
২. যুক্তির প্রয়োগ ও বিশ্লেষণ
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শুধু অন্ধবিশ্বাস করতে বলেননি, বরং যুক্তি, বিচার ও বিশ্লেষণ করতে বলেছেন।
শ্লোক:
"বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুখদুঃখে।
তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসূ कौशलम्॥" (গীতা ২.৫০)
অর্থ:
"যিনি বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত, তিনি সুখ-দুঃখ উভয়কেই পরিত্যাগ করেন। তাই কর্মযোগে নিযুক্ত হও, কারণ কর্মের নিপুণতা হলো যোগ।"
এখানে তিনি বলেন, যুক্তিবোধ দিয়ে বিচার না করলে আসক্তি তৈরি হয় এবং তা মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৩. তর্ক ও সন্দেহের পরিণতি
অতিরিক্ত সন্দেহ এবং অহেতুক তর্ক মানুষকে সত্য উপলব্ধি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
শ্লোক:
"সংশয়আত্মা বিনশ্যতি।" (গীতা ৪.৪০)
অর্থ:
"যার হৃদয়ে সন্দেহ রয়েছে, সে ধ্বংস হয়ে যায়।"
এখানে শ্রীকৃষ্ণ বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তি করা উচিত, তবে অযৌক্তিক সন্দেহ এবং অহেতুক তর্ক মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
৪. জ্ঞান, তর্ক ও বিশ্বাসের সমন্বয়
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য গুরুজনদের থেকে শিখতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে এবং চিন্তা করতে হবে।
শ্লোক:
"তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ॥" (গীতা ৪.৩৪)
অর্থ:
"তুমি জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে বিনম্রভাবে প্রশ্ন কর, তাঁদের সেবা কর। তাঁরা তোমাকে প্রকৃত জ্ঞান প্রদান করবেন।"
এখানে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, তর্ক (পরিপ্রশ্ন) করা উচিত, তবে তা উচিত শিষ্টাচার ও নম্রতার সঙ্গে, যেন প্রকৃত সত্য জানা যায়।
উপসংহার
১। বিশ্বাস থাকতে হবে, তবে তা যেন যুক্তি ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হয়।
২। অতিরিক্ত সন্দেহ ও অহেতুক তর্ক মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
৩। সত্য উপলব্ধির জন্য প্রশ্ন ও বিচার করা জরুরি।
৪। গুরুজন ও জ্ঞানীদের কাছে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো, সত্যিকারের বিশ্বাস হলো যে বিশ্বাস যুক্তি ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়। তিনি অন্ধবিশ্বাসের পক্ষে ছিলেন না, বরং বিশ্লেষণ ও আত্ম উপলব্ধির মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন।
আবার জ্ঞানী বুদ্ধ আমাদেরকে কোন কিছু চোখ বুজে বিশ্বাস করতে নিষেধ করে গেছেন।
মহামতি বুদ্ধ কেসপুত্তা নামক এক স্থানে গিয়ে দেখেন সেখানকার কালাম জনগোষ্ঠী বিভিন্ন গুরুর পরস্পরবিরোধী মতামত শুনে বিভ্রান্ত। তখন বুদ্ধ তাদের বলেছিলেন-
"শুধুমাত্র শ্রুতি (শোনা কথা) বা প্রচলিত বিশ্বাস মেনে নেওয়া উচিত নয়।
শুধুমাত্র গ্রন্থে লেখা আছে বলে বিশ্বাস করা উচিত নয়।
শুধুমাত্র গুরু বা প্রভাবশালী ব্যক্তির কথা শুনে মানা উচিত নয়।
কেবলমাত্র যুক্তি ও বিশ্লেষণ দ্বারা যা সত্য প্রতীয়মান হয় এবং যা মানুষের কল্যাণ সাধন করে, সেটিই গ্রহণ করা উচিত।"
এটাকে বুদ্ধের কালাম সূত্র (Kalama Sutta) বলা হয়, যা অঙ্গুত্তর নিকায় (Anguttara Nikaya)-তে অন্তর্ভুক্ত পালি ভাষার একটি সূত্র।
আমাদের কোন ঐশ্বরিক গ্রন্থ নেই। আমাদের ধর্ম মূলত নানা দর্শনের সমষ্টি। স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় একটি নির্দিষ্ট বইয়ের বিপরীতে আস্ত একটি লাইব্রেরী তুলনা করা যেমন বালখিল্যতা তেমনি আমাদের দর্শনের ভান্ডারের সাথে অন্যদের তুলনা করা নিতান্তই ছেলেমানুষি।
একেশ্বর, বহুঈশ্বর, মূর্তি পূজা এমনকি নাস্তিক্যবাদ আমাদের দর্শনের অংশ, আমাদের ধর্মের অংশ। প্রাচীন ভারতে মোট ৯টি জ্ঞান বিদ্যার কথা বলা হয়েছে; যার মধ্যে বেদভিত্তিক ষড়দর্শন এবং এর বাইরে আরো তিনটি দর্শনের কথা আমরা জানতে পারি।
চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সত্যের পথে কাউকে টানতে হয় না। তবে সত্য প্রকাশের জন্য, সব মত প্রকাশের, সব সুযুক্তি প্রকাশের অধিকার একটি সমাজে যাতে উপস্থিত থাকে তা নিশ্চিত করা একটি মানবিক সমাজ এবং মানবিক রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের রাষ্ট্রের জন্ম লগ্ন থেকেই তা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। যারাই রাষ্ট্র পরিচালনায় গেছেন- তারা তাদের মতবাদ চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। সব মতকে সমভাবে বিকশিত হতে দেয়নি।
এবার ধরুন, আপনি আপনার বাসা থেকে কলেজ বা অফিস যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি সম্পত্তির খবর আপনি জানেন যেগুলো আপনার পূর্বপুরুষের ছিল কিন্তু সেগুলো জোর করে, প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়েছিলো। প্রতিদিন আপনি যখন ওই জায়গাটি পার হবেন আপনার মনে তখন কি অনুভূতি হয়?
এটাই জ্ঞানের শক্তি, এটাই ইতিহাসের শক্তি।
বর্তমানে আমরা হিন্দুরা আত্মবিস্মৃত, মেরুদন্ডহীন, ইতিহাস বিমুখ, নগদ ফললোভী জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানিনা, জানার চেষ্টাও করি না, আত্মসচেতন নই, একতাবদ্ধও নই। আমাদের জানার ঘাটতি আছে তাই আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানি না। যারা জানি তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হয় সেটি জানিনা।
পূর্বপুরুষরা যেখানে শেষ করেছেন, সেখান থেকে পরবর্তী প্রজন্ম শুরু করবে। এভাবেই সভ্যতা বিজ্ঞান এগিয়েছে। পূর্বপুরুষদের গৌরবময় ইতিহাস যখন আমরা জানবো, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করবো। পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া পূর্বপুরুষরা যেসব ভুল করেছেন সেগুলো সংশোধন করে নতুন করে এগিয়ে যাওয়াই সময়ের দাবি। ইতিহাসের সাথে বর্তমানের নিজেকে কানেক্ট করতে পারাটা জরুরী। তাতে আগামীতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হবে।
এইতো মুসলমান সুলতানরা আসার আগে প্রাচীন ভারতের জিডিপি ছিল সমস্ত পৃথিবীর ৩৫ পার্সেন্টেরও বেশি।
আমাদের রয়েছে অজন্তা, ইলোরা, সিন্ধু সভ্যতা সহ সুজলা সুফলা রাম রাজত্বের ইতিহাস। এই অঞ্চলের রাজারা কখনো পাশের অন্য দেশ আক্রমণ করেনি। নিজের ধর্মমতকে প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেননি।
হাজার বছর ধরে আমাদের সম্পদ বিভিন্নভাবে লুণ্ঠন করা হয়েছে যা আজও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চলমান। আজ বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসা করতে নানা ধরনের পরোক্ষ বাধা দেয়া হয়, মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নেওয়া হয় না, আমাদের ধর্মকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রতি প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে নিপীড়ন অত্যাচার চলমান, আমাদের মন্দির ভাঙচুর, লুট, ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।
আমাদের বোনেদের উপর লাভ জিহাদের আক্রমণ চালানো হচ্ছে, ভাইদের উপরে চলছে অনুভূতি জিহাদ।
আমাদের ইতিহাস সংস্কৃতি দর্শন ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে বাংলার সংস্কৃতি বলে চালানোর নির্লজ্জ প্রয়াস বিদ্যমান। আমাদেরকে আত্মপরিচয়হীন জাতিতে পরিণত করার হীন প্রচেষ্টা সদা চলমান। আমাদেরকে সম্মানের সাথে বাঁচতে দেওয়া হচ্ছে না।
এথেকে মুক্তির উপায় কি?
আমাদের দায়িত্ব কি??
হিন্দু ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলোর মধ্যে একটি, যার শিকড় বহু হাজার বছর পূর্বে বৈদিক সভ্যতার মধ্য দিয়ে বিস্তৃত। এটি কেবলমাত্র একটি ধর্ম নয়, বরং একটি জীবনযাত্রার পথ যা ধর্ম (ধর্মনীতি), কর্ম (কর্মফল), পুনর্জন্ম (পুনর্জন্মের চক্র), এবং মোক্ষ (মুক্তি) এর মতো গভীর দার্শনিক ধারণাগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। হিন্দু সংস্কৃতি তার বহুমাত্রিক আচার-অনুষ্ঠান, ঐতিহ্য, এবং সামাজিক কাঠামোর জন্য পরিচিত।
Strengths (শক্তি)
১. প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য
হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম। বৈদিক সাহিত্য, উপনিষদ, মহাকাব্য (রামায়ণ ও মহাভারত), পুরাণ ইত্যাদি এক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার গঠন করে যা ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, নৈতিকতা, এবং সমাজব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, মহাকাব্য মহাভারত এবং রামায়ণ কেবল ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং ইতিহাস, নৈতিকতা, এবং সামরিক কৌশলের অসাধারণ প্রতিফলন।
২. হিন্দু স্থাপত্য ও প্রকৌশল
হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত বহু প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ:
বৃহদেশ্বর মন্দির (তাঞ্জাভুর, ভারত): চোল সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত এই মন্দিরটি তার নিখুঁত স্থাপত্য ও গ্রানাইট পাথরে তৈরি বিশাল কাঠামোর জন্য খ্যাত।
কোণার্কের সূর্য মন্দির: সূর্যের রথের আকৃতির এই মন্দির প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যবিদ্যার এক অনন্য নিদর্শন।
খাজুরাহো মন্দিরসমূহ: মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের বিস্ময়কর উদাহরণ, যেখানে সূক্ষ্ম ভাস্কর্য দ্বারা সংস্কৃতি ও শিল্পকলার সমাহার করা হয়েছে।
৩. জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:
আর্যভট্ট: গণিতশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে শূন্যের ধারণা প্রবর্তন করেন।
বরাহমিহির: জ্যোতির্বিদ্যায় অসাধারণ অবদান রেখে যান, যা আধুনিক বিজ্ঞানেও প্রভাব বিস্তার করেছে।
নাগার্জুন: রসায়নবিদ্যার অগ্রদূত, যিনি ধাতুবিদ্যার ওপর গবেষণা করেন।
সূষ্রুত: প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানী, যিনি সার্জারির পথিকৃৎ।
৪. গভীর দার্শনিক ভিত্তি
হিন্দু ধর্মের দর্শন বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গভীর দার্শনিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি। এর মূল গ্রন্থগুলি, যেমন বেদ, উপনিষদ, গীতা, এবং পুরাণ, মানবজীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলির উত্তর দেয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেদগুলি বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মীয় গ্রন্থ, যা খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ অব্দের মধ্যে রচিত। এগুলি কেবল ধর্মীয় নয়, বরং দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক জ্ঞানের ভাণ্ডার।
প্রাচীন ঋষিদের অবদান: ঋষি ব্যাস, পতঞ্জলি, শঙ্করাচার্য, এবং রামানুজের মতো মহান দার্শনিকরা হিন্দু ধর্মের দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, শঙ্করাচার্য অদ্বৈত বেদান্তের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গীতার শিক্ষা: মহাভারতের অংশ ভগবদ গীতা কর্ম, ধর্ম, এবং মোক্ষের উপর গভীর আলোচনা করে। এটি আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।
৫. সাংস্কৃতিক প্রভাব
হিন্দু ধর্ম শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, এবং স্থাপত্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
স্থাপত্য: হিন্দু মন্দিরগুলি শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, বরং শিল্প ও স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। খাজুরাহো, কোনারক সূর্য মন্দির, এবং বৃহদীশ্বর মন্দির হিন্দু স্থাপত্যের অনবদ্য নিদর্শন।
নৃত্য ও সঙ্গীত: ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী, যেমন ভরতনাট্যম, কথাকলি, এবং ODISSI, হিন্দু পুরাণ এবং ধর্মীয় কাহিনীগুলিকে চিত্রিত করে।
৬. বৈচিত্র্য ও উদারতা
হিন্দু ধর্ম একাধিক মতবাদ এবং দর্শনকে গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। এটি বহুত্ববাদী (Pluralistic) ধর্ম যেখানে একাধিক ঈশ্বরের উপাসনা করা হয়, বিভিন্ন সাধনা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, এবং একাধিক দর্শন গ্রহণযোগ্য। যেমন, বৈদিক দর্শন, যোগ, ভক্তি, তন্ত্র, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব ইত্যাদি নানা ধারার মধ্যে সহাবস্থান রয়েছে।
সনাতন ধর্মে অনাদি অনন্ত ব্রহ্মের উপাসনা পঞ্চমতে ও পথে বিভজিত যথা- শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য এবং বৈষ্ণব। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রধানত শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব তিনটি মত-পথের সম্প্রদায় বিদ্যমান। নিজ নিজ উপাস্য সম্প্রদায় ব্যতীত এ পঞ্চমতের সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সমান শ্রদ্ধা এবং সম্মান পোষণ করা উচিত। পক্ষান্তরে কোন আন্তঃসম্প্রদায়ে র প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। সাকার নিরাকার বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় স্বরূপে এক ঈশ্বরই সর্বত্র বিরাজমান। এ বিষয়টি তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকের একাদশ অনুবাকের একটি শ্রুতিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে। পঞ্চতত্ত্বে পঞ্চরূপে এক অনন্তের; উপাসনাকেই পঞ্চমত বলে
৭. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ভিত্তি
হিন্দু ধর্মের মূল দর্শনগুলো মানুষের জীবনকে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। ধর্ম (নৈতিক কর্তব্য), কর্ম (কাজ ও তার ফল), পুনর্জন্ম, মোক্ষ ইত্যাদির মাধ্যমে এটি মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধনের কথা বলে। গীতা, উপনিষদ, এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে জীবনধারণের জন্য নৈতিক দিকনির্দেশনা রয়েছে।
Weaknesses (দুর্বলতা)
প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো টিকে আছে, তাদের বেশিরভাগ পরিণতি আদি আমিরিকান বা আদি অষ্ট্রেলিয়ানদের মতো হয়েছে; কিন্তু হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি
তারপরেও আমাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে:
(১) রাজনৈতিকভাবে দুর্বল। অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃতি বা ধর্ম আব্রাহামিক ধর্মের মতো রাজনৈতিক এগ্রেসিভ নয়। হওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়, কিন্তু খুনীকে ঠেকাতে প্রয়োজনে তাকে খুন করাও জায়েজ। সেক্ষেত্রে খুনী পাগল, মাতাল নাকি ঠান্ডা মাথার খুনী তা বিবেচ্য নয়।
(২) হিন্দু ধর্মের সাধকেরা হিন্দু ধর্ম বা এই জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে রাজপথে দাড়ান না। তারা সংসার মুক্ত পুরুষ, তাঁরা যতটা ভূমিকা রাখতে পারেন, অতটা সংসারে থাকা ব্যক্তিরা পারেন না।
(৩)হিন্দুদের ভিতর বর্ণভেদ, জাতিভেদ এখনো প্রবল। যদিও মূল বৈদিক যুগে এটি পেশাভিত্তিক ছিল, পরবর্তী কালে এটি জন্মভিত্তিক হয়ে যায় এবং সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি করে। আজও কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা বিদ্যমান। এটি সঠিকভাবে নির্মূল করতে হবে। তবে, মনে রাখুন হিন্দুদের জাতিভেদ শিয়া, সুন্নী, আহমদিয়াদের মতো রক্তাক্ত নয়।
(৪) ধর্মীয় গ্রন্থের ভুল ব্যাখ্যাঃ অনেক সময় হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রসমূহকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়, যা ভুল ধারণার জন্ম দেয়। কিছু অংশকে অতিরিক্ত রক্ষণশীলভাবে গ্রহণ করা হয়, যা আধুনিক প্রগতিশীল চিন্তার সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে।
(৫) ইতিহাস জানাতে, জানতে অনীহা
(৬) নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসী নেতা, সংগঠনের অভাব। একই কারণে চেইন অব কমান্ডের অভাব।
(৭) লিডারশীপ তৈরির কোনো ইন্সটিটিউট, সংগঠন, ফান্ডের অভাব।
(৮) লিখিত, ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের অভাব।
(৯) দেবতার হাতে অস্ত্র আছে, কিন্তু ভক্তের হাতে নেই। আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র ধারণ আইনত এবং ধর্মত বৈধ এবং আত্মসম্মান রক্ষার্থে জরুরি।
Opportunities (সুযোগ)
১. বিশ্বব্যাপী প্রসারঃ যোগ, ধ্যান, আয়ুর্বেদ, এবং হিন্দু দর্শন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এগুলোর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের মূল আদর্শ ও জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
২. প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহারঃ সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ধর্মীয় শিক্ষাগুলি নতুন প্রজন্মের কাছে আরও সহজলভ্য করা সম্ভব।
Threats (হুমকি)
১. পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবঃ গ্লোবালাইজেশনের ফলে অনেক তরুণ প্রজন্ম পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে, যার ফলে তারা ধীরে ধীরে হিন্দু সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।
২. ধর্মীয় বিভ্রান্তি ও অপব্যাখ্যাঃ হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ধর্মীয় শিক্ষার অভাব থাকলে লোকজন সহজেই ভুল ব্যাখ্যার শিকার হয়।
৩. ধর্মান্তরণঃ কিছু ক্ষেত্রে, হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়। মধ্যযুগে ইসলামিক শাসনামলে এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনামলে হিন্দুদের ধর্মান্তরণের ঘটনা ঘটে। এখনো পূর্ণদ্যোমে চলমান।
উপসংহার
হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি যুগ যুগ ধরে টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও এর অস্তিত্ব বজায় থাকবে কারণ এটি যুগোপযোগী পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার, সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান, এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের মূল দর্শনকে আরও সুদৃঢ় করা সম্ভব।
==========
বৈদিক যুগ (Vedic Period)
বৈদিক যুগ বলতে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি সময়কাল বোঝানো হয় যখন বৈদিক সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। সাধারণত, এই সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অবধি ধরা হয়। এই সময়ের প্রধান উৎস হল চারটি বেদ— ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ।
বৈদিক যুগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
1. প্রাচীন বৈদিক যুগ (১৫০০–১০০০ খ্রিস্টপূর্ব) – এই সময়ে ঋগ্বেদ রচিত হয়। এটি মূলত আর্যদের কৃষিনির্ভর ও যাযাবর জীবনধারা প্রতিফলিত করে।
2. পরবর্তী বৈদিক যুগ (১০০০–৫০০ খ্রিস্টপূর্ব) – এই সময়ে অন্যান্য বেদ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ রচিত হয়। সমাজে বর্ণব্যবস্থা দৃঢ় হয় এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
---
বৈদিক যুগের আগে
বৈদিক যুগের পূর্ববর্তী সময় হলো সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা (খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০–১৯০০)। এটি মূলত ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও পাকিস্তানে বিস্তৃত ছিল। এ সময়ের শহরগুলি ছিল পরিকল্পিত, এবং কৃষি ও বাণিজ্য উন্নত ছিল। পরে এই সভ্যতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয় এবং আর্যদের আগমনের ফলে বৈদিক যুগ শুরু হয়।
---
বৈদিক যুগের পরে
বৈদিক যুগের পর শুরু হয় মহাজনপদ যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৬০০-৩২২), যেখানে বড় বড় রাজ্য (যেমন মগধ, কৌশল, অবন্তী, বৃজি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মৌর্য সাম্রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২২-১৮৫) উঠে আসে, যেখানে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, বিন্দুসার ও সম্রাট অশোক শাসন করেন।
এইভাবে, বৈদিক যুগ ছিল ভারতীয় সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, যা পরবর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
✪✪
ইতিহাস কেনো জানতে হবে?
আমেরিকার ওয়াসিংটন ডিসির দূতাবাস পাড়ায় গেলে দেখা যায় বেশিরভাগ দেশের দূতাবাসের সামনে সেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা-র ভাস্কর্য। ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে চার্চিলের, দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের সামনে নেলসন ম্যান্ডেলার, তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কামাল আতাতুর্ক এর ভাস্কর্য। কিন্তু একটা দেশের দূতাবাসের সামনে হিন্দু দেবী শ্রী সরস্বতীর মূর্তি। এবং দেশটি ভারত নয়, নেপালও নয়।
সেটি এমন একটি দেশ যে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। কিন্তু সেদেশের সর্বত্র হিন্দু সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। দেশটির পূর্বপুরুষরা ভারতীয় সংস্কৃতি তথা হিন্দু সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক ছিলেন। কালক্রমে সেখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা বসতি গড়ে তোলেন এবং তাদের সমাজ বিস্তৃতি লাভ করে। এই মুহূর্তে সেদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব এশিয়ার এই দেশে প্রাচীন হিন্দু ধর্মের প্রভাব সর্বত্র দেখা যায়। এই দেশের মুদ্রার নাম রুপাইয়া। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই মুসলিম দেশের নোটে হিন্দুদের দেবতা গণেশ- এর ছবি দেখা যায়। মুসলিম দেশ হলেও হিন্দু ধর্মের অনেক দেবদেবীকেই এই দেশের বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। হিন্দু পুরাণে বর্ণিত পাখি গরুড়- এর নামেই এই দেশের সরকারি বিমান সংস্থা "গরুড় এয়ারলাইন্স"- এর নামকরণ করা হয়েছে। এই দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সরকারি ম্যাস্কট হলো 'হনুমান'। প্রিমিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট – এর লোগো হলো গণেশ। রামায়ণ এবং মহাভারতের নানা ঘটনা নিয়ে রয়েছে অনেক ডাকটিকেট যাতে অর্জুন, কৃষ্ণ, হনুমান এবং মহাকাব্যের নানা দৃশ্য রয়েছে। লোকচিত্র, পাপেট, নাটক এবং ভাস্কর্য আকারে মহাভারত এবং রামায়ণের নানা ঘটনার চিত্রায়ন দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র পাওয়া যায়। রাম, কৃষ্ণ, অর্জুন, ঘটোৎকচসহ অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি ইন্দোনেশিয়ার হাটে, মাঠে, ঘাটে দেখা যায়। গোটা দেশ জুড়ে রয়েছে অজস্র হিন্দু মন্দির। বেশিরভাগ অফিস, দোকানের সামনে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হলেও এটি একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কোনও ধর্মই অন্য ধর্মের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। সব ধর্মের মানুষ তাদের উৎসব অনুষ্ঠান পালন করেন। একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশও নেন। আবার কিছু কিছু উৎসব বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ানরা বলে, 'রাম আমাদের পূর্বপুরুষ এবং ইসলাম আমাদের বিশ্বাস'।
সারা বছর ধরে, সারা ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ওয়াং কুলিত নামক পাপেট শো এবং ওয়াং ওং নামক নাচের অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয় যা আসলে রামায়ণ এবং মহাভারত নানা ঘটনা থেকে নেওয়া। শিল্পটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছিল এবং উড়িষ্যার দুটি শিল্প ফর্ম- রাবণ ছায়া পাপেট থিয়েটার এবং ছৌ নৃত্য থেকে বিকশিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া যখন স্বাধীনতা লাভ করলো তখন তাদের জাতির পিতা সুকর্ণ যিনি নিজে মুসলিম হয়েও রামায়ণকে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির অংশ হিসাবে বিবেচনা করেন। একবার তিনি জওহরলাল নেহেরুকে বলেছিলেন, "আমার ধর্ম ইসলাম কিন্তু রামায়ন আমার সংস্কৃতি।"
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়ার নীতি হচ্ছে দেশটির সীমানার মধ্যে বসবাসকারী এবং বিদ্যমান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মানুষের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই নীতি বিশেষভাবে ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের পাঁচটি মূলনীতির মাধ্যমে করা হয়েছে, যাকে পঞ্চশীলা বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি, সুকর্ণ পঞ্চশীলার আদেশটি যখন বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে ইন্দোনেশিয়া এমন একটি জাতি হওয়া উচিত যা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে একত্রিত করে। এবিষয়টি সুকর্ণ গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন যে, "ইন্দোনেশিয়ার আধ্যাত্মিক জীবনকে এর সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত উপাদান থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।"
মূলত সুকর্ণ নামটিও মহাভারতের কর্ণ চরিত্র হতে নেওয়া। সুকর্ণের পিতা কর্ণের চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে কর্ণের কৌরবের পক্ষ নেওয়া মেনে নিতে পারেন নি। তাই কর্ণের আগে 'সু' যোগ করে নাম রাখেন সুকর্ণ।
বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি ইন্দোনেশিয়া যে সম্মান দেখায় এবং এর অতীত ইতিহাস দেশটিকে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সহনশীলতার দুর্গে পরিণত করেছে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হলো একটি জাতির, একজন ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের শিকড়।
আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি বহমান নদীতে শ্যাওলার মতো। আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। দুনিয়াতে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিজের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য, ইতিহাস সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।
মাইকেল মধুসুধন দত্ত ইংরেজিতে যে কাব্য রচনা করেছিলেন তা তার সমসাময়িক অনেক ইংরেজ সাহিত্যিকের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট হলেও ইংরেজরা তা পাত্তা দেয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠা পেলেন নিজ মাতৃভাষা বাংলাতে কাব্য রচনা করে।
রামায়ন, মহাভারত আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। একে আপন করে নিতে হবে। তাতেই আমাদের গৌরব।
সংস্কৃতির মধ্যে যারা ধর্ম, বিজ্ঞানের মধ্যে যারা ধর্ম খুঁজতে বলে তারা আসলে চায় না- আমরা আমাদের আত্মপরিচয়ে বাঁচি। ওরা চায় আমরা যেনো শ্যাওলার মতো ভেসে যাই। বিশ্বদরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়। তারা ধর্মের আফিম খাইয়ে আমাদের পরিণতি পাকিস্তান বা আফগানের মতো করতে চায়। কিন্তু যে দেশের স্বাধীনতায় হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-জনজাতি-নৃজাতি-উপজাতি সবার রক্ত এই পবিত্র মাতৃভূমিতে মিশে আছে সে দেশকে কি আমরা শেওলার মতো ভেসে যেতে দেবো??
Bertolt Brecht বলছেন—‘সবচেয়ে উঁচু দরের অশিক্ষিত হলেন রাজনৈতিক অশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি শুনতে পান না, কথা বলেন না, রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে অংশ নেন না। তিনি জীবনের মূল্য, মটরশুঁটি, মাছ, ময়দা, ঘর ভাড়া, জুতা ও ওষুধের মূল্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ সবই নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। রাজনৈতিক অশিক্ষিত ব্যক্তি এত বোকা যে, তিনি তার বুক স্ফীত করে বলেন, তিনি রাজনীতিকে ঘৃণা করেন। এ ব্যাপারে তিনি গর্বিত বোধ করেন। পতিত মূঢ় সেই ব্যক্তি জানেন না, তার রাজনৈতিক অজ্ঞতা থেকে পতিতাবৃত্তি, পরিত্যক্ত শিশু ও সবচেয়ে খারাপ চোর, খারাপ রাজনীতিক, জাতীয় ও বহুজাতিক দুর্নীতিবাজ ও বিদ্বেষপূর্ণ সংস্থাগুলোর জন্ম হয়।’
রাজনৈতিক নিরক্ষরতা আসে অন্ধকার ইতিহাসের পথ বেয়ে। ইতিহাসের প্রতি উদাসীনতা ও তার অবমূল্যায়ন পুরো জাতির আত্মহত্যার সামিল। নৈতিকভাবে প্রত্যেকটি জাতি ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধ। আমাদের রয়েছে ৫ হাজার বছর বা তারও বেশি সময়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য।
বিশিষ্ট রুশ ইতিহাসবদি ভ্যাসিলি কুচেভস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করতে চাই। "ফুলকে অন্ধরা দেখছে না, এর জন্য ফুল দায়ী নয়। মানুষের অন্ধত্বই দায়ী।… এমন কি যারা ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেয় না বা নিতে চায় না, তাদেরকেও ইতিহাস শিক্ষা দেয়। ইতিহাসকে খাটো করে দেখা বা অবজ্ঞা করার জন্যও এটি তাদেরকে শিক্ষা দেয়।"
নিজেকে সত্যিকার অর্থে আধুনিক মানুষ গড়ে তুলতে চাইলে ইতিহাস চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
✪✪
আমাদের ইতিহাস কি?
মুলত সুলতান বা মুসলিমরা আসার আগ পর্যন্ত ভারতবর্ষ নিজেদের রাজা দ্বারা শাসিত ছিলো। সুলতান পূর্ব আমলে ভারত এক সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের অধিকারী ছিল। এই সময়কালকে সাধারণত প্রাচীন ও প্রাক-মধ্যযুগীয় ভারতের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে ভারতের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে।
১. প্রাচীন ভারতের প্রধান রাজবংশ ও শাসকগণ
(ক) মহাজনপদ ও মগধ সাম্রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ – ৪র্থ শতক)
ভারতের প্রথম রাজনৈতিক বিকাশ ঘটে মহাজনপদগুলোর মধ্যে, যেখানে মগধ রাজ্য সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
মগধের শাসকরা যেমন বিম্বিসার ও অজাতশত্রু রাজ্য সম্প্রসারণ করেন।
এই সময়েই গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের জন্ম হয়, যা বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
(খ) মউর্য সাম্রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ – ১৮৫ খ্রিস্টপূর্ব)
চন্দ্রগুপ্ত মউর্য মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮ – ২৩২) বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার শাসনকালেই ভারতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রসারণ ঘটে।
অশোকের শাসনামলে ভারতব্যাপী সড়ক ও বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
(গ) গুপ্ত সাম্রাজ্য (৩২০ – ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ)
গুপ্ত যুগকে ভারতের "সোনালি যুগ" বলা হয়।
সমুদ্রগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য ভারতীয় সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, গণিত ও সাহিত্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।
আর্যভট্ট এই সময়েই শূন্যের ধারণা ও জ্যোতির্বিদ্যায় অবদান রাখেন।
কালিদাস সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
২. ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিকাশ
বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের প্রসার ঘটে।
অশোকের শাসনামলে বৌদ্ধধর্ম চীন, শ্রীলঙ্কা ও মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
গুপ্ত যুগে হিন্দু ধর্ম ও দেব-দেবীর পূজা আরও জনপ্রিয় হয়।
৩. বাণিজ্য ও অর্থনীতি
মৌর্য ও গুপ্ত আমলে ভারতীয় সমুদ্র বাণিজ্য চীন, রোমান সাম্রাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বিস্তৃত হয়।
সিল্ক রোড ও মালাক্কা প্রণালী হয়ে বাণিজ্য চলত।
ভারতের প্রধান বাণিজ্যপণ্য ছিল মসলা, রেশম, সুতি কাপড় ও মূল্যবান পাথর।
৪. স্থাপত্য ও বিজ্ঞান
সাঁচী, অজন্তা-ইলোরা, নাগার্জুনকোন্ডা ইত্যাদি স্থাপত্যে বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়।
আয়ুর্বেদ, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ধাতুবিদ্যা এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানচর্চার অংশ ছিল।
৫. সুলতান পূর্ব ভারতের অবস্থা (রাজপুত ও অন্যান্য রাজবংশ)
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর রাজপুত রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য, চোল সাম্রাজ্য ও সেন রাজবংশ শাসন করে।
রাজপুত রাজারা ভারতের উত্তর ও পশ্চিম অংশে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পাল সাম্রাজ্য বাংলায় বৌদ্ধধর্মকে রক্ষা ও প্রসারিত করে।
চোল সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতে সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটায়।
এই সমৃদ্ধ ইতিহাস পরবর্তী সময়ে সুলতানি আমলের ভিত্তি তৈরি করে।
সুলতান পূর্ব ভারতের স্থাপত্য (Architecture)
সুলতান পূর্ব ভারতের স্থাপত্যকে সাধারণত তিনটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়: মৌর্য স্থাপত্য, গুপ্ত স্থাপত্য এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্য।
১. মৌর্য স্থাপত্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-১৮৫)
মৌর্য যুগে রাজা অশোক বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্তূপ ও স্তম্ভ নির্মাণ করেন।
অশোক স্তম্ভ:
সারা ভারতে অনেক স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত সারনাথের সিংহস্তম্ভ।
এই স্তম্ভ ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
সাঁচী স্তূপ:
মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত এই স্তূপ বৌদ্ধ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।
এতে বুদ্ধের জীবনচিত্র ও ধর্মীয় নকশা খোদাই করা আছে।
গুপ্ত যুগকে "সোনালি যুগ" বলা হয়, কারণ এই সময় সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ব্যাপক উন্নতি লাভ করে।
গোপুর ও মন্দির স্থাপত্য:
এই সময় প্রথম হিন্দু মন্দির নির্মিত হয়।
বিখ্যাত উদাহরণ: দশাবতার মন্দির (দেওগড়), ভীতগাঁও মন্দির, উদয়গিরি গুহা।
অজন্তা ও ইলোরা গুহা (মহারাষ্ট্র):
এখানকার গুহাগুলোতে অসাধারণ চিত্রকলা ও স্থাপত্যশৈলীর সমাহার দেখা যায়।
এগুলো মূলত বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষাদানের জন্য নির্মিত হয়।
৩. দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্য (চোল, পল্লব ও চালুক্য আমল)
বৃহদীশ্বর মন্দির (১০০০ খ্রিস্টাব্দ, তাঞ্জোর, চোল রাজবংশ):
বিশাল গম্বুজ ও অলংকৃত স্তম্ভ বিশিষ্ট এই মন্দির স্থাপত্যশৈলীর উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
মামল্লপুরমের রথমন্দির ও কৈলাশনাথ মন্দির:
পল্লব রাজারা এই মন্দিরগুলোর নির্মাতা।
এটি পাথরের গায়ে খোদাই করা অনন্য মন্দির।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের অবদানঃ
১. গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান
আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০ খ্রিস্টাব্দ):
শূন্য (০) ও দশমিক পদ্ধতির ব্যবহার করেন।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণন করে—এই ধারণা প্রদান করেন।
"আর্যভট্টীয়" গ্রন্থে ত্রিকোণমিতি ও বীজগণিতের আলোচনা রয়েছে।
ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮-৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ):
শূন্যকে আলাদা সংখ্যারূপে গণ্য করেন ও ঋণাত্মক সংখ্যার ধারণা দেন।
"ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" গ্রন্থে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতের তথ্য লিপিবদ্ধ করেন।
২. চিকিৎসাশাস্ত্র ও আয়ুর্বেদ
চরক (২য় শতক):
চরক সংহিতা গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে শরীরবিদ্যা ও ওষুধের বিস্তারিত বিবরণ আছে।
সুশ্রুত (৪র্থ শতক):
তাকে বিশ্বের প্রথম শল্যচিকিৎসক বলা হয়।
সুশ্রুত সংহিতা গ্রন্থে অস্ত্রোপচার, প্লাস্টিক সার্জারি ও চিকিৎসা পদ্ধতির বিবরণ রয়েছে।
৩. ধাতুবিদ্যা ও প্রকৌশল
কুতুব মিনারের লৌহস্তম্ভ (৪র্থ শতক):
এটি দিল্লির মেহরৌলিতে অবস্থিত এবং আজও মরিচা ধরে না।
এটি প্রমাণ করে, গুপ্ত আমলে ধাতুবিদ্যায় ভারতের অগ্রগতি হয়েছিল।
৪. কৃষি ও জল ব্যবস্থাপনা
ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ, কূপ ও জলাধার তৈরি হয়।
চোল রাজারা উন্নত সেচব্যবস্থা চালু করেন, যা কৃষিতে বিপ্লব ঘটায়।
✪✪
প্রাচীন ভারতের ১০টি বিস্ময়কর তথ্য:
১০. ভারতের গণিতজ্ঞ প্রথমবারের মতো ‘পাই’-এর মান নির্ণয় করেন (৮০০ খ্রিস্টপূর্ব)
৮০০ খ্রিস্টপূর্বে, বিশিষ্ট ভারতীয় গণিতজ্ঞ বোধায়ন "পাই"-এর মান গণনা করেছিলেন এবং একই সাথে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের ধারণাও ব্যাখ্যা করেছিলেন। আর্যভট্ট ও পিথাগোরাসের আগেই বোধায়ন "পাই"-এর সঠিক মান নির্ণয় করেন। তাকে শুল্ব সূত্রের (Sulba Sutra) প্রথম লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে পাই-এর মান, পিথাগোরাস উপপাদ্য, ২-এর বর্গমূল এবং বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৯. যোগব্যায়াম (Yoga) ৫,০০০ বছর আগে ভারতে উৎপত্তি লাভ করে
যোগব্যায়াম শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের একটি রূপ যা ব্যক্তির সুস্থতা এবং স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ৫,০০০ বছর আগে প্রাক-ঋগ্বেদীয় যুগে ভারতে উদ্ভূত হয়েছিল। ঋগ্বেদে যোগব্যায়ামের উল্লেখ রয়েছে এবং এটি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থানের সময় আরও জনপ্রিয় ও বিকশিত হয়।
৮. ভারতের আয়ুর্বেদ ৬,০০০ বছর আগের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা
আয়ুর্বেদ হল ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা যা মধ্যযুগীয় সময়ে বিকশিত হয়। আয়ুর্বেদের উৎপত্তি খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ সালের কাছাকাছি বলে মনে করা হয়। চিকিৎসক চরক ও সুশ্রুত আয়ুর্বেদে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
৭. ভারত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বে দস্তা নিষ্কাশনের প্রযুক্তি জানত
ভারত ধাতুবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশ্বের পথপ্রদর্শক ছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালে সিন্ধু সভ্যতার মানুষরা দস্তা নিষ্কাশনের পদ্ধতি জানত। রাজস্থানের জওয়ারে দস্তার খনিগুলোর অস্তিত্ব ৬ষ্ঠ খ্রিস্টপূর্ব শতকে দেখা যায়।
৬. বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উৎপত্তি ভারতে (৫০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্ব)
বিশ্বের দুটি প্রধান ধর্ম – বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম যথাক্রমে ৫০০ ও ৬০০ খ্রিস্টপূর্বে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়টিকে ‘শ্রমণ আন্দোলনের’ সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
৫. ভারত ২৬০০ বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারি জানত
বিশিষ্ট চিকিৎসক সুশ্রুত ১২৫টি অস্ত্রোপচার যন্ত্রের সাহায্যে ৩০০টিরও বেশি অস্ত্রোপচার করতেন। তিনি প্লাস্টিক সার্জারির পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
৪. আর্যভট্ট ৫ম শতকে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন
ভারতের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট প্রথম সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং তার বিখ্যাত গ্রন্থ "আর্যভটীয়" রচনা করেন।
৩. ৬,০০০ বছর আগে সিন্ধু নদীতে নৌচালনার বিকাশ ঘটে
প্রথম নৌপরিবহন পদ্ধতি সিন্ধু নদীতে ভারতীয়রা বিকশিত করেছিল। "নেভিগেশন" শব্দটি সংস্কৃত "নৌগতিহ" শব্দ থেকে এসেছে।
২. শূন্য (০) এবং দশমিক পদ্ধতির আবিষ্কার ভারতে
গুপ্ত যুগে (৫ম শতক) ভারতেই প্রথম শূন্যের ধারণা তৈরি হয় এবং আধুনিক দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বিকাশ ঘটে।
১. সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা
সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা বিশ্বের তিনটি প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে একটি, যা ৩৩০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বে বিদ্যমান ছিল। এটি উন্নত নগর পরিকল্পনা, বিজ্ঞান, গণিত এবং প্রযুক্তির জন্য পরিচিত।
=====
https://kanjik.net/chola-dynasty-and-its-bengali-ancestry/
মহারাজা বিক্রমজিৎ ঘোষ – বাঙ্গালার হিন্দু যোদ্ধা যিনি দিল্লির সুলতানদের সতেরো বার পরাজিত করেন
https://kanjik.net/bengals-triumphal-success-bikramjit/
ইতিহাস লেখার রাজনীতি ও ভারতীয় গণিতের ইতিহাস
https://kanjik.net/political-squabbles-and-indian-mathematics/
আমার আব্দুল ওমন নয়। (লাভ জিহাদ)
https://hindupersecutionbd.blogspot.com/2022/05/blog-post_59.html
ফেসবুক ব্যবহারে সতর্কতা কি কি?
✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪
লজিক্যাল ফ্যালাসি - সুযুক্তি বনাম কুযুক্তি
পারস্য কবি শেখ সাদি বলেন, "কোনো জ্ঞানী যদি মূর্খের মোকাবেলায় পড়ে, তবে তার কাছ থেকে সম্মানের আশা করা ঠিক নয়। আর কোনো মূর্খ যদি জ্ঞানী লোকের মোকাবেলায় জিতে যায়, তবে আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ পাথরের আঘাতে মতির বিনাশ সহজেই হয়ে থাকে।"
অনেকেই আছে যে তর্কের ভেতর যুক্তির অপপ্রয়োগ বা Fault reasoning করে। কোনো দাবিকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য অসঙ্গত বা অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি ব্যবহার করা করে। এটাই Logical fallacy বা কুযুক্তি।
০১. Majority Dogma/ Appeal to popularity/ Bandwagon
আরেকটা উদাহরণ: ওই সিনেমাটা ভালো। কারন সিনেমাটা প্রচুর মানুষ দেখেছে।
০২। Ad Hominem
উদাহরণ ১ : সে যেই নতুন আইনটির প্রস্তাব করলো, সেটা হাস্যকর৷ কারন সে নিজেই একটা গর্দভ।
উদাহরণ ২: তোমার যুক্তি ভুল, কারণ তুমি নিজেই জীবনে কোনো সফলতা অর্জন করতে পারোনি।
[ এখানে ব্যক্তিকে আক্রমণ করে মূল প্রসঙ্গটিকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে । ]
০৩। Straw Man
এই কুযুক্তিটা হয় , যখন মূল প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে সেই প্রসঙ্গের সাথে অনেকটা সাথে মিল রেখে ভিন্ন প্রসঙ্গ টানা হয়। মূল বক্তব্যকে বিকৃত করে আরেকভাবে উপস্থাপন করা হয় , এতে করে যুক্তিতে বিরোধী পক্ষ নিজের মতন করে জিতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
উদাহরণ ১: সে বলছে, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা উচিত। মানে সে মনে করে মানুষকে শিল্পায়নের থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।"
উদাহরণ ২: যে ব্যক্তি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পক্ষে, তার মতে - আমাদের সবাইকে পুরোপুরি নিরামিষ ভোজী হতে হবে।
০৪। Appeal to Ignorance
এই কুযুক্তিটির দুটি অংশ। যথা - একটা বিষয় সত্য, কারন সেটা কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। একটা বিষয় মিথ্যা, কারন কেউ সেটা সত্য প্রমাণ করতে পারেনি।
তবে সাধারণত প্রথম অংশটাই বেশি ব্যবহার করা হয়। কারন জগতের সবকিছুর অস্তিত্ব প্রথমে দাবি করা, পরে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু ধার্মিকরা কোনো কিছুর অস্তিত্বের দাবি করার পর অনস্তিত্বের প্রমাণ করতে বলে। এতে করে নাকি তাদের অস্তিত্বের দাবিটা প্রমাণিত হবে, যেটা হাস্যকর।
উদাহরণ ১: কোনো প্রমাণ নেই যে জ্বীন নেই , তাই অবশ্যই জ্বীন আছে।
উদাহরণ ২: আমি প্রমাণ করতে পারবো না যে উড়ন্ত ঘোড়ার অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন যে উড়ন্ত ঘোড়ার অস্তিত্ব নেই?
[ এখানে দাবিটা আপনার, সুতরাং সেটা প্রমাণ করার দায়িত্বটাও আপনার। ]
০৫। False Dilemma
এবার আসুন আরেকটা পরিস্থিতি বর্ণনা করছি। সামনে নির্বাচন। এক প্রার্থী তার নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে বলছেন, " আপনি যদি শান্তির পক্ষে হন তাহলে আমাদেরকে ভোট দিন। আর, যদি বেহেল্লাপনা, দুর্নীতি, মাদকাশক্তি ইত্যাদির পক্ষে হন তাহলে ওদেরকে ভোট দিন।" অর্থাৎ আপনাকে ২টা অপশন আগে থেকেই ঠিক করে তার সুবিধামতো নির্দেশনায় চালিত করার অপচেষ্টা। একে বলে False Dilema.
অর্থাৎ, যেকোনো বিষয়ে দুটি বিকল্প দেখানো হয়, অথচ সেখানে অনেকগুলো বিকল্প থাকতে পারে।
আরেকটি উদাহরণ : আপনি হয় আমাদের দলের সমর্থক , নয়তো আমার শত্রু।
[এখানে আপনি চাইলে ওই দলের শত্রু বা সমর্থক কোনোটাই না হয়ে বিকল্প হিসেবে নিশ্চুপ থাকতে পারেন। অথচ আপনাকে কেবল দুইটা বিকল্প দেখানো হচ্ছে, যেন আর কোনো বিকল্প নেই।]
০৬। Slippery Slope
এটা অনেকটা বাস্তবে পিছলে পড়ার মতনই কুযুক্তি। একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কি কি ঘটতে পারে, সেসব বলতে বলতে একটা চূড়ান্ত ফলাফলে পৌঁছে যাওয়া। অথচ সেসব ঘটার পিছনে ভালো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনা।
উদাহরণ ১: যদি ছেলে-মেয়েদের একসাথে মেলামেশা বা বন্ধুত্ব করার অনুমতি দেই। তবে তারা স|ঙ্গম করবে। একসাথে জুয়া খেলবে, মদ খেয়ে পার্টি করবে।
উদাহরণ ২: শিক্ষার্থীদের একদিন ছুটি দিলে, পরবর্তীতে পুরো বছর ছুটির দাবি উঠাবে।
০৭। Circular Reasoning / Begging to the question
বক্তার বক্তব্য ঘুরেফিরে একই কথাতে চলে আসে, কিন্তু উপসংহারে পৌছাতে পারেনা। এটা করা হয়, যখন বক্তার কাছে যুক্তি প্রমাণের অভাব থাকে।
উদাহরণ:
-ধর্মগ্রন্থের প্রতিটা কথা সত্য।
-ধর্মগ্রন্থের কথাগুলো যে সত্য, এটার প্রমাণ কি?
- এসব কথা ইশ্বর নিজে বলেছেন, তাই সত্য।
-ইশ্বরের কথা সত্য, এটার প্রমাণ কি?
-কারন ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে যে ইশ্বরের কথা সত্য। তাই সত্য।
০৮। Hasty Generalization
ছোট একটা ঘটনার উপর ভিত্তি করে বড় সিদ্ধান্তে আসা।
উদাহরণ ১: আমি দুজন নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিগারেট পান করতে দেখেছি। সুতরাং দুনিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীগণ সিগারেট পান করে।
উদাহরণ ২: আজ একজন রিক্সাওয়ালা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো। সুতরাং, দুনিয়ার সব রিক্সাওয়ালা খারাপ।
০৯। Red Herring
মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে আনা, যেখানে দুটো প্রসঙ্গের কোনো মিল নেই।
উদাহরণ ১: আপনি কেন সবসময়ই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন, যেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা গংগীবাদ।
উদাহরণ ২: পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু আসলে আমাদের সুশাসন নিয়ে চিন্তা করা উচিত।
এই কুযুক্তিটির সাথে অনেকেই Straw man fallacy এর সাথে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। তাই পার্থক্যটা বলে দেওয়া ভালো। Red herring কুযুক্তিতে দুটো প্রসঙ্গের কোনো মিল থাকেনা। একদম সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়।
কিন্তু Straw man কুযুক্তিতে দুটো বিষয়ে সামান্য মিল থাকে। বক্তা মূলত মূল বক্তব্যকে বিকৃত করে নিজের মনমত। তখন বিকৃত করা প্রসঙ্গের সাথে মূল প্রসঙ্গের সামান্য মিল রয়ে যায়৷
আরেকটু উদাহরণ দিয়ে বলি।
রেড হেরিং ফ্যালাসী -
একজন ছাত্র বলেন, আমি বাড়ির কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
এর উত্তরে শিক্ষক বলেন, তুমি কি জানো বিশ্বে হাজার হাজার শিশু ক্ষুধার্ত আছে?
[ এখানে ছাত্র বললেন, বাড়ির কাজের কথা। কিন্তু শিক্ষক হাজার হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর কথা বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। এখানে দুটি প্রসঙ্গের কোনো মিল নেই। ]
স্ট্রম্যান ফ্যালাসী -
এক পক্ষ বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় সুলভ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
অপর পক্ষ তার যুক্তিকে বিকৃত করে বলে , তার মানে, তুমি চাইছো যে সরকার পুরোপুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে সব ব্যক্তিগত হাসপাতাল বন্ধ করে দিক।
[ এখানে বক্তার হাসপাতালের প্রসঙ্গের সাথে মিল রেখে আরেকটা প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। প্রথম প্রসঙ্গটা বিকৃত করে একটা ভিন্ন রূপের প্রসঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। প্রথম প্রসঙ্গের মূল বক্তব্যকে এড়িয়ে গেছে, যাতে করে মূল প্রসঙ্গের কথাটাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করা যায়। ]
১০। Appeal to Authority
একটা বিষয় সত্য৷ কারন অমুক লোক বলেছে, এটা সত্য।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরী। অমুক লোকটি মূল প্রসঙ্গের সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা! যেমন একজন বিজ্ঞানী একটা কথা বললে , সেটার একরকম জোর থাকে। বিজ্ঞানী অবশ্যই নানান গবেষণার ভিত্তিতেই বলেন উনার কথাগুলো। কিন্তু একই কথা যদি আপনার বড় ভাই ইলিয়াস বলে এবং আপনি সেই বলার ভিত্তিতে বিষয়টাকে সত্য বলে ভেবে নেন, তখন সেটা হবে Appeal to authority fallacy । কেবল বলেছে বলেই সেটা সত্য হবেনা, সেটার জন্য প্রমাণ দেখাতে হবে। এখানে বিজ্ঞানীর কথাটা চাইলেই প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু আপনার বড় ভাইয়ের কথাটা প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই। তবে যদি প্রমাণসহ কথাটা বলে, তাহলে আর ফ্যালাসী হবেনা।
উদাহরণটা আলাদা করে আর দিচ্ছি না, যেহেতু লেখার ভেতরেই দিলাম।
১১। Appeal to Emotion
আবেগের আশ্রয় করে যুক্তিতে জিততে চাওয়া।
উদাহরণ ১: আপনি যদি গরীব মানুষদের দান না করেন, তার মানে দাড়ায় আপনি একজন স্বার্থপর মানুষ।
[ একজন মানুষের দান না করার পিছনে অনেক কারন থাকতে পারে। ]
১২। Non Sequitur
বক্তা কথা বললো একরকম , কিন্তু উপসংহার দিলো আরেক রকম।
উদাহরণ ১: সে অনেক বই পড়েছে, তাই সে ভালো দৌড়াতে পারে।
[ এখানে বই পড়ার সাথে ভালো দৌড়ানোর কোনো সম্পর্ক নাই। ]
.১৩। Tu Quoque
বক্তার ব্যক্তিগত আচরণ বা অভ্যাসকে তুলে ধরে তার যুক্তির প্রতি আক্রমণ করা হয়।
উদাহরণ - তুমি সিগারেট খাও, তাই তোমার বক্তব্য যে সিগারেট খাওয়া ভালো নয় —এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
১৪. False Analogy
দুটি বিষয়ের মধ্যে তুলনা করে উপসংহার টানা , যেখানে ওই দুটি বিষয়ের মধ্যে আদতে সমতুল্য কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।
উদাহরণ ১: গাছের পাতা ঝরে গেলে গাছ মারা যায়, তাই মানুষের যদি কোনো অভ্যাস পরিবর্তন না হয় তবে জীবনে সফলতা অর্জন করা যাবে না।
উদাহরণ ২: একজন চিত্রশিল্পী ও একজন সংগীতজ্ঞের কাজ তুলনা করা যায়। একজন ভালো চিত্রশিল্পীর কদর না করলে একজন সংগীতজ্ঞের সুরও সঠিক হবে না।
১৫. Appeal to Nature
প্রকৃতিতে আছে বলেই একটা কাজ সঠিক, এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উদাহরণ ১: এই ঔষধটি ১০০% প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, তাই এটি অবশ্যই নিরাপদ এবং কার্যকর।
পরিশেষে,
তর্ক করার সময় খেয়াল করে প্রতিটা কথা বলবেন। যাতে করে আপনার কথাবার্তায় কোনোরকম কুযুক্তি না চলে আসে । উল্লেখিত কুযুক্তিগুলো মাথায় ভালোমত গেঁথে নিন। ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪
শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে আমরা নানাক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিত কি না?
কোন ধরনের নির্যাতন ঘটছে?
হিন্দুদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি?
এক হবার প্রসেস কি?
ছাত্র, সংসারী, সাধুদের দায়িত্ব কেমন হবে?
ইতিহাসের নিরিখে হিন্দুদের ভূমিকা?
আমাদের ভুলগুলো।
ধর্ম হিসাবে সনাতন ধর্ম কেমন? কেনো??
পঞ্চমতে আরাধনা।
আস্তিক-নাস্তিক ধারণা। নাস্তিকরা কি সনাতনী নয়?
তস্য শিখায়া মধ্যে পরমাত্মা ব্যবস্থিতঃ। স ব্রহ্ম স শিব স হরিঃ সোেহক্ষরঃ পরম স্বরাট।।
"জীবের হৃদয়ে পরমাত্মা অবস্থিত। তিনিই ব্রহ্ম, তিনিই শিব, তিনিই হরি, তিনিই ইন্দ্র। তিনি অক্ষর, স্বয়মদীপ্ত রাজা, তিনিই জীবের শ্রেষ্ঠ গতি।"
প্রত্যেক পূজা সহ, বিবাহ, শ্রাদ্ধ সকল সংস্কার বিধির পূর্বে প্রথমে পঞ্চদেবতার বিধিবৎ পূজা করতে হয়। পরে প্রধান পূজা করতে হয়। অর্থাৎ যে দেবতার পূজা, তাঁর পূজা করতে হয়। পঞ্চমতের প্রতিনিধিত্বকারী পঞ্চদেবতা হলেন : গণেশ, সূর্য, বিষ্ণু, শিব এবং আদ্যাশক্তি দুর্গা। পরমেশ্বরের সাকার এ পঞ্চরূপের পঞ্চদেবতাকে কেন্দ্র করেই শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য এবং বৈষ্ণব সনাতন এ পঞ্চমত প্রতিষ্ঠিত। এ পঞ্চমতের যে কোন একটি মতকে কেন্দ্র করেই ঈশ্বরের পথে অগ্রসর হয়ে মুক্তি পাওয়া যায়।
হিন্দুধর্ম:
১. হিন্দুধর্মের প্রাচীনত্ব
২. হিন্দুধর্মের প্রাসঙ্গিকতা
৩. হিন্দুধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ
৪. প্রকৃতি পূজা ও সর্বপ্রাণবাদ
৫. দেবদেবী ও ঈশ্বর
৫. হিন্দুধর্মের প্রধান শাস্ত্রসমূহ এবং দর্শন
৬. হিন্দুধর্মের বিভিন্ন মত ও সম্প্রদায় ও তাঁদের মধ্যে সমন্বয়
৭. বর্ণবাদ ও কৌলিন্যপ্রথা
৮. কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ
৯. অবতারতত্ত্ব ও মহাপুরুষ
১০. যোগাসন ও প্রাণায়াম
অন্যান্য ধর্ম:
১. ইসলাম ধর্ম ( বিষয় ভিত্তিক আলোচনা)
২. খ্রিস্টান ধর্ম
৩. বৌদ্ধ ধর্ম
৪. তুলনামূলক ধর্ম বিশ্লেষণ
সচেতনতা:
১. ধর্মান্তর ও ধর্মান্তর রোধ
২. সংক্ষেপে ভারতে মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস
৩. সংক্ষেপে দেশভাগের ইতিহাস
৪. সংক্ষেপে বাংলাদেশের ইতিহাস
৫. মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালের ইতিহাস
৬. সংঘবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা
৭. হিন্দুর সমস্ত ক্ষেত্রে সুদীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ
৮. হিন্দুদের বসবাসের জন্য নিরাপদ গ্রাম/মহল্লা গড়ে তোলা
৯. মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা (গীতাস্কুল গড়ে তোলা, সমবায় সমিতি, দুস্থদের সহয়তা, বেকারত্বদূরীকরণ)
৯. অহিন্দুদের সাথে সম্পর্ক
১০. আগামীর নেতৃত্ব গড়ে তোলা
১১. চেতনাসমৃদ্ধ মানুষ তৈরি
১২. জাতি ও ধর্ম রক্ষার্থে হিন্দু শাস্ত্রের নির্দেশনা (আততায়ীকে ক্ষমা না করা, সঙ্ঘচ্ছধ্বং.., যদা যদা, স্বধর্মে নিধনং)
১৩.
ব্যবহারিক:
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত কিনা?
হিন্দুদের সুরক্ষা বা ভালো ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী করতে পারি?