সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজা পুরু এবং রাজা আলেক্সান্ডার যুদ্ধ

"রাজার সাথে, রাজার মতো"
লিখেছেনঃ Prithwi Sen


ইরান বিজয়:
●●●●●●●●●●●●●
বিজয়ৎসব চলছে। সেনা ছাউনি জুড়ে আজ সবাই উৎসবের মেজাজে। জায়গায় জায়গায় ঝলসানো হচ্ছে মাংস। অঢেল মদ। রয়েছে ফুর্তির সব ব্যবস্থা। 
সেনারা কেউ নেই আজ সতর্ক। সবাই আজ ঢিলেঢালা। 
সেনাবাহিনী উৎসবে মত্ত থাকলে কি হবে ছুটি নেই সেনাপতিদের। 
সবাই এখন বসে রয়েছে আলেক্সান্ডার এর সাথে। 
চলছে চুলচেরা হিসেব। কোথায় কোথায় হয়েছে ভুল। সেই ভুল সংশোধন করার জন্য নেওয়া হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা। 
পাশাপাশি চলছে হিসেব কত সম্পদ পাওয়া গেল। মোটকথা সম্পদ যা পাওয়া গেল তাতে এই যুদ্ধে লাভ ঠিক কতটা হল। 
তবে লাভ হয়েছে দারুন বিশাল নৌবাহিনী আজ আলেকজান্ডার এর হাতে। পাওয়া গেছে অনেক সমর্থ ক্রীতদাস। অর্থ পাওয়া গেছে মোটামুটি। সেদিক দিয়ে দেখলে মোটামুটি লাভ ক্ষতির পরিমান প্রায় সমান সমান হল এই যুদ্ধে...

লক্ষ্য:
◆◆◆◆◆◆◆
মুখের ভাবে গাম্ভীর্য রাখলেও আলেকজান্ডার বেশ খুশী।  আর্থিক লাভ তার যে খুব একটা প্রয়োজন তা নয়
তার লক্ষ্য যে আলাদা। তিনি হতে চান বিজয়ী। যে সে বিজয়ী নন... 
সমগ্র পৃথিবীর বিজয় তিনি হাতে চান। হতে চান পৃথিবীর একচ্ছত্র সম্রাট।
এরপরে তার পুজো হবে ট্রয় যুদ্ধ বিজেতা আকিলিস এর মত, নয়ত হারকিউলিস (হেরাক্লিন) এর মত বীর দেবতা হয়ে তিনি চান পুজো পেতে ভবিষ্যৎ এর গ্রীসের প্রতিটি সন্তান আলেকজান্ডার এর নাম শুনলেই যেন শ্রদ্ধায় নত করে মাথা।
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শ্রদ্ধা পেতে তার মাঠ তিনি তৈরি করেছেন যখন আক্রমন করেন পারস্য। 
তখন একমেনাইড সাম্রাজ্যের শাসন চলছিল। 
তিনি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন পার্সেপ্লিস। 
দারিউস এবং জার্ক্সেস আক্রমন করেছিলেন গ্রীস। 
প্রচুর ধনসম্পত্তি লুট করেছিলেন। 
জার্ক্সেস ছিলেন মোটামুটি বিশ্বজয়ী সম্রাট। 
তার কীর্তি পার্সেপ্লিস ধ্বংস করে প্রতিশোধ নিয়েছেন গ্রীস আক্রমনের। 
গ্রীসের ক্ষয়ক্ষতির ভরপাই করেছেন পার্সেপ্লিস লুট করে।
গ্রীসে তার নামে শুরু হয়ে গেছে জয়ধ্বনি।
সেনাপতিদের কথাবার্তা শুনে বুঝেই গিয়েছেন তারা সন্তুষ্ট। যথেষ্ট সম্পদ এসে গেছে তাদের হাতে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সেনার হাতেও আজ যথেষ্ট সম্পদ। 
সেই কবে থেকে বেরিয়েছে সবাই। করে চলেছে যুদ্ধ একের পর এক।  
এবারে তারা ফিরতে চাইছে দেশে। জীবনের বাকী সময়টা তারা পরিবারের সাথেই মিলেমিশে কাটিয়ে দিতে চাইছে।
না এখনি ফিরে গেলে হবেনা। আরো এগোতে হবে। আরও জয় দরকার। তবে তো হবে লক্ষ্য পূরণ...

Strategy:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆
মুখে কিছু বললেন না। আরও কিছুদিন চলুক বিজয়ৎসব। সেই ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি। 
খরচ হল বেশ কিছুটা। সেনাবাহিনী এবার চাঙ্গা। 
এবার সেনাপতিদের নির্দেশ দিলেন নিয়মিত কুচকাওয়াজ যেন চলে। 
সকালে কুচকাওয়াজ রাতে ফুর্তি...
এভাবেই কাটল বেশ কিছুদিন
নতুন ইরানি সেনাবাহিনী সামিল হয়েছে তার বাহিনীতে। যাতে দু'পক্ষই যাতে একে অন্যকে মানিয়ে নিতে পারে কড়া নজর রাখলেন সেদিকে
কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিকল্পনা হল বাস্তবিত। 
ইরানি সেনাদল ভালোই মিশে যাচ্ছে তার সেনাদলে।
হবে নাই বা কেন...
তার সেনাদের অর্থের পরিমান দেখলে আচ্ছা আচ্ছা রাজার সেনাদের মাথা ঘুরে যাবে। 
আর অর্থের জন্যেই তো সেনারা প্রাণ হাতে করে রাজার হয়ে যুদ্ধে নামে। 
তারাও জানে যতদিন সেনাজীবন, ততদিন অর্থ রোজগার।
এরপরে প্রাণে বেঁচে থাকলে বুড়ো বয়স কাটবে আনন্দে।
আর যুদ্ধে মরলে রাজার সাহায্য যাবে ঘরে। 
অতএব তাদের চিন্তা নেই খুব একটা...
আলেকজান্ডার নিজেও জানেন সেনারাই তার সব সাফল্যের চাবিকাঠি। কোন কার্পণ্য নেই তার এদের জন্য। বলতে গেলে তিনি সেরা ব্যবস্থা করে রেখেছেন তার সেনাদের জন্য...
সেনাবাহিনী এখন বিশাল। সাথে জুড়েছে ইরানের নৌসেনা। নৌসেনা নিয়ে খুব একটা ধারণা ছিল না আলেকজান্ডার এর। এই নতুন বাহিনীর সাথে তার নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য চলল কদিন ব্যস্ততা
এই কদিন তিনি ইরানি সেনাদের সাথে বাড়ালেন যোগাযোগ...
ওদিকে তার দেশের সেনাদল শুরু হয়ে গেছে অসন্তোষ। তাদের আর যুদ্ধে মন নেই। 
কূটচাল চললেন আলেকজান্ডার। 
ইরানি সেনাদের সাথে সখ্যতা বাড়ালেন। 
রটিয়ে দিলেন, দরকারে তিনি ইরানি সেনাদের সাথে নিয়েই এগুতে পারেন বাকী সেনাদল যদি চায় ফিরে যেতে পারে...
এতদিনের সফলতা কে চায় অন্যকে ছেড়ে দিতে যথারীতি তার নিজের সেনাদল এগিয়ে এল নতুন উৎসাহে। 
বোঝেন তিনিও তার সেনাদের মনের কথা। 
অনেকদিন তারা ঘর ছাড়া। এতদিনে তারাও হয়ে গেছে সংখ্যায় কম, অনেক সতীর্থ আজ নেই। 
তাছাড়া কোথায় সবুজ দ্বীপ, নীল জলে ঘেরা গ্রীস। 
আর এদিকে রুক্ষ মরুভূমি। জলের দেখা নেই। খাবার জলই ঠিকমতো পাওয়া যায় না, তার উপর শুকনো আবহাওয়া। জীবনযাপন খুব কঠিন এসব অঞ্চলে। 
ইরানি সৈন্যরা জানে এই অঞ্চলের সম্বন্ধে সমস্ত খুঁটিনাটি। তাই অযথা বিরোধিতা করে আর কি লাভ...
নতুন ইরানি সেনাদের সাথে ইউনানি সৈন্যরা তাই বাড়িয়ে দিল বন্ধুত্বের হাত।

আরও পূর্বে:
●●●●●●●●●●●
অবশেষে 
একদিন উঠল শিবির। এগোতে থাকল আরো পূবে, সিন্ধু নদীর দিকে। 
পথে সহজ হয় আসতে থাকলো। একের পর একটা করে দেশ হল অধীন। হাতে এল ক্রীতদাস, অর্থ, বাড়ল সেনা।
যত এগুতে থাকলো বাহিনী, তত বদলে গেল প্রকৃতি।
রুক্ষ প্রান্তর মরুভূমি ছেড়ে বাড়তে লাগলো সবুজ। পাওয়া গেল যথেষ্ট জলের যোগান।
আবহাওয়া অনেক মনোরম হতে থাকল।
আরো এগুতে পেল চেনা পরিবেশ, অনেকটা সেই গ্রীসের মত। 
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সেনারা...

সিন্ধুর তীরে:
●●●●●●●●●●●●
সিন্ধুর ধারে আসতেই বাধা দিল সিন্ধুবাসীরা। 
খুব লম্বা চওড়া আর শক্তিশালী তারা। যুদ্ধে নিপুণ। 
সিন্ধুবাসীরা জানে কিভাবে রুখে দিতে হয় হানাদারদের। যুগ যুগ ধরে তারাই তো বংশ পরম্পরায় বাধা দিয়ে এসেছে এই হানাদারদের। ছোটর থেকেই তারা তাই যুদ্ধ নিপুণ জাত।
কিন্তু না কাজ দিল না তেমন। 
এরা কোন হানাদার ছিলোনা। 
ছিল সুসংবদ্ধ এক সামরিক বাহিনী। 
বেশিরভাগ সিন্ধুবাসী হল বন্দী। 
বন্দীদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করা হল। 
রাজা এসে তাদের বন্দীদশা ঘুচোলেন। 
সামিল করে নিলেন নিজের দলে। 
সিন্ধুবাসীরাও দেখল বেশ ভালো ব্যবস্থা এই সেনাদলের তারাও মিশে গেল স্রোতে। 
হাতে হাত মিলিয়ে তারা বাঁধলো এক অস্থায়ী সেতু নদীর উপরে। 
সিন্ধুবাসী জানে তাদের নদীর কি প্রকৃতি। 
তাই তাদের পরিকল্পনায় অভ্যস্ত হাতে সেতু তৈরি হল তাড়াতাড়ি তৈরিও হল খুবই মজবুত...

ঝিলামের ধারে:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
আরো এগুলেন আলেকজান্ডার। পৌঁছে গেলেন ঝিলাম নদীর ধারে। তখন বসন্তের শুরু। পরিবেশ মনোরম। 
তবে যতটা মনোরম ততটাই ভয়ানক। 
ঘুমন্ত সরীসৃপের দল এবারে জাগছে। 
প্রতিদিনই খবর আসছে সেনারা আক্রান্ত হচ্ছে। 
এই ভয়ঙ্কর ছোট সাপগুলোর বিষের জ্বালা মারাত্মক আর তেমনি প্রাণঘাতী। 
প্রতিদিন মরছে বেশ কয়েকজন করে...
চিন্তার ভাঁজ কপালে। খবর এসেছে যত দিন যাবে জাগবে সাপের দল, ভরে যাবে এলাকা। 
ইউনানী চিকিৎসকদেরও জানা নাই এই সাপের বিষের কি চিকিৎসা...
তাই ভালোই বুঝতে পারছেন আলেকজান্ডার  'যত সাপ তত মৃত্যু'
এভাবে চললে তো ক'দিনেই সেনাদল খালি হয়ে যাবে...
না আর দেরি করা যাবেনা। নির্দেশ দিলেন যুদ্ধ প্রস্তুতির। আক্রমন করতে হবে তক্ষশীলা।
এলাকা দখল করতে পারলে অধিবাসীদের কাছ থেকে কিছু উপায় নিশ্চয় পাবেন।
নাহলে এরা কি করে রয়েছে এই বিষধর সাপেদের সাথে
রাতে গুপ্তচর এসে খবর দিল। 
এলাকার রাজা অম্বি চাইছেন আলাপ করতে। 
মেঘ না চাইতেই জল। 
জিউসকে দিলেন মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

তক্ষশীলার রাজা অম্বি:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
পরেরদিন এলেন অম্বি। হাত মেলালেন। 
শর্ত একটাই সব সাহায্য করবেন অম্বি, বিনিময়ে তার রাজ্যের সুরক্ষা আর ঝিলমের অন্য প্রান্তে রাজা পুরুর রাজ্যের দখল তিনি নিতে চান। 
বিনিময়ে কর দেবেন আলেকজান্ডারকে।
এলাকা দখল করতে গেলে এলাকার একজনকে হাতে রাখা জরুরী। তাই সামান্য কিছু দর কষাকষি করে আলেকজান্ডার হয়ে গেলেন রাজী। 
তবে সাপের আক্রমনের তেমন কিছু সুরাহা হল না।
অম্বি যা বললেন- সাপের আক্রমণে তাদের নির্ভর করতে হয় পুরুর রাজ্যের চিকিৎসকদের উপরে। ওরাই জানে এর চিকিৎসা। একদিনের মধ্যে সাপে কাটা রুগীর প্রাণ ফিরিয়ে দেয় এমন তাদের চিকিৎসার জোর।
অম্বি তাই পুরুর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ চান যাতে এই সাপে কাটার সমস্যা তার রাজ্য তক্ষশীলা থেকেও দূর হয়ে যায় চিরতরে...
এক ঢিলে দুই পাখি। 
আলেকজান্ডার এখন অনেকটা চিন্তামুক্ত। অনেকদিন পরে তার মন আজ ভারমুক্ত। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছেন তার ছোটবেলার কথা। মনে পড়ছে মা এর কথা। অলিম্পাস পাহাড়ে তার কেটেছে সময় অনেকটা। 
সেই নীল সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপগুলো তার যে খুব চেনা। কতদিন দেখেননি সেই চেনা জায়গা...

ফিরে দেখা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
বাবা ফিলিপ(দ্বিতীয়) মা হচ্ছেন অলিম্পাস, তিনি এপিরোডের রাজকুমারী। মেসিডোনিয়ার বিখ্যাত পেল্লা বংশে জন্ম তার। 20/21 july মাসে তার জন্ম। সময়টা 356 খ্রিস্টপূর্ব। 
খুব সম্মান তাদের। রাজা তার বাবা। বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক আরিস্তু তথা এরিস্টটল ছিলেন তার শিক্ষাগুরু। আলেকজান্ডার ভালো শিক্ষার্থী। 
দ্রুত শিখে নিলেন তিনি। সবচেয়ে ভালো শিখলেন তিনি মানুষের মন পড়তে, যা তার এই মূহুর্তে সবসময় কাজে লাগছে। সেনাবাহিনীর সাথে, বিজিত রাজাদের সাথে। মানুষের মন পড়া সবচেয়ে দুরূহ কিন্তু সবচেয়ে কাজের।
ধন্যবাদ গুরু আরিস্তু অসংখ্য ধন্যবাদ তোমায়...
কিন্তু মা এর সাথে বাবার বনিবনা হয়না ঠিকঠাক...
বাবার বিরোধিতা করতে গিয়ে মা জড়িয়ে পড়েন মন্ত্রিসভার সাথে গোপন আঁতাতে। শেষে দ্বন্ধ বাড়লে আলাদা হয়ে যায় দুজনে। 
অলিম্পাস পর্বতের উপরে মহলে এসে বসবাস শুরু করেন মা ছেলে মিলে। তখন তার বয়স পনের।
তবে বাবার রাজত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়না। 
গুপ্তঘাতকের হাতে মরন ঘটে তার। রাজা হন আলেকজান্ডার তখন বয়স মাত্র কুড়ি। 
মন্ত্রিসভা বিরোধিতা করল এই বলে যে আলেকজান্ডার এর হাত রয়েছে তার পিতার হত্যায়... 
কিন্তু অভিযোগ টিকল না ধোপে। মূল বিরোধিতা করেছিল অবশ্য সৎভাই। 
সরিয়ে দিলেন তাকে আলেকজান্ডার নিজের হাতে।  সরিয়ে দিলেন সৎ মাতাকে।
খুন করলেন পিতার কাছের লোকজনদের বিশেষ করে বিরোধিতা করেছিল যারা।
আপাতত কণ্টকমুক্ত তার সিংহাসন। অসম্ভব সাহসী তিনি। 
কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ নিলেন রাজ্যের, সাথে সেনাবাহিনী সমেত মন্ত্রিসভার। 
বিরোধিতা যারা করল তারা খুন হল, বাকীরা চুপ হয়ে বশ্যতা স্বীকার করে নিল।

দিগ্বিজয়ের পথ:
●●●●●●●●●●●●●●
সব গুছিয়ে চললেন দিগ্বিজয়ে। 
একে একে জয় করলেন বাক্ট্রিয়া। 
তারপর গাজা। 
সালটা 332 খ্রিস্টপূর্ব।
গাজার গভর্নর বেটিস হলেন পরাজিত। 
ভয়ানক রকমের যুদ্ধ করেছিল গাজা তার নেতৃত্বে। 
পরাজিত হয়েও বেটিস কোনরকম ভাবে মাথা নোয়াতে রাজী নন। বেটিস ছিলেন খুবই শক্তপোক্ত গঠনের প্রচন্ড শক্তিশালী পুরুষ। তার নেতৃত্বে গাজার সাধারণ মানুষ তখনও বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি নয়। গাজার সেনাবাহিনী তখনও বেটিসকে মেনে চলেছে তাদের প্রধান। আলেক্সান্ডার বাহিনীর সাথে তারা কোনভাবেই মিশতে চাইছে না। 
আলেক্সান্ডার জানেন কিভাবে ভাঙতে হয়
কিভাবে ভয় রোপন করতে হয় 
মনে মনে ঠিক করে নিলেন এমন শাস্তি দেবেন যা বহু যুগ উদাহরণ হয়ে থাকে। 
পরবর্তীতে যেসব রাজ্য আলেক্সান্ডার যাবেন 
সেই রাজ্যগুলো এই খবর শুনলে ভয়ে আগেই আত্মসমর্পণ করে নেবে।
সেই অনুযায়ী বেটিসের দুইপায়ে বেঁধান হল লোহার কাঁটা। তারপর তাকে রথের পেছনে বেঁধে দৌড় করানো হল। জখম পা নিয়ে বেটিস সামলাতে পারলেন না গতি।
এরপর তাকে রথের সাথে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল যতক্ষন না প্রাণ বেরোয় তার...
বেটিসের এই ভয়াবহ মৃত্যু তার সেনাদের মনোবল ভেঙে দিল। ধীরে ধীরে সামিল হল তারা আলেক্সান্ডার এর সাথে। 
বেটিসের এই শাস্তির খবর চাউর করে দেওয়া হল আশেপাশের রাজ্যগুলোতে। যাতে ভয় আগে থেকেই ঢুকে যায় তার যাত্রাপথে...
অতঃপর 
সিরিয়া হয়ে মিশর। 
মেসোপটেমিয়া ইরান দখল করলেন। 
একদম সহজ হল এইসব জয়।
ওদিকে ইরান বিজয় করে বেরিয়ে আসার পরেই
ইরান আবার নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে দেয়। ইরানের স্বাধীনতার কথা শুনে ইরানি বাহিনীর বেশ কিছুটা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি শক্ত হাতে দমন করেন। বিদ্রোহী সেনাদের মেরে ফেলেন। 
তাদের অর্থ সম্পদ বাকীদের মধ্যে বিতরণ করে দেন। 
এরপর গান্ধার প্রদেশ অর্থাৎ আফগানিস্তান জয়ের দিকে মন দেন। 
তারপর তিনি হিন্দুকুশ পেরিয়ে সিন্ধুর ধারে। 
সিন্ধু পেরিয়ে এখন ঝিলামের ধারে।
লক্ষ্য এখন তার ইন্দ্রপ্রস্থ অর্থাৎ দিল্লী। 
ইন্দ্রপ্রস্থ জয় মানেই হিন্দুস্তান অর্ধেক দখল। 
তারপর পাটলিপুত্র অর্থাৎ পাটনা। 
এই দুটো জয় মানেই "সোনার দেশ ভারত" জয়। ইতিহাসে নাম অমর। 
তার নাম ইতিহাসে স্মরণ হবে শ্রদ্ধার সাথে। 
বিশ্বজয়ী এক মহান রাজা আলেকজান্ডার।
অনেক ক্ষয় ক্ষতি তিনি স্বীকার করেছেন। 
তবে দিগ্বিজয়ী রাজা হতে গেলে তো এটুকু করতেই হয়। 
হিসেব করে দেখলেন যা গতি তার বাহিনীর। 
মোটামুটি আগামী বসন্তে তিনি দখল করে নেবেন ইন্দ্রপ্রস্থ। 
তারপর...তারপর... তার অভিষ্ট হাতের মুঠোয়...
পরেরদিন
শিবির গোছানোর নির্দেশ দিলেন 
পেরুতে হবে নদী।
বাঁধতে হবে সেতু।

পুরুর রাজ্যে:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
ওদিকে গুপ্তচর বাহিনী খবর এনেছে মেসিডোনিয়ার যবন রাজা আলেকজান্ডার এসেছে বিশাল বাহিনী নিয়ে। সিন্ধু পেরিয়ে ঝিলাম নদীর তীরে পৌঁছে গেছে। তক্ষশীলার রাজা অম্বি হাত মিলিয়ে নিয়েছে আলেকজান্ডার এর সাথে। 
দ্বৈতভাবে দখল করবে পুরু রাজ্য। পুরুর রাজ্য বিস্তৃত ঝিলাম নদী থেকে চেনাব নদী অব্দি। 
(অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিম পাঞ্জাব অঞ্চলে আজ যা রয়েছে পাকিস্তানের দখলে)
পরিকল্পনা অনুযায়ী ওদিকে ঝিলাম নদীর উপর সেতু বাঁধা শুরু হয়েছে। 
রাজা পুরু ঠিক করে নিলেন তার কর্তব্য করণীয়...
তিনি তার তিন পুত্র অজয়, বিক্রম, মলয়কেতুদের সাথে নিয়ে বসলেন এক জরুরী সভায়। 
তারপর ডাকলেন সেনাপতিকে বুঝিয়ে দিলেন কি করতে হবে...

ঝিলাম পেরিয়ে:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
সেদিন সূর্য্যের আলো নেভার পর পর বিশাল পুরু বাহিনী জমায়েত হল ঝিলামের ধরে। চুপিসারে ভাসিয়ে দিল কলার ভেলা। এগুলোয় আওয়াজ হয় খুব কম। জল অনেক স্রোত ভালোই। ভেলা ধরে চুপিসারে সবাই চলল অন্যপারে
এদিকে শিবির গোছানো চলেছে সারাদিন সাথে চলেছে সেতু তৈরি। ক্লান্ত বাহিনী নিচ্ছে বিশ্রাম। 
একে একে পুরুর সেনাদল এসে পৌছচ্ছে এদিকে। 
সবাই নিজেদের গুছিয়ে নিল...
রাত একটু গভীর হতেই আক্রমন করল তারা শিবিরে। অতর্কিত আক্রমণে বহু সেনা প্রাণ হারাল। অনেক সেনা প্রাণভয়ে সাঁতরে নদী পার হতে গিয়ে ভেসে গেল জলে।
মোটামুটি শিবির তছনছ হয়ে গেল ঝিলাম নদীর পাড় বরাবর। 
পাশের শিবিরে খবর যেতে সময় লাগলো না 
এসে পড়ল আরো সেনা। যুদ্ধ বেধে গেল চরমে। 
এদিকে আলেকজান্ডার এর সাথে যুদ্ধ শুরু হল পুরুর সন্তান রাজকুমার অজয়ের। যুদ্ধে জখম হলেন আলেকজান্ডার। মারা গেল আলেকজান্ডার এর প্রিয় ঘোড়া বুসফেলাস... 
কিন্তু অন্তিম আঘাত হলেন হানলেন #রাজকুমার_অজয় এর বুকে।
সম্মুখ সমরে প্রাণ হারালেন অজয়। 
রাজা পুরুর জ্যেষ্ঠ  সন্তান মারা গেলেন...
পরেরদিন সেতু তৈরি সম্পূর্ণ হতে এসে পড়ল আলেকজান্ডার এর সেনাবাহিনী। এদিকে অপেক্ষায় রয়েছে পুরু বাহিনী। হাতি রথ পদাতিক বাহিনী সমেত।

এক নিশান দুই প্রধান:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
দুই বাহিনীর নিশানেই রয়েছে মহাবীর এক দেবতার ছবি হাতে তার মুসল পিঠে সিংহ চামড়া। 
এক প্রধান পুজো করেন তাকে হেরাক্লিন নামে
আরেক প্রধান পুজো করেন বলদেব নামে...
দুইদলই একে অন্যের নিশান দেখে হচ্ছেন অবাক। উঠছে অবচেতনে প্রশ্ন- লড়াই কি তাহলে নিজেদের সাথেই ???
না এত ভাবার সময় নেই। যুদ্ধ আসন্ন।

যুদ্ধ শুরু:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆
পুরুর বিশাল রণহস্তী বাহিনী দেখে আলেকজান্ডার বাহিনীর হৃদকম্প শুরু হয়ে গেল। 
আলেকজান্ডার এর রয়েছে অশ্ব বাহিনী। 
সেই অশ্ববাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল হস্তিবাহিনীর সামনে। 
সাথে হাতিদের মুহুর্মুহু ব্রিংহন। 
হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে সেই ভয়ানক ডাক। 
যেমন বিশাল হাতি তেমনি আক্রমণাত্মক। 
শরীরের পুরোটাই প্রায় ধাতব বর্মে ঢাকা। 
শুঁড়ে করে জড়িয়ে ধরে আছাড় দিচ্ছে সামনে যাকে পাচ্ছে। একসাথে বেশ কয়েকজনকে আছড়ে তাদের উপরে উঠে যাচ্ছে হস্তিবাহিনী। 
দেখতে দেখতে দুরমুশ হয়ে গেল আলেকজান্ডার সেনা। 
শেষে আলেকজান্ডার নির্দেশ দিলেন হাতির খোলা অংশে তীর বর্শা দিয়ে জখম করতে। 
এতে হল হিতে বিপরীত। 
জখম হাতি হয়ে গেল আরো ভয়ানক। 
প্রচন্ড বেগে সেনাদের মধ্যে ঢুকে তছনছ করে দিল সব...

দ্বন্ধযুদ্ধ প্রস্তাব:
●●●●●●●●●●●●●
পুরু শেষে প্রস্তাব পাঠালেন, এত এত সাধারণ সেনার মৃত্যু বরঞ্চ থাক। সম্মুখ সমরে আসুক আলেকজান্ডার। হোক দ্বন্ধযুদ্ধ। যে জিতবে রাজত্ব তার। 
কিন্তু আলেকজান্ডার অস্বীকার করলেন...

রাজকুমার বিক্রমের মৃত্যু:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
যুদ্ধ এগোতে থাকলো। রাজকুমার বিক্রমের মুখোমুখি আলেকজান্ডার। সম্মুখ সমরে খুব জোরে আঘাত লাগলে ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন আলেকজান্ডার। 
সাথে সাথে তার দেহরক্ষীর দল ঘিরে ফেলল। কোনরকমে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল। 
রাজকুমার_বিক্রম আক্রমন চালিয়ে গেলেন, কিন্তু সবার সম্মিলিত আক্রমণে প্রাণ হারালেন...

আত্মসমর্পণ:
●●●●●●●●●●●
পুত্র ও পিতা যৌথভাবে শানিয়ে চালালেন আক্রমন। মলয়কেতু আর পুরুর আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল আলেকজান্ডার বাহিনী। 
শেষে বিকেলের দিকে বন্দী হলেন আলেকজান্ডার। 
বলা ভালো আত্মসমর্পণ করলেন আলেকজান্ডার। 
কারন তার বাহিনী হয়ে গেছে অর্ধেক। 
এরপর যুদ্ধ চললে তিনি সব হারিয়ে ফেলবেন। 
দেশে ফেরার মত লোকবলও থাকবে না তার হাতে...
আলেকজান্ডার এর এই চিন্তা ভুল ছিল না 
কারন প্রচুর সৈন্য ইতিমধ্যেই তার মারা গেছে
বেঁচে থাকা সেনাদের মধ্যে বেশিরভাগই সাপের কামড়ে মৃত্যুমুখে
সবে মিলে তার সেনাবাহিনী প্রায় বিনাশের মুখে...

অনুরোধ:
●●●●●●●●●●
আলেকজান্ডার অনুরোধ করলেন তার সেনাবাহিনীর যেন যত্ন নেওয়া হয়। 
যদিও পুরুর সেনারা নিজেদের চিকিৎসার পাশাপাশি যত্ন নিতে শুরু করেছিলেন শত্রু সেনার। 
ওষুধ প্রয়োগে বেশিরভাগ সেনানী সুস্থ হয়ে উঠল দ্রুত। 
চলছে আলেকজান্ডার এর চিকিৎসা। যথেষ্ট জখম হয়েছেন তিনিও। 
রাজা_পুরু মাঝে মাঝেই এসে দেখে যান সব ঠিকঠাক চলছে কিনা...

চিঠি:
◆◆◆◆◆◆◆
অবশেষে আলেকজান্ডার এর পত্নী একটি চিঠি লিখে পাঠান রাজা পুরুর উদ্দেশ্যে- 
যেন রাজা পুরু তাকে নিজের বোন মনে করে যেন তার স্বামী আলেকজান্ডার এর হত্যা না করেন।
সাথে একটি রাখীও পাঠান বলে শোনা যায়...
রাজা পুরু যতই হোক হিন্দু। কোন হিন্দু তার স্মরণে আসা কারুর হত্যা করেনা। মহিলাদের তো নয়ই। 
পুরো সম্মান রক্ষা করেন তারা। আর সেই মহিলা যখন বোনের মত সম্মান চাইছেন তখন দিতে বাধ্য হন এক হিন্দু। 
এটাই হিন্দুর শিক্ষা। অতএব রাজা পুরু রইলেন চুপচাপ। প্রাণে বেঁচে গেলেন আলেকজান্ডার।
এরপরে আলেকজান্ডার লিখলেন আরেকটি চিঠি- 
আমি এই যুদ্ধের অপরাধী। আমার সৈন্যরা তো আগেই ফিরে যেতে চেয়েছিল। আমিই জোর করেছি। 
তাই যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী আমি। 
এই মুহুর্তে আমি মন থেকে সব হারিয়েছি। 
বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই আর। 
তবে অনুরোধ একটাই সেনাদের ক্ষমা করে দিন, ওদের মুক্তি দিন, নাহলে নিজের দলে সামিল করে নিন কিন্তু প্রাণে মারবেন না। 
পারলে আমাকেও করুন ক্ষমা। 
আমি দেশে ফিরে যেতে চাই বাকী ইউনানি সেনাদের সাথে। মরার আগে দেখতে চাই গ্রীসের মুখ। 
বাকী জীবন ওখানেই কাটাতে চাই। 
আমিও এক রাজা। আপনিও এক রাজা। 
আশা রাখি আপনিও আমার সাথে সেই ব্যবহারই করবেন যা একজন রাজা করে রাজার সাথে...

রাজার সাথে রাজার মতো:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
ঠিক এরকম ব্যবহারই করলেন রাজা পুরু রাজা আলেকজান্ডার এর সাথে।
আরো কিছুদিন তাদের পূর্ন যত্ন নেওয়া হয়। সেনাদলের সাথে রাজা আলেকজান্ডার সেরে উঠলেন দ্রুত।  
সম্পূর্ণ সুস্থ হলে পরে রাজা পুরু তার সৈন্য সমেত তাদের ফিরে যাবার বন্দোবস্ত করে দেন। খাবার জল তাঁবু ঘোড়া হাতিও দেন বেশ কিছু। এগিয়ে দেন সিন্ধুর ধার পেরিয়ে হিন্দুকুশ অব্দি। 

পুরু রাজ্যের ভবিষ্যৎ:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
রাজা পুরু দখল নিলেন রাজা অম্বির রাজ্যের। 
সিন্ধু নদ পেরিয়ে আফগানিস্তান এর কিছুটা অংশের।
বেশ বড় রাজ্যের অধিশ্বর হয়ে ভালোই ছিলেন রাজা পুরু। 
কিন্তু আলেকজান্ডার এর এক সেনাপতি ইউডেমুস রয়ে যান এই অঞ্চলেই। তার ইচ্ছে ছিল এই অঞ্চলের রাজা হবার। শস্য শ্যামলা এই বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের রাজা হলে তার স্বপ্ন পূরণ হবে। 
কিন্তু রাজা পুরুর সাথে পেরে উঠা হল মুশকিল। 
অবশেষে তক্কে তক্কে থেকে দীর্ঘ এগার বছর পরে অতর্কিতে আক্রমন করে খুন করলেন রাজা পুরুকে। 
তবে রাজা হওয়া আর তার হলনা। 
পুরুপুত্র মলয়কেতু তাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মারলেন এক বছরের মধ্যেই...
মলয়কেতুর পরে সম্রাট হলেন পুত্র ভদ্রকেতু।
তখন পাটলিপুত্র হয়ে গেছে ভারতের রাজধানী। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য আর কৌটিল্য তখন নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলেন পুরো ভারতের অর্থনীতি সমেত সামাজিক ব্যবস্থা।

আলেক্সান্ডারের ভবিষ্যৎ:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
ওদিকে আলেকজান্ডার ফিরে চললেন নিজের দেশে পথে ইরানে পড়লেন ভয়ানক বিরোধিতার সম্মুখীন। ইরানি বাহিনী সেখানে নিজেদের স্বাধীন করে নেয়। 
যুদ্ধ হয় খুব। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান আলেকজান্ডার। 
কোনরকমে তাকে সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন তার দেহরক্ষীরা। কিন্তু হল না শেষ রক্ষা। মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলন শহরে যখন পৌঁছলেন মৃত্যু ঘটল তার। সময়টা 10 11 june 323 খ্রিস্টপূর্ব।
দিগ্বিজয়ী রাজা আলেকজান্ডার এর মৃতদেহ যখন মেসিডোনিয়া পৌঁছল তখন তার সেনাদল প্রায় কপর্দক শূন্য। 
সব হারানো এক ভিখিরীর দল...
তারা কাঁধে করে বয়ে আনছে তাদের রাজার দেহ। 
দিগ্বিজয়ী সেই রাজার দুটো হাত তখন বাইরে ঝুলছে। সেই হাতেও নেই কিছু...
✍️Prithwis Sen
তথ্যসূত্র:
মহারাষ্ট্রীয় জ্ঞানকোষ
ঐতিহাসিকদের বিবরণ
ইন্টারনেট
আর একটি Coin:
গজরাজের উপর বসে রাজাপুরু বেঁধে নিয়ে চলেছেন ঘোড়ায় বসে থাকা আলেক্সান্ডারকে।
তৃতীয় ছবিতে: 
রাজা পুরুর হাতের আংটি
বর্তমানে পাকিস্তানের একটি মিউজিয়ামে রয়েছে
আংটিটি ভালো করে দেখুন
সম্ভবত শ্রীকৃষ্ণ এর প্রতিমূর্তি নয়ত রয়েছে শ্রীরামের...








এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...