সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তাজমহল নাকি তেজ মহালয়া?

লিখেছেন Prithwi Sen

বাস দাঁড়িয়ে গেল প্রায় 6 কিমি আগে 
সেখান থেকে auto আর cng বাস নিয়ে গেল তাজমহলের গেট অব্দি। এবারে লম্বা লাইন আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। 
যেমন রোদ আছে তেমনি গরম, দুয়ে মিলে পুড়ে যাবার জোগাড়। 
শেষে এল আমাদের security চেক। 
কিছু খাবার ছিল ব্যাগে এই বিস্কুট চানাচুর। শুরু হল সমস্যা, এগুলো নিয়ে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। এখন আবার আরেকটা লাইনে দাঁড়িয়ে লকারে রেখে আসতে হবে এগুলো। 
কি করা যায় এখন, দেখলাম কয়েকটা হনুমান রয়েছে দূরে...
ধুত্তোর নিকুচি করেছে, বলে প্যাকেট গুলো সামনে রেখে দিলাম ওদের। এসে নিয়ে গেল ওরা। সব সমস্যার শেষ।
ওয়াহ তাজ:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
যাইহোক মূল গেট পেরুলাম 
এবারে মূল চত্ত্বরে প্রবেশ ঘটল। মাঝে রাস্তা দুদিকে সবুজ লন। একটু এগোতেই বামদিকে প্রকাশ পেতে লাগল তাজমহল একটু একটু করে। প্রথমে পাশের মিনার গুলো আর তারপরে এল মূল কক্ষ, আর তারপরে পুরোটা।
একটা বাঁক নিলাম বামদিকে।
বাহ অদ্ভুত অপূর্ব... 
বিস্ময়ে হতবাক করে দেয় এই সৌন্দর্য্য। অপূর্ব একখন্ড বিস্ময় যেন পৃথিবীতে নেমে এসেছে। এক টুকরো স্বর্গীয় পরিবেশ, মাঝখানে #যমুনা লম্বা হয়ে চলে গেছে তাজমহল অব্দি।
একদম ঠিক সামনে 
বসার জায়গা। বসে পড়লাম। 
ফটো তুলছে বহু লোকজন। দেশি বিদেশি পর্যটক ভর্তি। 
কিন্তু ভ্রূক্ষেপ নেই আমার কারুর দিকে। 
দেখছি অবাক বিস্ময়ে একমনে এই অদ্ভুত সৃষ্টি'কে।
সূর্য্যের পড়ন্ত দুপুরের আলোয় 
সেই সাদা রূপ যেন ফেটে বেরুচ্ছে। 
সামনের এই বেঞ্চের থেকে সরে যেতে যেন মন চাইছেই না।
মাঝের যমুনাকে পাশে রেখে 
আমরা এগিয়ে গেলাম তাজমহলের দিকে। যত এগোচ্ছি তত যেন সুন্দর হচ্ছে এই তাজমহল। 
সামনের পর পর লম্বা শ্বেত শুভ্র সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। এবারে ওঠার পালা। 
উঠে এসে একবার চারপাশ দেখলাম, আহা কি দুর্দান্ত। যেমন সাজানো বাগান চারিদিকে আর গেটগুলি, মাঝে লম্বা করে যমুনা। যেদিকে তাকাই চোখ সরানো মুশকিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই সামনের বড় বারান্দায় এদিক থেকে ওদিক হেঁটে একবার দেখে নিলাম মূল কক্ষের সামনেটা। 
মূল কক্ষে ভীড় কমেছে 
এবারে ওখানে যাই। বেশ সাজানো কক্ষ নিচে, দুটি বাক্স পরপর। এগুলো কবর মমতাজ শাজাহানের। 
উপরে জাফরির কাজ করা সেখান থেকে আলো আসছে।
উপরে বেশ একটা গোল নকশা, দেখলে এক ঝটকায় সূর্যচিহ্নের মতোই লাগে। আলো আসছে ওই জায়গা দিয়ে।
দুইটি বাক্স। কবরের উপরি ভাগটা শুধু দেখা যায়। 
যেগুলো শুধুই বাক্স, আসল কবর রয়েছে নিচের ঘরে।
কিন্তু
সেই কবরকে ঘিরে রয়েছে উপরে পরিক্রমা ব্যালকনি, কেন এই ব্যালকনি? 
কবর ঘিরে ব্যালকনি... অদ্ভুত
বেরিয়ে এসে মিনার গুলোর কাছে গিয়ে বসলাম। অনেকে প্রাচীরের উপরে উঠে যমুনা দেখছে। 
যমুনার ওদিক থেকে আরেকটি গেট রয়েছে, 
যদিও সেটি এখন বন্ধ থাকে।
তাজমহল যেদিকে থেকে দেখবেন 
সেদিক থেকেই এটি একইরকম দেখাবে। 
কিন্তু চৌকো নয়, বরঞ্চ অষ্টভুজ, 
কারন চারটে কোন একটু করে কাটা রয়েছে।
ভালো করে দেখলাম মিনারগুলো সামনে থেকে,
নিচে এসে দাঁড়ালে মাথা অব্দি ঠিকঠাক নজর যায় না এত উঁচু। মিনারগুলো একে অন্যের দিকে হালকা একটু হেলে আছে কারন যদি কখনো হয় ভূকম্পন, তাহলে যেন মিনার গিয়ে না পড়ে মূল গম্বুজে।
তবে একদম সামনে থেকে দেখলে বোঝা যায় তাজমহল ঠিক সাদা পাথর নয়, বরঞ্চ একটু হালকা হলদে ভাব আছে। জানিনা কেন এমন মনে হচ্ছে, হয়ত ধুলোর হালকা আস্তরনে এমন লাগছে।
এবার নেমে এসে একটা পাশে নিলাম একটা খালি চেয়ার, বাগানের ধারে। অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাজমহল, এখানে বসে দেখতে। 
তাজমহলের অন্য গল্প:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
তাজমহল নিয়ে অনেক confusion আছে, 
অনেকেই দাবী করেন এটা আসলে হিন্দু মন্দির, 
মুঘলরা দখল করে নিজেদের সমাধি বানিয়েছে।
মান্ডুর কাছে দেখেছিলাম রাজা ভোজের তৈরি #ভোজেশ্বর_শিব_মন্দির বর্তমানে #হসাংশাহ_tomb। 
রাজা ভোজের তৈরি অসাধারণ সেই সুন্দর শিব মন্দির শিল্প ও সৌন্দর্যের আকর। 
সেটিও ধবধবে সাদা মার্বেলে তৈরি।
সেই সাদা স্বর্গীয় ভোজেশ্বর মন্দির 
(তখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে হসাংশাহ tombএ) 
দেখেই শাহজাহান এই মহলটিকে অধিগ্রহণ করে তাজমহলে পরিনত করার কথা ভাবেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সেই সময়ের মুঘলদের মধ্যে এক রীতি-রেওয়াজ চালু হয়ে গিয়েছিল দখলকৃত মন্দির, palace গুলিকে মসজিদ কবরখানায় রূপান্তরিত করা।
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
একে একে বলি কেন তাজমহলকে কেন হিন্দু মন্দিরের অধিগ্রহণ বলা হয় তার কারণগুলি:
#নামকরণ: তাজমহল নামটাই যথেষ্ট সন্দেহের। তাজ ই মহল নাম তাও আবার একটা কবরস্থানের, 
অদ্ভূত লাগে। 
যদিও কখনো শাহজাহান বা তার উত্তরসূরিরা এই নাম উচ্চারণ করেনি বরঞ্চ বলেছে #holy_grave।
আবার সেই সময়ের কিছু সংস্কৃত বইতে #তেজ_মহালয়া নামে অপূর্ব এক সাদা মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়, 
যা যমুনা নদীর ধারে ছিল। 
সেই মন্দির তাহলে গেল কোথায়?
তেজ মহালয়া থেকে তাজ মহল এটা একটা যুক্তিযুক্ত নাম অনুসরণ হতে পারে।
#ত্রিশূল: মূল ডোমের ঠিক উপরে দেখলে একটি ত্রিশূল দেখা যায় পরিস্কার। একদম উপরে ডাব তার নিচে দুইপাশে আমপাতা, তার নিচে ঘট, সেই ঘটের ঠিক নীচে চন্দ্র। 
ভালো করে দেখুন সেই নকশা, সেই ঘটের নকশা যা প্রতিস্থাপন করা হয় যেকোন পুজোর আগে, ঠিক সেই ঘট পরিষ্কার দৃশ্যমান।
প্রসঙ্গত বলে রাখি

#ইসলামিক_চাঁদ একটু কোনাকুনি থাকে সবসময় 
কিন্তু কখনো থাকে না অনুভূমিক।
এখানে চন্দ্র আছে অনুভূমিক।
#গঠনশৈলী: আসলে তাজমহল 7 তলার। 
আমরা দেখতে পাই উপরের তিনটি তলা। একদম নীচে রয়েছে #যমুনা_দ্বার। আর সিঁড়ি উপরে উঠে এসেছে।
এটি সেই রাস্তা যা যমুনা নদী থেকে আসত তাজমহলে। বলা ভালো 
রাস্তাটা আছে এখনো, শুধু দরজাটা বন্ধ করা আছে। 
কার্বন টেস্ট করে জানা যায় এই দরজা প্রায় 300 বছরের বেশি পুরোন শাহজাহানের থেকে। 
এত পুরোন দরজা তাজমহলে কেন?
তাহলে নিশ্চয় তাজমহল ছিল শাহজাহানের আগে থেকেই।
এছাড়া 
এখানে রয়েছে #নহবৎখানা, যেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সমস্ত মন্দিরেই সঙ্গীত পরিবেশিত হয় আর এখনো হয়। 
কিন্তু কোন মসজিদ বা সমাধিতে সঙ্গীতের দরবার? 
হুমায়ুন নিজের আত্মজীবনী'তে লিখেছেন 
তেজ মহালয়া বলে এক মন্দিরের কথা, যমুনার ধারে। 
যার সৌন্দর্য ওনাকে বিস্মিত করেছিল। 

বাদশাহ_নামা তে শাহজাহান 
স্বীকার করছেন যে আগ্রার এই প্রাসাদ মহারাজা  জয় সিংহ এর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে মুমতাজের কবরের জন্য।  এই documentটি এখনো জয়পুরের মহারাজার নিজের সংগ্রহে রয়েছে বলে শোনা যায়।
এছাড়াও তাজমহল তৈরি করতে তাতে যত কর্মী লাগার কথা,  এত কর্মী যদি ওখানে থাকতো আর থাকার খাবার জন্য যদি সব ব্যবস্থা সত্যিই করা হত তাহলে ঐ এলাকা তখন এক ব্যস্ত জনপদে পরিনত হত, কিন্তু পুরোন দস্তাবেজ ঘেঁটে এরম কোন ব্যস্ত জনপদের সন্ধান পাওয়া যায় নি তাজের আশেপাশে। 
আরও মজার কথা তাজ নির্মাণের কোন শিল্পীদের বংশজ আজ অব্দি পাওয়া যায়নি। 
মাত্র 400 বছর আগের মুঘলদের বংশজ এখনো রয়েছে কিন্তু শাহজাহান এর সময়ে তৈরি তাজ নির্মাণ কর্মীদের বংশজ'র কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি 
তাজ নির্মাণের কোন অবশিষ্ট মার্বেল টুকরো। 
এর আশেপাশে কোথাও বা কয়েক কিমি এর মধ্যে যা তাজের মার্বেলের সাথে মিল খায়। 
এত বড় শিল্পকর্মের অবশিষ্ট কোথায় গেল, যদি সত্যি শাহজাহান এটা বানিয়ে থাকতো।
এছাড়া তাজমহল লেখা যে মার্বেল ফলক, সেটাও মিল খায় না তাজের বাকি মার্বেলের সাথে। তাজের মার্বেল অনেক উন্নত মানের ফলকের তুলনায়।
তাজের নিচে রয়েছে অনেক অনেক ঘর, সেগুলো সব বন্ধ করা রয়েছে। 
কেন কি জন্য বন্ধ? 
কি রয়েছে এই সব ঘরে?
এত বড় একটা শিল্পকর্ম কিন্তু তার #ব্লুপ্রিন্ট সহ ground work এর কোন কিছুই details পাওয়া যায় না।
না পাওয়া যায় সেই সময়ে আসা কোন ভ্রমনকারীদের বর্ননে কোন কিছু।
যেটুকু জানা যায় 
মহারাজ জয় সিংহ বংশ পরম্পরায় পেয়েছিলেন এই তাজমহলের মালিকানা। 
ওনার কাছ থেকে এই মহল কেড়ে নেন শাহজাহান।
তারপর সিঁড়ি সহ ভেতরের বেশ কিছু কাজ উনি বদলে দেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এছাড়া এই সাদা তাজমহলের ঠিক পাশেই কালো তাজমহল তৈরির ইচ্ছে ছিল শাহজাহানের, কিন্তু সেটি আর বাস্তবরূপ পেয়ে ওঠেনি বলেই জানা যায়।

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
বর্তমান তাজমহলে বিভিন্ন জায়গায় #ওম #লাল_পদ্মফুল #ধুতুরাফুল #নাগ_নাগিন #কলস ইত্যাদির চিহ্ন আজও কিন্তু বলছে অনেক কথাই, কিন্তু আজকাল জীবন্ত মানুষের কথাই কেউ শুনছে না, সেখানে আবার শিল্পকর্ম এর চিহ্ন। 
তবে বৃথা যায়না কিছুই, কালের কন্ঠ কে কবে চেপে রাখতে পেরেছে? 
সত্য আসবেই সামনে।
তবে তাজমহল তাজমহলই। 
সৌন্দর্য্য আর অনবদ্য গঠনশৈলী দুইদিকেই অপূর্ব। দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়। 
ঘোর লাগা এই স্বর্গীয় জগৎ থেকেআমরা যখন ফিরে এলাম তখন প্রায় সন্ধ্যে।

✍️ Prithwis Sen



এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...