সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড নাকি উত্তরাপথ ?

গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড নাকি উত্তরাপথ
লিখেছেন Prithwi Sen

আজকের গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড। প্রায় 2400 km বিস্তৃত এই রাস্তা। ব্যাক্টরীয়া সীমানা থেকে ব্রহ্মদেশ সীমানা অব্দি। বানিয়েছেন শের শাহ সুরি। 
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাসে আমিও পড়েছি এটাই।
তারপরেও পড়েছি। তবে ইতিহাসের নড়চড় হয়নি। 
শের শাহ তো শের শাহ। ইনিই বানিয়েছেন gt road

ইতিহাসের ক্লাসে:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
আজ এসেছি একটি ক্লাসে। ইতিহাস নিয়ে উৎসাহী 
কিছু নব্য যুবকদের মধ্যে gt road নিয়ে বলতে...
ক্লাসে ঢুকে সময় নষ্ট করলাম না। 
সোজাসুজি চলে এলাম প্রসঙ্গে।
স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীরভঙ্গীতে বলতে শুরু করলাম-
আসুন, আজ আপনাদের শোনাই GT Road এর ইতিহাস-

প্রসঙ্গ GT Road:
●●●●●●●●●●
হ্যাঁ, মাত্র পাঁচ বছরের শাসনকালে এই রাস্তা তার বানানো।  হুমায়ুনকে তাড়িয়ে দেন সমর্খণ্ডে। তার পৈতৃক দেশে। 
হুমায়ুন সেখানে চুপচাপ বসে রইলেন পাঁচটি বছর। 
সুরি দখল করলেন দিল্লীর মসনদ।
অন্য কোন রাজা ছিল না তখন ভারতের বুকে। 
(অন্তত আমার পড়া ইতিহাস বইটি এরমই বলছে।) 
যদি থেকেও থাকতো রাজারা। আগেই বাবর হুমায়ুন তাদের মেরে শান্তির ধর্মে পরিবর্তিত করে দিয়েছেন। 
তাই সবাই এখন শান্তি অনুসারী। 
বাকী রাজারা রইলেন সকলেই শান্তি পালন করতে চাইলেন। 
ওদিকে হুমায়ুন এখন চুপচাপ। 
সবাই শান্তিতে যখন, তখন শের শাহ নিজেও শান্তি পালন করতে লাগলেন। তাই রাজকাজে মন দিলেন।
চারিদিকে এতই শান্তি বিস্তৃত হল যে প্রজারা এই নতুন রাজা পেয়ে বর্তে গেল। 
খাজনার উপর খাজনা দিয়ে কোষাগার ভরিয়ে তুলল। 
এত অর্থ পেয়ে এখন শের শাহ কি করবেন?
ভেবে ভেবে দেখলেন একটা রাস্তার খুব দরকার। 
নাহলে বড্ড অসুবিধা। 

প্রশ্ন:
◆◆◆◆
একজন ছাত্র প্রশ্ন ছুঁড়ল
-তাহলে শের শাহ'র কর্মচারী কিম্বা সৈন্যরা যেত কোন রাস্তা ধরে?
-নাকি জমির আল পথ ধরে তারাও যেত? 
সাথে তাদের ঘোড়া রথ কোন পথে যেত?
-তার আগে কি রাস্তা ছিল না?
-তাহলে বাবর এল কোন রাস্তা ধরে?
-কোন রাস্তা ধরেই বা এসেছিলেন মেগাস্থিনিস?
-বাণিজ্য কিভাবে করতে আসতো ব্যবসায়ীর দল?
হুট করে এরকম প্রশ্ন। একদম রেডি ছিলাম না।
বলতেও পারছি না যে অবান্তর এসব প্রশ্ন করবেন না। 
আমাদের পড়ানো সিলেবাসের 'কসম' রইল...
তাই পাশ কাটানোর জন্য বলে দিলাম-
আসছি আপনার প্রশ্নে পরে... আগে মূল বিষয়টা বলে নিই। 
জানি ক্লাস শেষ হলে ব্যস্ততার অজুহাতে কেটে পড়ব। 
এসব উৎপটাং প্রশ্ন যতই এড়ানো যায়। ততই ভালো। 
বিতর্কে জড়াব না। 
বেশ ভালো নাম করেছি। 
বই বেরিয়েছে আমার। বেশিরভাগ প্রোপাগান্ডার উপরেই  লেখা যদিও...
দু-পয়সা রোজগার হচ্ছে উপরি, এই বাজারে। 
ভালো বেতন। 
কি দরকার নিজেকে বিড়ম্বনায় ফেলার। 
তাছাড়া বিতর্ক হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে...
কি প্রসঙ্গে ছিলাম যেন...
(দেখলেন তো, উল্টোপাল্টা প্রশ্ন তুলে সব গুলিয়ে দিচ্ছেন। এরপরে যদি আবার এরম তারকাটা মার্কা প্রশ্ন করেছেন তাহলে সিলেবাস ছুঁড়ে মারব... মুখে বলতে পারলাম না যদিও)
হ্যাঁ শের শাহ gt রোড বানিয়েছেন। 
যেমন ভাবা তেমন কাজ। নেমে পড়লেন বানাতে। 
কেউ বলে শুরু করলেন তিনি সাসারাম থেকে বানানো।
কেউ বলেন বানানো শুরু হয়েছে দিল্লি থেকে। 
যাইহোক, যেখান থেকে হোক না কেন রাস্তা বানানো শুরু করলেন। 

আবার প্রশ্ন:
●●●●●●●●●
-আচ্ছা বেশ বেশ,
সিংহাসনে বসার কতদিন পরে বানানো শুরু করলেন?
আবার একটা অবান্তর প্রশ্ন। 
আবার সেই ছেলেটা। 
ভালো করে দেখলাম এবার ওকে। 
মাঝারি উচ্চতা। গায়ের রঙ বেশ ফর্সা। উজ্জ্বল। চোখেমুখে একটা জ্যোতি রয়েছে। চশমার ভেতর দিয়ে চোখগুলো একটু ছোট। মঙ্গলিয়ান face।
ভালো করে মেপে দেখলাম। 
তারপর আস্তে আস্তে বললাম
-যেদিন বসলেন মসনদে সেদিন থেকেই বানানো শুরু করলেন। হাতে যথেষ্ট অর্থ এসে গেছে সেদিনই। 
সেদিনই সকাল বেলায় তার মাথায় এল ভাবনা। 
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। 
সাথে সাথে ডাক দিলেন দক্ষ শ্রমিকদের। 
তারা দলে দলে এসে কাজে লেগে গেল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। 
সেদিন থেকেই তৈরি শুরু হল রাস্তা।
সারাটা ক্লাস হেসে উঠল। আমিও হাসলাম। তবে মেপে। একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ছেলেটিকে বিঁধলাম। 
যাতে এরপরে আর এরকম প্রশ্ন না করে। 
আসলে আমি জানি কি সিস্টেম। 
Psychology এটাই। ভুল হোক বা ঠিক, জনসমর্থন যদি নিজের দিকে টেনে নেওয়া যায় তবে ভুল হয়েও ঠিক হয়ে যাওয়া যায়। 
সুবিধা হল বেশিরভাগ মানুষ ভাবে কম। 
স্রোতের দিকে গা ভাসিয়েই তাদের আনন্দ। 
তাই জনসমর্থন নিজের দিকে টানতে গেলে গতের কথা বললে সুবিধা হয়।
আমি একদৃষ্টিতে দেখে চলেছি ছেলেটিকে। 
তারপর হাল্কা করার জন্য বললাম
-silence। এসব প্রশ্নের উত্তর জেনে কি হবে? 
মূল বিষয়ে মনোযোগ না দিলে কি করে পাশ করবে? 
ভালো রেজাল্ট কিভাবে আসবে?
কিন্তু ছেলেটি এতটুকু দমল না। 
আবার প্রশ্ন করল
-কিভাবে এই রাস্তাটা তৈরি হল?
-এতক্ষনে একটা কাজের প্রশ্ন করলেন। 
একটু উৎসাহিত করলাম ছেলেটিকে। 
একে বলে balancing। সব দিক ঠিক রাখা।
-দুইদিকে দুইদল শ্রমিকদের কাজে লাগানো হল। 
দলে দলে যোগ দিল রাজ্যে বেকার বসে থাকা গুলতানি করা সব যুব সমাজ। আসলে বাবর হুমায়ুন শের শাহ এর সময়ে অর্থনীতির চরমে ছিল তখনের ভারত। 
এত পর্যাপ্ত অর্থ এসে গিয়েছিল সবার হাতে, অনেকেই কাজকম্ম ছেড়ে দিয়েছিল। 
তাইতো শের শাহ যেই রাস্তা বানানোর কাজে নেমে পড়লেন সবাই স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কাজ করতে চলে এল।
বক্তব্য শেষ করে ভাবছি পরবর্তী প্রসঙ্গ। 
ঠিক তখনই

বেয়াড়া তর্ক:
●●●●●●●●●●●
-শুরুতেই টার্গেট দিয়ে দিলেন শের শাহ। 
2400 km রাস্তা।
সবাই মনে প্রানে লেগে পড়ল। 
দেখতে দেখতে তৈরি হয়ে গেল 2400 km রাস্তা। 
মাত্র পাঁচ বছরেই...
দেখি ছেলেটি আবার দাঁড়িয়েছে। 
গা জ্বলে গেল। 
মুখে কিছু না বলে ইশারা করলাম, বক্তব্য বলার জন্য।
কিন্তু ছেলেটা যেন ঝড় বইয়ে দিল-
-চারিদিকে শান্তি আর শান্তি। 
-কোথাও কোন যুদ্ধ বিগ্রহ হয়নি। 
-কোথাও কোন ঝড় বৃষ্টি হয়নি। হয়নি বন্যা খরা। 
কোন কর্মী অসুস্থ হয়নি। কেউ ছুটি নেয় নি। 
-কারণটা কি? রাস্তা না বানিয়ে তারা ঠিকমতো ঘুমোবে না ...এই পণ করে সবাই কাজে নেমেছিল?
-এবং যে কর্মীরা কাঁচামাল সরবরাহের দ্বায়িত্ব নিয়েছিল তারাও জীবনপণ করে সমস্ত কাঁচামাল সঠিক সময়ে সরবরাহ করে গিয়েছিল?
-তাই সব কিছুই শান্তি শান্তি ভাবে মিটল?
-এতসবকিছু একনাগাড়ে সঠিকভাবে কিকরে ঘটতে পারে?
আমি তো হতভম্ব। 
কি বলব, না বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
ততক্ষনে ছেলেটা আবার শুরু করেছে-

জটিল অংক:
●●●●●●●●●●
-তার মানে কর্মীরা টার্গেট নিয়ে কাজে নেমেছিল...
তাও সেই লক্ষ্য কম নয়
হিসেব করলে যা দাঁড়াচ্ছে-
কর্মীরা নিশ্চয় প্রতিদিন গড়ে 2 km করে রাস্তা বানানোর টার্গেট নিয়েছিল। 
দুইদিকে 1 km করে বানাবে রাস্তা। দুটি দল। 
তাহলেই প্রতিদিন 2 km বানানো হবে।  ঠিক বলছি তো?
কিন্তু যা টার্গেট নেওয়া হয় তা তো আর সবসময় হয়ে উঠে না। ওই শেষ মেস হল যখন বানানো হল দেখা গেল রাস্তা হয়েছে 1.35km করে... প্রতিদিন আর কি। 
কি তাই তো?
অবশেষে শের শাহ যেদিন চোখ বুজল। 
সেদিন রাস্তা বানানো হয়ে গেল ব্যাক্টরীয়া থেকে মায়ানমার অব্দি। 2400km।
আমি কোনরকমে গলার আওয়াজ সপ্রতিভ রেখে জিজ্ঞেস করলাম- প্রতিদিন 1.35km... ব্যাপারটা বুঝলাম না যে
ছেলেটা উঠে এল ব্ল্যাকবোর্ডে। 
বছরে 365 দিন। 5 বছর শের শাহ রাজত্ব কাল। 
365x5=1825 দিন
2দিন অতিরিক্ত leap year
Total=1827 দিন
এবারে 2400km রাস্তাকে 1827 দিন দিয়ে ভাগ করলে আসে প্রতিদিন গড়ে 1.31km রাস্তা
ধরা যাক গড়ে 1.35km রাস্তা। 
অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে 1350 মিটার রাস্তা বানানো হয়েছিল শের শাহ সুরির সময়ে। 
অংক দেখে আমি হাঁ। চুপ রইলাম। কিছুক্ষণ। 
তারপর বললাম- হ্যাঁ এটাই বানানো হয়েছিল।
ইশারায় ওকে বললাম আসনে ফিরে যেতে। 
এবারে বললাম-
হ্যাঁ এই হল gt road বানানোর ইতিহাস। 
আসলে শান্তি যদি থাকে তাহলে সবকিছু ভালোভাবে হয়। রাস্তা তো কোন ব্যাপার না। 
আসলে বুঝলেন কিনা, ভারতের যেটুকু উন্নতি হয়েছে হয়েছে ওই মুঘল আর পাঠান সময়েই। 
দেখছেন না তাজমহল লালকেল্লা কুতুব মিনার একের পর এক নিদর্শন। 
Technology পুরোটাই technology।
ওরাই এনেছে ভারতে। তাই তো কামান এনে দুমদাম ফাটিয়ে পুরো ভারতটা দখল করে ফেলল...

পুনরায় প্রশ্ন
◆◆◆◆◆◆◆◆
আবার সেই ছাত্র। আবার একটা বেয়াড়া প্রশ্ন
-কিন্তু যতই technology এর গপ্প শোনান না কেন 
ওই সময়ে প্রতিদিন গড়ে 1.35km রাস্তা বানানো কি সহজ কথা? 
-সব জায়গা তো সমতল না। উঁচুনিচু পাহাড় পর্বত নদী খাল বিল সব পেরুতে হয়েছে। 
-কোথাও কাদা জমি, কোথাও পাথুরে জমি,কোথাও কাঁকুরে জমি, কোথাও চাষের ক্ষেত। সবকিছু সমান করে শক্ত করে রাস্তার ভীত দাঁড় করাতে হয়েছে...
- এত সহজে হয়ে গেল?
এক কথায় এটা প্রায় অসম্ভব কাজ। 
এছাড়াও তখন বন জঙ্গল বেশি ছিল। 
সেসব পরিষ্কার করতে সময় লাগবে না? বন্য জন্তুরা আক্রমন করবে না? তাদের বাসস্থানে হাত পড়লে?
-উফফ, বড্ড উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করেন আপনি। 
আর বিরক্তি লুকোতে পারলাম না। শ্লেষের সাথে বললাম
-এখুনি কি বললাম। সবাই শান্তিতে ছিল। শান্তির তো এটাই মহিমা। বন্য জন্তুরাও মেনে নিয়েছিল শান্তির বার্তা। ওরাও বুঝেছিল এই রাস্তার গুরুত্ব।
ধমকটা বেশ জোরেই দিলাম...
ক্লাস একদম নিশ্চুপ। 
ছেলেটিও চুপ করে গেল। আমি এটাই চেয়েছিলাম। 
বাকীদের প্রশ্ন করলাম-
কারুর কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন...
না কোন প্রশ্ন নেই। খুশিই হলাম।
দীর্ঘ ইতিহাস পড়ানো শেষ হল। 
দৃপ্ত পায়ে ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। 
কেমন যেন রাজ্য জয়ের অনুভূতি হচ্ছে। 
এইসব আধ-দামড়াদের ক্লাস নেওয়া চাট্টিখানি কথানা। 
বড্ড বেঁকা প্রশ্ন করে। 
ভেবে পাইনা। 
সিলেবাসের বাইরে এত প্রশ্নের কি আছে? 
সেই তো লিখবি ওটাই... যেটা পড়ানো হচ্ছে। 
তবে না মার্ক্স পাবি।
আরে বাপু, আমিও এই পড়েই এই লিখেই আজ বড় lecturer। না out of syllabus দেখি। 
না পড়ি। না বুঝার চেষ্টা করি। 
তাই উন্নতির সিঁড়িতে গতি আমার। তরতরিয়ে...

আবার সেই ছেলে:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
সেদিন সন্ধ্যায় দেখা করল বেয়াড়া প্রশ্ন করা সেই ছাত্র। 
তখন আমি হোটেলের কফি হাউসে। 
সবে বসেছিলাম কফিটা নিয়ে। সামনে এসে দাঁড়াল।
দেখেই মাথায় রক্ত চড়ে গেল। 
এসেই গেছে যখন, বসতে বললাম। ইশারায়।
অফার করলাম peanuts মশালা। 
খেল। কফিও বললাম। 
জিজ্ঞেস করলাম- বল কি বক্তব্য।
ছেলেটি বের করল কিছু পুঁথি। তার ব্যাগ থেকে। 
-এই ব্যাপারে কথা বলতাম...
-কি ওগুলো?
-প্রাচীন পুঁথি। কিছু প্রাচীন দস্তাবেজ। ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। কারন এই পুঁথি বলছে উত্তরাপথ নামক এক প্রাগৈতিহাসিক রাস্তার সম্বন্ধে। 
এটাই আজকের gt road। 
শুনে চুপ করে গেলাম কিছুক্ষণ। 
-তুমি কি প্রশ্ন করছিলে আজ এই পুঁথিতে দেওয়া তথ্যগুলোর উপরে ভিত্তি করে? 
-হ্যাঁ। 
-তুমি কি পারো পড়তে এই পুঁথিগুলো?
-না, আমার বাবা পারতেন। তিনিই শুনিয়েছেন পড়ে আমায়। তিনি বলেছেন এই পুঁথির মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত প্রযুক্তির কথা। সেই প্রযুক্তি হারিয়ে গেছে। 
তবে এই পুঁথি থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
আমি তাড়াতাড়ি ওকে বললাম সমস্ত পুঁথি ব্যাগে ঢুকাও। 
দ্রুত কফি শেষ করে ওকে নিয়ে গেলাম আমার রুমে। 
রুম সার্ভিসে বলে রেখেছিলাম হুইস্কি শিখ কাবাব আর চিকেন টিক্কা দিয়ে যেতে। সব cancel করলাম। 
দরজায় DND board ঝুলিয়ে দিলাম।
এবার বসলাম মুখোমুখি। 
আমার নজর পুঁথির দিকে। সমস্ত পুঁথিগুলো খুললাম। বুঝলাম বহু প্রাচীন। 
কিছু চামড়ার। কিছু ভুর্যপত্রের। কিছু কাপড়ের। 
খুব কম করেও পাঁচশ বছরের পুরোন হবে
কিন্তু আমাকে আরো অবাক করে ছেলেটি বলল- 
একটি পুঁথি প্রায় দু'হাজার বছরের পুরোন। 
আমি বললাম- তোমার কাছে কিভাবে?
বলল- পারিবারিক সম্পত্তি। আসলে কোন এক সময়ে কোন এক মন্দিরের সম্পদ ছিল এগুলো। সেই মন্দিরে আক্রমন হলে পুঁথিগুলো দেওয়া হয় মনাস্তারিতে। 
পরে সেই মনাস্তারি সংস্কারের সময় কিছু পুঁথি সংগ্রহে চলে আসে এই ছেলেটির পূর্বপুরুষের কাছে। 
তখন ওরা ছিল ওই এলাকার রাজা।
পুঁথিগুলো চেয়ে নিলাম ওর কাছ থেকে। দুদিনের জন্য। 
বিদায় দিলাম ওকে। 

প্রস্তুতি:
●●●●●●●
Reception এ ফোন করে বললাম কাল check out করছি না। থাকছি। কালকের entry করে রাখুন। 
হোম সার্ভিসে ফোন করে এক ফ্লাস্ক কফি চেয়ে নিলাম। 
কফি দিয়ে গেল। 
আমি ততক্ষনে রেডি হয়ে নিলাম। অফিসিয়াল পোশাক ছেড়ে বারমুডা টি শার্ট। ac সেট করলাম 23 ডিগ্রিতে। বাইরে dnd লাগানো। চেক করে নিলাম।

বন্ধু:
◆◆◆◆
Scan করলাম কয়েকটি পাতা। 
তারপর এই পুঁথিগুলোর অক্ষরের sample পাঠালাম আমার কয়েকজন বন্ধুদের। আমরা একই গ্রুপের। 
গ্রুপের বলতে, একই লবির আর কি...
এতদিন আমরাই ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করে এসেছি। 
আমরা কখনও নিজেদের মধ্যে করিনি বিশ্বাসঘাতকতা। বরঞ্চ সাহায্য করেছি। একযোগে থেকেছি। 
অনেক ঝড় ঝাপ্টা এসেছে, কিন্তু আমরা ভাঙিনি।
আমরা ওটাই পড়িয়েছি যেটা শাসকদল চেয়েছে। 
আমরা ওটাই লিখিয়েছি যেটা দরকার। 
আমরাই system। education system। সব নিয়ন্ত্রণে।
আসল ইতিহাস? ওসব দূর অস্ত।
পরিবর্তে পেয়েছি উন্নতি। 
promotion আরও promotion। নাম। খ্যাতি। সম্মান।
ভাবছি কি উত্তর আসবে। উত্তর এল।
হ্যাঁ চেনে ওরা। এই অক্ষর। যাক শান্তি হল। 
ওদিকে সবাই উত্তেজিত। এ কি জিনিস হাতে এসেছে। 
কিভাবে পেলাম হরেক প্রশ্ন... 
উত্তরে শুধু বললাম- এক জনের ঘরে পড়েছিল। পুজো করত। তার কাছ থেকে আনা। পড়ে ফেরৎ দেব...বলেছি
সকলে live এলাম lappy তে। 
পাশাপাশি চলতে লাগলো whatsapp।
পাতার পর পাতা scan চলতে থাকলো। 
save হতে থাকলো আমার ব্যক্তিগত data saverএ। 
ওদিক থেকে আসতে থাকলো বর্ণন। 
পরেরদিন বিকেলে শেষ হল পুঁথি পাঠ। 
প্রায় 22 ঘন্টা। আমরা কেউ বিশ্রাম নিই নি। 
একফোঁটা ঘুমাই নি। 

পুঁথি:
●●●●●
পুঁথিগুলির কয়েকটির আসল স্থান  ছিল প্রাচীন তক্ষশীলা মহাবিদ্যালয়ের মন্দির সংলগ্ন গ্রন্থাগার। 
বেশিরভাগ রাস্তা বানানোর কারিগরী বিদ্যার উপরে লেখা। কিভাবে পরিমাপ করা উচিত। কোন মাটিতে কিরকম পাথর ব্যবহার করা উচিত। কোন ধরনের পাথর সেরা। কোন লেয়ারে কোন পাথর ব্যবহার করা হবে। পাথর কিভাবে কাটা উচিত। ইত্যাদি রয়েছে বর্ণন। 
এছাড়া রয়েছে উত্তরাপথ বানানোর সময় যে পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে সেই সম্বন্ধে সমস্ত খুঁটিনাটি।
কোন পর্যায়ে কিভাবে বানানো হয়েছে। 
কিভাবে হয়েছে extention। সমস্ত details রয়েছে।
বিশদে বলতে গেলে অনেক কথা বাড়বে। 
তাই একটু সংক্ষেপ করছি।
আসছি মোদ্দা কথায়।

উত্তরাপথের ইতিকথা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
মনু। নৌকায় করে নেমেছিলেন যিনি বর্তমান উত্তর ভারতে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন নর্মদা নদীর ওপারে না যেতে। অর্থাৎ দক্ষিণ ভারতে না যাওয়ার জন্য। 
কারন ছিল দক্ষিণে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা। 
বেশিরভাগ মানুষ মারা গিয়েছে। অল্প কয়েকজন মানুষ রয়েছে মনুর কাছে,  তারা যাতে ওদিকে গিয়ে বিপদে না পড়ে সেইজন্য সাবধানী হয়ে মনু এরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন একটি মানুষ খুবই দামি।
ক্রমে ক্রমে নর্মদা নদীর উত্তরদিক উত্তর ভারত হিসেবে পরিচিতি পেল আর দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ ভারত। 
ধীরে ধীরে উত্তর ভারতে জনগন বৃদ্ধি পেল। গড়ে উঠল নগরী। যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠল। কিন্তু সেরকম কিছু না। বলতে গেলে কাঁচাপথ ছিল যেটুকু সেটুকুই ছিল তখনের যোগাযোগের মাধ্যম।
সময় এগিয়ে চলেছে। 
জল ক্রমশ কমে এসেছে দক্ষিণে, এবারে উঠছে গাছপালা। দক্ষিন ক্রমশ হচ্ছে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। 
সভ্যতা বলতে উত্তর ভারতে গড়ে উঠেছে।
রাময়নের পরের কথা। 
রাজা তখন শ্রীরাম। স্থাপন হয়ে গিয়েছে রামরাজ্য। 
কিন্তু শ্রীরাম কোনরকম বাদানুবাদে যেতে চান না। 
ভাগ করে দিতে চান তার সাম্রাজ্য। 
এবং স্থাপন করতে চান এক উন্নত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। যা পরবর্তী কালে রামরাজ্যের ভিত্তি হবে। সংস্কার, শিক্ষা, মানবিকতায় বারেবারে পুষ্টি দেবে সভ্যতার বিকাশে।
ভাগ করে দিলেন রাজ্য। 
ভরতের মাতা কৈকেয়ী। তিনি কেকয় রাজ্যের রাজকন্যা। একমাত্র কন্যা ছিলেন তিনি। 
তাই তার পুত্র ভরত ছিলেন কেকয় অংশের ভাবী রাজা। 
কিন্তু ভরত কখনো সেখানের রাজা হতে চাননি...
ভরতের দুই পুত্র তক্ষ এবং পুষ্কল। 
তক্ষকে দ্বায়িত্ব দিলেন শ্রীরাম তার দিদিমার রাজ্য কেকয় রাজ্যের এক বিখ্যাত জনপদের। নাম পরিবর্তন করে দিলেন সেই জনপদের। তক্ষশীলা। 
পুষ্কলকে দিলেন অন্য এক নগরী, নাম পুষ্কলাবতী।
পুষ্কল এবং তক্ষকে বললেন একটি রাস্তা বানাতে। 
নিজে সহায়তা করলেন সেই রাস্তা বানানোর কাজে।
পাশাপাশি বললেন মহাবিদ্যালয় বানাতে। 
বিশাল পাহাড় কেটে বানানো হল মহাবিদ্যালয়। 
এদিকে তক্ষশীলা, ওদিকে পুষ্কলাবতী।
তক্ষশীলা নগরীর নামে পরিচিতি পায় সেই বিদ্যালয়। তক্ষশীলা মহাবিদ্যালয়।
ততদিনে শ্রীরাম বিদায় নিয়েছেন। 
ধীরে ধীরে রাস্তা তৈরি হল তক্ষশীলা থেকে অযোধ্যা। 
।।।উত্তরাপথের জন্ম হল।।।
★★★★★★★★★★
তক্ষ এরপরে রাস্তা বাড়িয়ে নিলেন কিছুটা আরো উত্তরে। উন্নত সভ্যতা রোম গ্রিসের সাথে বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য...
মূলতঃ উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে ছাত্ররা পড়াশুনা করতে। 
তাই প্রয়োজনে বিভিন্ন রাস্তা এসে মিশছে উত্তরাপথে।
আসছে বাণিজ্য শিবিরের দল। এই পথের জন্য ব্যবসা হয়েছে সুগম। তাম্রলিপ্ত বন্দরের থেকে এসে মিশেছে আরেকটি রাস্তা। 
এল মহাভারতের সময়।
অঙ্গ প্রদেশের রাজা কর্ণ। দক্ষিণ বঙ্গের রাজা ভীম। দুইজনেই নিয়মিতভাবে যাতায়াত করতেন ইন্দ্রপ্রস্থ। 
এই পথ ধরেই।
কর্ণ মাঝে মাঝেই যেতেন কর্ণ প্রয়াগ। বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানে। তারও পছন্দের পথ ছিল এটাই।
সুবর্ণ ভূমি অর্থাৎ বর্তমান ব্রহ্মদেশ থেকে বাহলিক অর্থাৎ ব্যাক্টরীয়া প্রদেশ অব্দি দীর্ঘ পথে বাণিজ্য চলত। 
পথে পড়ত আসাম, বঙ্গ, বিহার, দিল্লী হয়ে ওদিকে গুজরাট, এদিকে মধ্যপ্রদেশ। বাণিজ্য চলত কাশ্মীর, আফগানিস্তান হয়ে মিশর গ্রীস রোম অব্দি। 
সময়ের চাকা ঘুরছে। 
পাল্লা দিয়ে ক্রমশ বাড়ছে উত্তরাপথ।
রাজা বিক্রমাদিত্য। বেতাল পিশাচ সিদ্ধ। 
বত্রিশ সিংহাসন লাভ করেছিলেন নিজ তপবলে। 
তার সময় সমগ্র আরবদেশ ছিল তার অধীনে। 
এই রাস্তা তিনি বাড়িয়ে দিলেন ব্যকট্রিয়া অব্দি। 
এদিকে বাড়িয়ে নিলেন উজ্জ্যিনি অব্দি। 
এল নন্দ রাজাদের সময়। তারা বাড়িয়ে দিলেন আরো পূর্বে। আচার্য্য চাণক্য এই রাস্তা ধরেই পাটলিপুত্র থেকে তক্ষশীলা যাতায়াত করতেন।
এলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য। বাড়িয়ে দিলেন আরো পূর্বে বঙ্গদেশ অব্দি। 
রাজা অশোক চওড়া করে দিলেন এই রাস্তা সাঁচি হয়ে শ্বশুরঘর বিদিশা অব্দি। বিভিন্ন বৌদ্ধ মনাস্তারি এবং স্তূপের পথ সুগমের জন্য। বিভিন্ন জলসত্ৰ, পান্থশালা, স্তুপ, হাসপাতাল তৈরি করলেন এই রাস্তার পাশে পাশে।
বৌদ্ধ স্তূপগুলি মোটামুটি হাসপাতাল বিদ্যালয় এবং পান্থনিবাস এই তিনের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো। তাই রাজা অশোক বিশেষ জোর দিলেন স্তূপগুলির যত্নে। পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠলেন। 
বড় বড় মহাবৃক্ষ রোপন হল রাস্তার দুইধারে। 
খনন করলেন বড় বড় পুকুর জলাশয়। একসাথে সৌন্দর্য এবং জনসেবা দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটালেন।
ধীরে ধীরে এই রাস্তার সাথে যোগ হল বিভিন্ন রেশম পথের। যেগুলো দিয়ে সহজে যাওয়া যায় চীন, তিব্বত, ব্রহ্মদেশ। এদিকে গ্রীস, রোম, মিশর, ব্যাবিলন। 
এইভাবে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজারা বাড়িয়ে তুলেছেন এই রাস্তা। বলতে গেলে কয়েক হাজার বছর ধরে এই রাস্তা বেড়েছে অল্প অল্প করে। 
সময়ের হাত ধরে, সময়ের দাবি মেনে। 

আমার decision:
●●●●●●●●●●●●●●
ফিরে এলাম পুঁথি জগৎ থেকে আমার জগতে। 
সব নথিভুক্ত করে রাখলাম। 
সামনের দিন আসছে technologyএর। 
সেইসময় প্রযুক্তি বলে দেবে সব। 
কথা বলবে এই প্রযুক্তি। সমস্ত বিকৃতি সমস্ত মিথ্যাচার দূরে সরিয়ে সামনে নিয়ে আসবে সত্য। 
তখন আর propaganda ছড়ানো যাবে না। 
আসলে ছড়িয়ে লাভ হবে না। 
তথ্য বলবে সত্য। 
এই পুঁথিতে লেখা উপাদানগুলো সঠিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে। বাকী লেখা অনুযায়ী অনুসরণ করতে হবে বানানোর কৌশল। 
যদি কোনভাবে আধুনিক রাস্তা বানানোর সাথে এই প্রাচীন পদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটানো যায় তবে আসবে আরেক ঐতিহাসিক জয়। 
আমার পরবর্তী খোঁজ হবে এই উপাদানগুলোর খোঁজ লাগানো।
তাই এখনই এই সত্য প্রকাশের সময় এটা নয়। 
এখনও লোকে জানুক শের শাহ সুরি বানিয়েছেন  GT Road। 
এখন আমি নিশ্চিত রাজা অশোকের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছিলেন সুরি। তাই এই রাস্তা সারিয়েছেন শের শাহ সুরি। তাও পুরোটা নয়। সাসারাম থেকে চিটাগং অব্দিটুকুই। শুধু সারানো নয়, রাস্তার ধারে গাছপালা এবং কুয়া খনন করে রাস্তার গুরুত্ব বাড়িয়েছেন। সাজিয়েছেন। 
তবে তিনি যা করেছেন সম্রাট অশোকের তুলনায় কিছুই নয়।
তবে একথা প্রকাশ এখনই করব না।
সত্যি বলতে কি আমিও জানতাম শের শাহ সুরি বানাননি এই GT Road। কিন্তু সেটা বললে আমার চাকরি থাকত না।
তাই  উত্তরাপথের সম্বন্ধে এখনই বলব না। 
আমারও বাকি আছে চাকরীর আরো কয়েকটা বছর। 
ততদিন এই সত্য আমি গোপনে রাখব আমার কাছে। 
ছেলেটিকে ডাকলাম। এল একটু পরেই...
পরিষ্কার বললাম- এইসব প্রাগৈতিহাসিক অমূল্য সম্পদ তোমার কাছে থাকলে নষ্ট হতে পারে। আমরা এসব রাখব সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করে। তুমি কি চাও বল?
তবে যখন দরকার হবে তুমি ফেরত পাবে।
ছেলেটা রাজী হল। 
মুখবন্ধ স্বরূপ দিলাম ওকে পঞ্চাশ হাজার। 
এইবার লেকচারে যা পেয়েছিলাম পুরোটাই আর কি...
তবে খারাপ লাগলো না টাকাটা দিয়ে
কারন এতদিন তো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে টাকা নিয়েছি
আজ না হয় দিলাম কিছু সত্যের খাতিরে।

ভবিষ্যৎ:
◆◆◆◆◆◆
তবে আমি জানি। আমার কিছু ক্ষতি হয়নি। 
বরঞ্চ হাতে লেগেছে এক রত্ন ভান্ডার। 
এরপরে নতুন গবেষণার নামে এইসব তথ্য প্রকাশ করব। 
আমার নামে বেরুবে সেই লেখা।
পুঁথিগুলো হবে সেই গবেষণার কয়েকটি নথিমাত্র। 
যা করে যাব। আগামি কয়েক শত বছরের সেরা ঐতিহাসিক খোঁজকারক হয়ে থাকব আমি।
নতুন খোঁজ কর্তা। 
নতুন তথ্য। 
নতুন thesis। 
নতুন ইতিহাস। 
আবার নতুন syllabus।
বদলে দেবে প্রচলিত ধারণা।

✍️ Prithwis Sen

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার আব্দুল ও’রকম নয় (লাভ জিহাদ)

সন্দেহজনক উপায়ে সনাতনী ছেলে বা মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তর করা, পরবর্তীতে বিয়ে করাকে লাভ জিহাদ বলে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে আমরা জেনেছি, রীতিমতো বৈদেশিক পয়সা আসে এই জেহাদি কাজের জন্য। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাস এর অকাল মৃত্যুতে এই বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে এসেছে। একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মনোজগতের মধ্যে হাজার মাইলের তফাৎ আছে। একটি ছেলে বোধ হবার পরই সে উপলব্ধি করে সে যতটুকু মানুষ তার অধিক সে হিন্দু। উঠতে বসতে ঘরে বাইরে সর্বত্র তার চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একজন দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ। ওই একই পরিবারের একটি মেয়ের জীবন হয় ঠিক উল্টো। উঠতে বসতে চারপাশের মানুষ তাকে বুঝিয়ে দেয় সে হিন্দু এবং একারণেই সে অধিক আদরণীয়। বাবা মা মেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। এই বিশেষ নজর রাখা ২ রকমের হয়। অধিক শাসনে রাখা, বাবা-মা এর সাথে মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আরেক রকম হচ্ছে মেয়ে যা বলে তাতেই সায় দেয়া। মেয়ে উচ্ছন্নে গেলেও আধুনিক হিন্দু বাবা-মা তাতে তাল দেন। অন্যদিকে বাইরের দুনিয়ায় সে একেবারে রাজেন্দ্রাণির মত...

যুক্তিফাঁদে ফড়িং - চমক হাসান

ডিসক্লেইমারঃ চমক হাসানের লেখা অসাধারণ একটা বই এটি। খুব সহজভাবে যুক্তি, ভ্রান্তি নিয়ে লেখা যা প্রতিটি হিন্দু তথা সকল মুক্তবুদ্ধির মানুষের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এখানে এই বইটি উম্মুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে।  চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হুংকার দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের বিষাক্ত নখ, দাঁত দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার একটি বড় অস্ত্র হলো এই ভ্রান্তি'র ব্যবহার। ইংরেজিতে যাকে ফ্যালাসি বলে। এটা পড়লে মোটা দাগে কোনটা সুযুক্তি আর কোনটা কুযুক্তি সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।  [চমক হাসান ভাই যদি কোনোদিন এই সাইট দেখেন, আপনার ঔদার্যের গুণে ক্ষমা করবেন।] গল্প শুরুর আগে ভ্রান্তি চারিদিকে আন্তনগর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বসে আছে হাসিব, গন্তব্য 'খোকসা'। ঢাকা থেকে বাসে করে আসা যেত, তাতে সময় অনেক কম লাগত। তবু সে ট্রেনেই আসবে ঠিক করেছিল। ট্রেনে চড়লে নাকি একটা আয়েশি ভাব আসে ওর, ট্রেনের ছন্দ আর দুলুনিতে মনটা খুশি খুশি লাগে। তা ছাড়া স্টেশনে স্টেশনে মানুষের ওঠানামা দেখতে ভালো লাগে। আর...

মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের আত্মত্যাগ

কয়েকজন বোধহীন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতাদের অবিমৃষ্যতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলো। দেশ ভাগ হবার আগ-পর যেসব হিন্দু ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান অংশে ছিলেন তাদের বড় একটা অংশ সহায় সম্পত্তি ফেলে পশ্চিম বাংলায় চলে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কিছু ব্যক্তি পূর্বপুরুষের ভুমি আঁকড়ে ধরে মাতৃভূমির মানুষদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চাইলেন। আবার অন্যদিকে যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা উচ্চবর্ণের হিন্দুর থেকে মুসলিমরা শ্রেয় এই মূঢ় তত্ত্বে বিশ্বাস করে জিন্নাহ’র সাথে গাট বাঁধলেন। আদতে ভারতবর্ষের হিন্দুরা কখনো একতাবদ্ধ ছিলো না- যার কারণে ইরান, তুরান, মোগল, মঙ্গোল, সাত সাগরের পার থেকে বিভিন্ন হানাদাররা এসেছে আর এদেশ শাসন করেছে। ইংরেজরা যখন এদেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনো সনাতনীদের কোনো একক দল গড়ে ওঠেনি, নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। সেসময় মুসলিমরা মোটা দাগে সবাই মুসলিমলীগের সাথে থাকলেও হিন্দুদের তেমন কোনো গ্রহনযোগ্য দল ছিলো না। হিন্দুদের কেও বাম, কেও কংগ্রেস ইত্যাদি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত ছিলো। ১১ আগষ্ট ১৯৪৭ তারিখে পাকিস্তান এসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে জিন্নাহ বললেন, “Now I think we should keep ...

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায়

দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই, শিবপ্রসাদ রায় ছোটোবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম “বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।” বড় হয়েও এদেশের বহু ঘটনার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে গোটা দেশের ভাবনা-চিন্তাগুলো যেন একটা অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে যদি আমরা বাস্তবের মাটিতে পা না রাখতে পারি, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম সর্বনাশ। এদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করা হয় ভারত বিভাগকে। এই ভারত বিভাগ ছিল এদেশের তাবৎ হিন্দু নেতৃবৃন্দের নির্বুদ্ধিতার পরিণতি। শতকরা সাতানব্বই জন মুসলমানের দাবী ছিল : হিন্দু মুসলমান দুটো পৃথক জাতি। হিন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে মুসলমানদের ধর্ম সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের একটা হোমল্যান্ড চাই, যার নাম পাকিস্তান। মুসলমান সমাজের পুরোটাই যখন ভারতবর্ষকে দুখণ্ড করতে ব্যস্ত, তখন হিন্দু নেতারা কি করছিলেন? জনগণকে বোঝাচ্ছিলেন, হিন্দু মুসলমান পৃথক জাতি নয়। এক জাতি, ভারতীয় জাতি। মুসলীম লীগ এবং মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং পাকিস্তানের দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহাত্মা গান্ধী বললেন : ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে তা আমা...

বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা”। এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। পাঠকদের বলবো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভাবুন।  ------- কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না। অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কণ্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে এবং মোহও কম নাই। চারিদিক গমগম করিতে থাকে—এবং এই বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে, মানুষ অভিভূতের মত তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে। Propaganda বস্তুতঃ এই-ই। বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য, এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল, সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই। যে দুই-একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল, আসল কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছিল, তাহাদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অবধি ছিল না। কিন্তু আজ আর সেদিন নাই। আজ অপরিসীম বেদনা ও দুঃখ ভোগের ভিতর দিয়া মানুষের চৈতন্য হইয়াছে যে, সত্য বস্তু সেদিন...

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১

রক্তাক্ত শারদ’ ২০২১ (১) ২০১৬ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া পবিত্র কাবা শরীফের উপর মহাদেবের ছবি বসানোর অজুহাতে রসরাজের বাড়ী সহ সেখানে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ী তছনছ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর দেখা গেলো সে লোক একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী ধরা পড়ার পর ঐ মুসলিম দুস্কৃতিকারী মানুষটার উপর আগ্রাসী ঐ মানুষ গুলোর কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি। (২) ১৫ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশের দাউদকান্দির হিন্দু পাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৬টি কোরান হাদিসের উপর মল ত্যাগ করা হয়েছে – এই খবর যখন চাউর করে সন্দেহের তীর পাশের হিন্দু বাড়ী গুলোর দিকে দেয়া হয়েছিলো, পরে যখন হাবিবুর রহমান ও তার দুই মুসলিম বন্ধু পুলিশি অভিযানে ধৃত হয় ও স্বীকারোক্তি দিয়ে এধরনের জঘন্য কাজের দায় নিজে নেয়ার পরও কোন মুসলিম ধার্মিক গোষ্ঠী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ্যাকশনতো দূরের কথা বিচারের জন্য কোন দাবীও করে নাই। (৩) পুরান ঢাকায়, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু সেজে মুসলিম হিজাবী মেয়ের গায়ে মুখে আবির দেয়, শ্লীলতাহানি করে –এই কর্ম করে ধরা পড়া মুসলিম ও যুবকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্...

‘মেরুদণ্ডহীন’ হিন্দু সম্প্রদায় ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ - চিররঞ্জন সরকার

তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে যখন আলাপ হচ্ছিল, তখন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, “কী-যে সব প্যানপ্যানানি লেখা লেখেন। এসব বাদ দ্যান। পারলে শক্ত করে লেখেন। না হলে লেখালেখি বাদ দেন। আর লিখেই-বা কী লাভ? রাস্তায় নামতে পারেন না? অস্তিত্ব হুমকির মুখে, আর আপনারা চুপচাপ বসে আছেন। আপনাদের পরিণতিও একসময় রোহিঙ্গাদের মতো হবে।” উনি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। আমি শুনলাম। এই কথাগুলো যে আমি বুঝি না বা দেশের হিন্দুরা বোঝে না, তা তো নয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কী-ই-বা বলার বা করার আছে? এদেশে হিন্দুদের যা পরিস্থিতি– যেভাবে অপমান-নির্যাতন-হামলা চালানো হচ্ছে– রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে আচরণ করছে– তাতে হিন্দুদের মার খাওয়া ছাড়া, মেনে নেওয়া ছাড়া, বিলাপ ও চোখের জল ফেলা ছাড়া, দগ্ধ হওয়া ছাড়া, ‘গোপনে দেশত্যাগ’ ছাড়া আর কী-ই-বা করার আছে? হ্যাঁ, হিন্দুরা যা করতে পারে, যা করতে পারত, যা করা উচিত ছিল তা হল, ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা। কিন্তু এদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা, আমাদের পূর্বপ্রজন্মের নেতারা (হিন্দু-নেতারা, ‘হিন্দু-নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে বিবেকে বাধছে, কিন্তু উপায় কী) সঠিক সময়ে সঠ...

১৯ আগষ্ট ২০২২ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র বক্তব্য

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ আগষ্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম তিনি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। এটি ছিলো আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখলাম তিনি এব্যাপারে কোনো ঘোষণা দিলেন না। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নাই, পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করেছিলো পাকি প্রেত্মারা। শুধু তাই নয় যেসব ব্যক্তি এবং পরিবার এই নৃশংস ঘটনার বিপরীতে গর্জে উঠতে পারে তাদেরকেও স্বপরিবারে খুন করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি ৪ নেতাকে খুন করেছিলো শয়তানরা। আমি বিশেষভাবে কর্ণেল জামিলকে স্মরণ করতে চাই- যিনি একমাত্র ব্যক্তি কারো অপেক্ষায় না থেকে একাকী ছুটে গিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে। এবং তিনিও সেই নৃশংস ভাগ্য বরণ করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বছর পরেও সে ঘটনা স্মরণ করে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এহেন ঘটনায় তিনি যদি ব্যথিত হন, তিনিই তো সর্বোচ্চ বোঝার কথা হিন্দুদের বাড়ি...