লিখেছেন Prithwi Sen
স্থান:কঠ গনরাজ্য
বর্তমান পাঞ্জাবের প্রান্তে। সিন্ধুর তীরে।
সময়: 325 খৃস্টপূর্ব
বর্তমান পাঞ্জাবের শেষ প্রান্তে তখন ছিল এক প্রদেশ, কঠ গনরাজ্য। সেই রাজ্যের রানী হচ্ছেন কার্বিকা।
রানী ঠিক নন অবশ্য, তিনি আসলে রাজকুমারী। ছোটবেলায় তার বাবা-মা মারা যান। তিনি হন ভাবি রানী। তাকে সিংহাসনে বসিয়ে রাজত্ব চালিয়ে যেতেন মন্ত্রী।
তবে ছোট থেকেই তিনি শিখেছেন বিভিন্ন রাজকাজের খুঁটিনাটি। সস্ত্র ও শাস্ত্র; দুই শিক্ষা চলেছে তার সমানতালে। পাশাপাশি তিনি শিখেছেন অস্ত্রশিক্ষা। তার পিতার সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য সেনাদের কাছে। শিখেছেন সমর শিক্ষা।
কূলগুরুর কাছে শিখেছেন সমস্ত পাঠ। বেদ শিক্ষা। শাস্ত্র শিক্ষা।
মহিলা শিক্ষা:
◆◆◆◆◆◆◆◆
তখন সাধারণ ঘরের মেয়েরা খুব একটা বাইরের কাজে যেতেন না। মোটামুটি ঘরের কাজেই সময় কাটাতেন। কিন্তু রাজকুমারী কার্বিকা একটু বড় হতেই বুঝলেন মহিলাদের সমর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা।
তিনি বিশেষ আইনের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত মেয়েদের বাধ্যতামূলক করলেন অস্ত্র শিক্ষা।
সেই উদ্দেশ্যে নিয়োগ হল বিভিন্ন অস্ত্র শিক্ষাবিদ। রাজ্যের মহিলারাও খুবই সানন্দে অংশ নিলেন।
বিভিন্ন বিষয়ে চলল মহিলাদের শিক্ষাগ্রহন-
-তীর ধনুক, তীরের মুখে আগুন/বিষ লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ।
-বর্শার মুখে বিস্ফোটক লাগিয়ে সঠিক লক্ষ্যভেদ করা।
-বিভিন্ন বিষ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান।
-চোখে পট্টি বেঁধে অস্ত্রচালনা। বাতাসের গতি, শব্দ, গন্ধ ইত্যাদি মাথায় রেখে অস্ত্রের লক্ষ্যভেদ।
-বিনা অস্ত্রে খালি হাতে শত্রুর মোকাবিলা।
-ঘোড়ায় চড়ে অস্ত্র চালনার শিক্ষা।
-প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিস তথা গাছের ডাল, পাথর, ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে শত্রুর মোকাবিলা।
অস্ত্রশিক্ষার সমস্ত পর্যায় অতিক্রম করতে থাকলেন মহিলারা। শিক্ষা শেষে উপযুক্ত মহিলাদের সংঘবদ্ধ করে বানানো হল এক ভয়ানক যোদ্ধা বাহিনী। নামকরন করা হল চন্ডী বাহিনী।
কঠ গনরাজ্য রাজকুমারী কার্বিকা:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
সবার নেতৃত্বে রইলেন রাজকুমারী কার্বিকা। তিনি নিজেও সাক্ষাৎ চন্ডী।
প্রায় ছয় ফিট তার উচ্চতা। উজ্জ্বল সূর্য্যের মত তার গায়ের রঙ এবং মুখ। দুইহাতে দুই তরোয়াল নিয়ে যখন তিনি নামতেন ময়দানে, তখন সাক্ষাৎ চন্ডীর আগমন ঘটত।
পাশাপাশি রাজকুমারী ছিলেন প্রজাদের প্রিয়। তিনি মাঝে মাঝেই রাজ্যে ঘুরে বেড়াতেন। সকলের অভাব অভিযোগ শুনতেন। সেই অনুযায়ী সমাধান করতেন।
ফলে তিনি খুবই প্রজা বৎসলা শাষিকা হয়ে উঠেছিলেন।
উপযুক্ত শাসক এবং নিবেদিত প্রাণ সৈন্যবাহিনী তার রাজ্যের শক্তি হয়ে উঠেছিল। দিন দিন রাজ্য উন্নতির সীমায় পৌঁছে যাচ্ছিল। সবে মিলে রাজ্যে ছিল খুশীর পরিবেশ।
তার রাজ্যে সেনাবাহিনী আলাদা করে কেউ ছিল না। প্রজারাই ছিল তার সেনা। এক এক অঞ্চলের কিছু জন পাহারা দেবে। বাকীরা করবে প্রতিদিনের কাজ- যেমন চাষবাস, ঘর বানানো, মাটির জিনিস বানানো, গাড়ি, শকট, রথ বানানো, লোহার জিনিস বানানো ইত্যাদি।
কিছুদিন পর অবশ্য ব্যাপারটা পাল্টে যাবে। যারা পাহারা দিচ্ছিল, তারা কাজে নামবে। অন্যদল আসবে পাহারায়। তবে প্রতিদিনের কাজের শেষে বিকেলে কিছুটা সময় সকলকেই করতে হত অস্ত্র শিক্ষা। অনুশীলন। এইভাবে তার রাজ্যে সকলেই হয়ে উঠেছিল এক একজন অনন্য সেনা/সেনানী। সাথে সুনাগরিক। তার এই অনন্য রীতিতে আশেপাশের শত্রুরা এড়িয়ে চলত। এরকম শক্তিশালী গনরাজ্যের বিরুদ্ধে কেই বা যাবে। যেচে কে আর নিজের বিনাশ ডেকে আনবে।
সবে মিলে রাজ্য ছিল শান্তি। প্রজারা নিজেদের কাজ এবং অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
আলেক্সান্ডার এর আগমন:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কিন্তু রাজ্যে শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হল না।
খবর এসেছে, সুদূর গ্রীস থেকে বিশ্বজয়ী হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে আসছেন আলেক্সান্ডার। ভারত দখল তার লক্ষ্য। ইন্দ্রপ্রস্থ এর পরে পাটলিপুত্র দখল তাকে করতেই হবে। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি বিশ্বজয়ী সম্রাট হিসেবে নাম লেখাবেন।
স্থান:কঠ গনরাজ্য
বর্তমান পাঞ্জাবের প্রান্তে। সিন্ধুর তীরে।
সময়: 325 খৃস্টপূর্ব
বর্তমান পাঞ্জাবের শেষ প্রান্তে তখন ছিল এক প্রদেশ, কঠ গনরাজ্য। সেই রাজ্যের রানী হচ্ছেন কার্বিকা।
রানী ঠিক নন অবশ্য, তিনি আসলে রাজকুমারী। ছোটবেলায় তার বাবা-মা মারা যান। তিনি হন ভাবি রানী। তাকে সিংহাসনে বসিয়ে রাজত্ব চালিয়ে যেতেন মন্ত্রী।
তবে ছোট থেকেই তিনি শিখেছেন বিভিন্ন রাজকাজের খুঁটিনাটি। সস্ত্র ও শাস্ত্র; দুই শিক্ষা চলেছে তার সমানতালে। পাশাপাশি তিনি শিখেছেন অস্ত্রশিক্ষা। তার পিতার সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য সেনাদের কাছে। শিখেছেন সমর শিক্ষা।
কূলগুরুর কাছে শিখেছেন সমস্ত পাঠ। বেদ শিক্ষা। শাস্ত্র শিক্ষা।
মহিলা শিক্ষা:
◆◆◆◆◆◆◆◆
তখন সাধারণ ঘরের মেয়েরা খুব একটা বাইরের কাজে যেতেন না। মোটামুটি ঘরের কাজেই সময় কাটাতেন। কিন্তু রাজকুমারী কার্বিকা একটু বড় হতেই বুঝলেন মহিলাদের সমর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা।
তিনি বিশেষ আইনের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত মেয়েদের বাধ্যতামূলক করলেন অস্ত্র শিক্ষা।
সেই উদ্দেশ্যে নিয়োগ হল বিভিন্ন অস্ত্র শিক্ষাবিদ। রাজ্যের মহিলারাও খুবই সানন্দে অংশ নিলেন।
বিভিন্ন বিষয়ে চলল মহিলাদের শিক্ষাগ্রহন-
-তীর ধনুক, তীরের মুখে আগুন/বিষ লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ।
-বর্শার মুখে বিস্ফোটক লাগিয়ে সঠিক লক্ষ্যভেদ করা।
-বিভিন্ন বিষ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান।
-চোখে পট্টি বেঁধে অস্ত্রচালনা। বাতাসের গতি, শব্দ, গন্ধ ইত্যাদি মাথায় রেখে অস্ত্রের লক্ষ্যভেদ।
-বিনা অস্ত্রে খালি হাতে শত্রুর মোকাবিলা।
-ঘোড়ায় চড়ে অস্ত্র চালনার শিক্ষা।
-প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিস তথা গাছের ডাল, পাথর, ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে শত্রুর মোকাবিলা।
অস্ত্রশিক্ষার সমস্ত পর্যায় অতিক্রম করতে থাকলেন মহিলারা। শিক্ষা শেষে উপযুক্ত মহিলাদের সংঘবদ্ধ করে বানানো হল এক ভয়ানক যোদ্ধা বাহিনী। নামকরন করা হল চন্ডী বাহিনী।
কঠ গনরাজ্য রাজকুমারী কার্বিকা:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
সবার নেতৃত্বে রইলেন রাজকুমারী কার্বিকা। তিনি নিজেও সাক্ষাৎ চন্ডী।
প্রায় ছয় ফিট তার উচ্চতা। উজ্জ্বল সূর্য্যের মত তার গায়ের রঙ এবং মুখ। দুইহাতে দুই তরোয়াল নিয়ে যখন তিনি নামতেন ময়দানে, তখন সাক্ষাৎ চন্ডীর আগমন ঘটত।
পাশাপাশি রাজকুমারী ছিলেন প্রজাদের প্রিয়। তিনি মাঝে মাঝেই রাজ্যে ঘুরে বেড়াতেন। সকলের অভাব অভিযোগ শুনতেন। সেই অনুযায়ী সমাধান করতেন।
ফলে তিনি খুবই প্রজা বৎসলা শাষিকা হয়ে উঠেছিলেন।
উপযুক্ত শাসক এবং নিবেদিত প্রাণ সৈন্যবাহিনী তার রাজ্যের শক্তি হয়ে উঠেছিল। দিন দিন রাজ্য উন্নতির সীমায় পৌঁছে যাচ্ছিল। সবে মিলে রাজ্যে ছিল খুশীর পরিবেশ।
তার রাজ্যে সেনাবাহিনী আলাদা করে কেউ ছিল না। প্রজারাই ছিল তার সেনা। এক এক অঞ্চলের কিছু জন পাহারা দেবে। বাকীরা করবে প্রতিদিনের কাজ- যেমন চাষবাস, ঘর বানানো, মাটির জিনিস বানানো, গাড়ি, শকট, রথ বানানো, লোহার জিনিস বানানো ইত্যাদি।
কিছুদিন পর অবশ্য ব্যাপারটা পাল্টে যাবে। যারা পাহারা দিচ্ছিল, তারা কাজে নামবে। অন্যদল আসবে পাহারায়। তবে প্রতিদিনের কাজের শেষে বিকেলে কিছুটা সময় সকলকেই করতে হত অস্ত্র শিক্ষা। অনুশীলন। এইভাবে তার রাজ্যে সকলেই হয়ে উঠেছিল এক একজন অনন্য সেনা/সেনানী। সাথে সুনাগরিক। তার এই অনন্য রীতিতে আশেপাশের শত্রুরা এড়িয়ে চলত। এরকম শক্তিশালী গনরাজ্যের বিরুদ্ধে কেই বা যাবে। যেচে কে আর নিজের বিনাশ ডেকে আনবে।
সবে মিলে রাজ্য ছিল শান্তি। প্রজারা নিজেদের কাজ এবং অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
আলেক্সান্ডার এর আগমন:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কিন্তু রাজ্যে শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হল না।
খবর এসেছে, সুদূর গ্রীস থেকে বিশ্বজয়ী হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে আসছেন আলেক্সান্ডার। ভারত দখল তার লক্ষ্য। ইন্দ্রপ্রস্থ এর পরে পাটলিপুত্র দখল তাকে করতেই হবে। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি বিশ্বজয়ী সম্রাট হিসেবে নাম লেখাবেন।
কঠ রাজ্যের থেকে কয়েক মাইল দূরে বিশাল শিবির পড়েছে তার। খবর আসছে প্রায় আশি হাজার (মতান্তরে এক লাখ) সেনা রয়েছে আলেক্সান্ডারের বাহিনীতে।
তাদের অভিমুখ এই কঠ গনরাজ্য।
( আরো একদল সেনা রয়েছে। আলেক্সান্ডারের। তবে তারা অনেক দূরে রয়েছে। তারাও প্রায় লাখ খানেক। সেদিকে তারা বিদ্রোহ দমন করছে। )
পরিকল্পনা:
●●●●●●●●●
আলেক্সান্ডার কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রমন করবে কঠ গনরাজ্য। গুপ্তচর এই খবর আনতেই সক্রিয় হয়ে উঠলেন কার্বিকা। আর দেরি নয়।
ওদের গুছিয়ে উঠার আগেই আক্রমন করতে হবে।
চন্ডীসেনা জমায়েত হল।
সেখানে রয়েছে 3500 সেনার সাথে 1500 ঘোড়ায় চড়া সেনাবাহিনী। এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে রয়েছেন আরো 3500 পদাতিক সেনা।
সব মিলিয়ে 8500 চন্ডী সেনা।
চন্ডী সেনাদের চারটি দলে ভাগ করা হল।
দ্বায়িত্ব নিলেন জয়া, সৌরিমিনি, মৃদুলা, গরিন্য।
অন্যান্য প্রজারাও এলেন যুদ্ধে।
সব মিলিয়ে সেনা সংখ্যা হল 12000।
মতান্তরে 16000।
কার্বিকা জানতেন এ এক অসম যুদ্ধ।
কিন্তু কিভাবে কি করা যায়। যুদ্ধ কৌশল সাজাতে হবে।
অনেক ধৈর্য সহকারে সারাদিন ধরে চলল পরিকল্পনা।
চক্র ব্যূহ সাজাতে হবে।
এমন ফাঁদ যাতে আলেক্সান্ডার বেরুতে না পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন সারারাত ধরে চলল সেনা সাজানো। মাত্র চারশ তীরন্দাজ পাঠানো হল।
তারা আলেক্সান্ডার শিবিরের পাশের পাহাড়ের উপরে লুকিয়ে পড়ল।
তির বর্শা ধারাল পাথর সমেত বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তারা একজোট করল।
আক্রমন:
●●●●●●●
ভোর হচ্ছে। সেনারা উঠছে সকলে ঘুম থেকে।
জমায়েত হচ্ছে ছোট ছোট জটলায়।
সাথে সাথে ইশারা হল।
একসাথে এল কয়েকশ আগুনে তির।
নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানল অপ্রস্তুত সৈন্যদের শরীরে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই এল আরো ঝাঁক ঝাঁক আগুনে তির।
শত শত মরল সেনা। জ্বলল তাদের শিবির।
শুরু হয়ে গেছে চিৎকার। জ্বলন্ত শিবির থেকে প্রান বাঁচিয়ে বেরোতে গিয়ে মারা গেল আরো কয়েক শত সেনা। দেখতে দেখতে বিছিয়ে গেল লাশের পর লাশ।
এই যুদ্ধরীতি পরে পরিচিত হয়
lure the tiger out of den
অর্থাৎ বাঘকে তার গুহার বাইরে আসতে বাধ্য করা।
বর্তমানে গেরিলা যুদ্ধনীতির খুব প্রিয় এক কৌশল।
আবার আক্রমন:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
খবর গেল আলেক্সান্ডারের কাছে।
নির্দেশ দিলেন তিনি সেনাপতিদের। আক্রমন করতে কঠ গনরাজ্য। প্রায় চল্লিশ হাজার সেনা চলল কঠ রাজ্যের দিকে।
এদিকে সরু পথের দুইপাশে পাহাড়ের উপরের জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে কার্বিকা সেনা।
সারাটা পথ জুড়ে আক্রমন চলল, গেরিলা যুদ্ধ কায়দায়। পাহাড়ের উপর থেকে পাথর, বড় বড় গাছ এসে পড়তে লাগল। সাথে তির বর্শা। কখনও আগুন মাখা কখনো বিষ মাখা। চলতে লাগলো গুলতির মাধ্যমে ধারালো পাথরের বৃষ্টি।
আলেক্সান্ডার বাহিনীর কাঁচিকলে পড়া দশা। পাথর আর গাছের পরপর পড়া তো রয়েছেই। ফলে হয়ে যাচ্ছে নিজেরা আহত। প্রচুর হয়েছে নিহত।
রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে দুদিকেই। বাকিরা পালাতে পারছে না। তার উপর তির বর্শা পাথরের চলছে অনর্গল বৃষ্টি।
মোটামুটি এসব পেরিয়ে যখন পৌঁছল বাহিনী কঠ প্রদেশের কাছাকাছি, তখন সৈন্য প্রায় অর্ধেক। বেশিরভাগ পথেই মারা গিয়েছে। যে কজন পৌঁছেছে তাদের বেশিরভাগ আহত।
বিশেষ কায়দা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপর এক বিশেষ কৌশল নিল কার্বিকা বাহিনী। বিশেষ ধরনের চুঙ্গি ব্যবহার করে অদ্ভুত একরকম আওয়াজ তুলল তারা। চারপাশের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেই আওয়াজ যখন ফিরে এল, মনে হতে লাগলো যেন বহু বহু হাজার বাহিনী রয়েছে সেই জায়গা জুড়ে।
এই অদ্ভুত আওয়াজে রীতিমতো ভ্রমে পড়ে গেল আলেক্সান্ডার বাহিনী।
তারা সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল।
পেছনে পড়ে গেল বাহিনীর একাংশ।
ঔরর্মি যুদ্ধ:
●●●●●●●●
এই সময়ে নেওয়া হল ঔরর্মি যুদ্ধ কায়দা।
ঔরমি যুদ্ধ কায়দায় সমুদ্রের ঢেউ এর তীরে আছড়ে পড়ার মত কায়দায় বারে বারে আক্রমন করা হয়।
এই কায়দায় আক্রমন করলে সঠিকভাবে বোঝা যায়না শত্রু সংখ্যা ঠিক কত।
দুইভাগে বাহিনী ভাগ হতেই শুরু হল আবার আক্রমন। মাঝে ফেলে দেওয়া হল বেশ কিছু পাথর এবং গাছ।
সবে মিলে এই সেনাবাহিনীর হয়ে গেল প্রায় বিনাশ।
দিশেহারা হয়ে গেল আলেক্সান্ডার বাহিনী।
সেনাপতি সমেত এই বাহিনীর হল শোচনীয় পরাজয়।
বন্দি করে নেওয়া হল সেনাপতি সমেত কিছু বিশেষ সেনাপ্রধানদের।
আলেক্সান্ডার বাহিনী:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপরে এলেন আলেক্সান্ডার নিজে। বাকি বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে। বেশ কিছু বাহিনী পথেই হল নিহত।
সেনাবাহিনী সেই পথে যত এগোল তত দেখতে পেল লাশ। লাশের পর লাশ।
আগে যে বাহিনী গিয়েছে তাদের অবস্থা শোচনীয়।
ভয়ের সঞ্চার হল তাদের মনে।
রাস্তায় পড়ে রয়েছে আহত হয়ে বহু বহু সৈনিক।
তাদের যত্ন দরকার। বাহিনীর বেশ কিছু সৈন্য সেই আহত সৈন্যদের যত্নে লেগে পড়ল।
মোটামুটি আহত সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর শুরু হল সামনাসামনি আক্রমন। হঠাৎ করে এসে চন্ডী সেনা আক্রমন করে মুহুর্তে মিলিয়ে যায়।
ঔরমি যুদ্ধ শৈলী অনুসরণে চলল যুদ্ধ।
কখনো এদিক থেকে। কখনো ওদিক থেকে।
মোটামুটি আলেক্সান্ডার বাহিনীকে পেছনের দিক থেকে শেষ করা চলতে থাকে। একের পর এক আক্রমণে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে ফেলা হয়।
সংখ্যায় কমতে থাকে তারা দ্রুত।
সাদা পায়রা:
●●●●●●●●●●
উপায়ান্তর না দেখে আলেক্সান্ডার বার্তা পাঠালেন। ওদিক থেকে বার্তা এল রানীর সাথে আলেক্সান্ডারের হোক দ্বন্ধযুদ্ধ।
যে জিতবে তার শর্ত মেনে নেবে অপরজন।
উপায় ছিল না আলেক্সান্ডারের।
শোনা যায় অনেক চেষ্টা করেন আলেক্সান্ডার-
তার বাহিনীর সেরা লড়াকুর সাথে রানী বাহিনীর সেরা লড়াকুর মধ্যে লড়াই করানোর জন্য...
কিন্তু রানীর একই কথা।
দ্বন্ধ যুদ্ধ:
◆◆◆◆◆
শেষে আলেক্সান্ডারকে নামতে হল যুদ্ধের ময়দানে।
শুরু হল সম্মুখ সমর।
ভয়ানক সেই যুদ্ধে আলেক্সান্ডার দাঁড়াতে পারেন নি বলে জানা যায়। দুইহাতে তরোয়াল নিয়ে রাজকুমারী কার্বিকা যেন সাক্ষাৎ চন্ডী। বিদ্যুৎ গতিতে সেই তরোয়াল সবার আগে আঘাত হানল আলেক্সান্ডারের হাতে। ঢাল পড়ে যায় হাত থেকে। সাথে সাথে মাথায় তরোয়াল বাঁটের প্রচন্ড আঘাতে ছিটকে পড়েন আলেক্সান্ডার। অপেক্ষা করেন রাজকুমারী।
আলেক্সান্ডার আবার উঠলে যুদ্ধ শুরু হয়।
এবারে রানীর তরোয়াল আঘাত করে তার পেটে। বেরিয়ে আসে অন্ত্র।
পরাজয় স্বীকার করে নেন আলেক্সান্ডার।
জরিমানা:
●●●●●●●●
শর্ত অনুযায়ী বহু অর্থ দিতে হয় জরিমানা। আর কখনো সে আক্রমন করবে না কঠ রাজ্য। এই মর্মে সন্ধি করে বাকি সেনা নিয়ে আলেক্সান্ডার ফিরে আসেন।
ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন বন্দী হওয়া সেনাপ্রধানদের।
আহত-নিহত:
◆◆◆◆◆◆◆◆
আলেক্সান্ডারের কাছে ছিল মাত্র তিরিশ হাজার সেনা।
ত্রিশ হাজারের বেশিরভাগ অসুস্থ। আহত।
বাকি প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশিরভাগ মারা যায়।
বেশ কিছু সেনা গুরুতর রকমের অসুস্থ।
উল্টোদিকে
কার্বিকা সেনার প্রায় 2800 জন মারা যান বলে জানা যায়। মারা যান চন্ডী বাহিনীর চার প্রধান- জয়া, গরিন্য,সৌরিমিনি এবং মৃদুলা।
এই ঘটনার পরে আলেক্সান্ডার ছয় মাসের বেশি তার শিবিরে বসে থাকেন বলে জানা যায়।
সুস্থ্ হন নিজে। সুস্থ হয় তার সেনাদল।
✍️ Prithwis Sen
তথ্য সহায়তা-
রাজকুমারী কার্বিকার সাথে আলেক্সান্ডারের এই যুদ্ধের বর্ননা পাওয়া যায় বিভিন্ন পুরোন দস্তাবেজে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
(১) Hellenistic Babylonia।
(২) Political History of Ancient India~ রায়চৌধুরী।
■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■
এরপরে কি হয়?
সেই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে...
একদল বলেন আলেক্সান্ডার তার শর্ত মেনে কখনও আসেন নি আর কঠ গনরাজ্য।
তিনি ভারতে প্রবেশ করেন তক্ষশীলা দিয়ে।
আরেকদল বলেন যে-
একদিন আলেক্সান্ডার তার অবশিষ্ট কয়েক লাখ সেনা নিয়ে অতর্কিতে আক্রমন করেন কঠ গনরাজ্য।
তবে গনরাজ্যের স্বাভিমানি প্রজারা কেউ আত্মসমর্পণ করেন না। অসম যুদ্ধে সামনাসামনি লড়াই করে মৃত্যু বরন করেন সকলে।
চন্ডী বাহিনীর সবাই মারা যান। বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে দিতে রাজকুমারী কার্বিকাও মারা যান। এই যুদ্ধে।
কঠ গনরাজ্য লুট করে বিনষ্ট করা হয়।
তারপর এই পথ ধরেই তক্ষশীলা প্রবেশ করেন আলেক্সান্ডার।
এরপর হয় রাজা পুরুর সাথে যুদ্ধ।
আলেক্সান্ডারের সাথে রাজা পুরুর যুদ্ধ:
★★★★
প্রাচীন ভারতে মহিলাদের কখনোই ঘরে বসিয়ে রাখা হত না। রীতিমতো তারা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতেন। বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে মিলেছে তার প্রমান। যেমন রানী বাই (রাজা দাহিরের স্ত্রী), রানী দিদ্দা, রানী ভবশঙ্করী থেকে আধুনিক যুগে রানী লক্ষীবাই থেকে রানী অহল্যাবাই হোলকার। সকলেই নিজেদের কর্ম দক্ষতা প্রমান করেছেন।
তবে সেসব ইতিহাস আজ কোথায়?
প্রয়োজন মনে করেনি বিভিন্ন নামজাদা ইতিহাস লেখকেরা। এক্ষেত্রেও হয়েছে তাই।
আলেক্সান্ডারকে The Great প্রমান তো করতেই হত। নাহলে পরবর্তীতে প্রমান করে যাবে না বিদেশী শক্তি এসে পুষ্ট করেছে ভারতীয়দের।
Aryan invasion theory গেলাতে গেলে আলেক্সান্ডারকে মহান হতেই হত। হতেই হত দিগ্বিজয়ী।
তাদের অভিমুখ এই কঠ গনরাজ্য।
( আরো একদল সেনা রয়েছে। আলেক্সান্ডারের। তবে তারা অনেক দূরে রয়েছে। তারাও প্রায় লাখ খানেক। সেদিকে তারা বিদ্রোহ দমন করছে। )
পরিকল্পনা:
●●●●●●●●●
আলেক্সান্ডার কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রমন করবে কঠ গনরাজ্য। গুপ্তচর এই খবর আনতেই সক্রিয় হয়ে উঠলেন কার্বিকা। আর দেরি নয়।
ওদের গুছিয়ে উঠার আগেই আক্রমন করতে হবে।
চন্ডীসেনা জমায়েত হল।
সেখানে রয়েছে 3500 সেনার সাথে 1500 ঘোড়ায় চড়া সেনাবাহিনী। এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে রয়েছেন আরো 3500 পদাতিক সেনা।
সব মিলিয়ে 8500 চন্ডী সেনা।
চন্ডী সেনাদের চারটি দলে ভাগ করা হল।
দ্বায়িত্ব নিলেন জয়া, সৌরিমিনি, মৃদুলা, গরিন্য।
অন্যান্য প্রজারাও এলেন যুদ্ধে।
সব মিলিয়ে সেনা সংখ্যা হল 12000।
মতান্তরে 16000।
কার্বিকা জানতেন এ এক অসম যুদ্ধ।
কিন্তু কিভাবে কি করা যায়। যুদ্ধ কৌশল সাজাতে হবে।
অনেক ধৈর্য সহকারে সারাদিন ধরে চলল পরিকল্পনা।
চক্র ব্যূহ সাজাতে হবে।
এমন ফাঁদ যাতে আলেক্সান্ডার বেরুতে না পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন সারারাত ধরে চলল সেনা সাজানো। মাত্র চারশ তীরন্দাজ পাঠানো হল।
তারা আলেক্সান্ডার শিবিরের পাশের পাহাড়ের উপরে লুকিয়ে পড়ল।
তির বর্শা ধারাল পাথর সমেত বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তারা একজোট করল।
আক্রমন:
●●●●●●●
ভোর হচ্ছে। সেনারা উঠছে সকলে ঘুম থেকে।
জমায়েত হচ্ছে ছোট ছোট জটলায়।
সাথে সাথে ইশারা হল।
একসাথে এল কয়েকশ আগুনে তির।
নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানল অপ্রস্তুত সৈন্যদের শরীরে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই এল আরো ঝাঁক ঝাঁক আগুনে তির।
শত শত মরল সেনা। জ্বলল তাদের শিবির।
শুরু হয়ে গেছে চিৎকার। জ্বলন্ত শিবির থেকে প্রান বাঁচিয়ে বেরোতে গিয়ে মারা গেল আরো কয়েক শত সেনা। দেখতে দেখতে বিছিয়ে গেল লাশের পর লাশ।
এই যুদ্ধরীতি পরে পরিচিত হয়
lure the tiger out of den
অর্থাৎ বাঘকে তার গুহার বাইরে আসতে বাধ্য করা।
বর্তমানে গেরিলা যুদ্ধনীতির খুব প্রিয় এক কৌশল।
আবার আক্রমন:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
খবর গেল আলেক্সান্ডারের কাছে।
নির্দেশ দিলেন তিনি সেনাপতিদের। আক্রমন করতে কঠ গনরাজ্য। প্রায় চল্লিশ হাজার সেনা চলল কঠ রাজ্যের দিকে।
এদিকে সরু পথের দুইপাশে পাহাড়ের উপরের জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে কার্বিকা সেনা।
সারাটা পথ জুড়ে আক্রমন চলল, গেরিলা যুদ্ধ কায়দায়। পাহাড়ের উপর থেকে পাথর, বড় বড় গাছ এসে পড়তে লাগল। সাথে তির বর্শা। কখনও আগুন মাখা কখনো বিষ মাখা। চলতে লাগলো গুলতির মাধ্যমে ধারালো পাথরের বৃষ্টি।
আলেক্সান্ডার বাহিনীর কাঁচিকলে পড়া দশা। পাথর আর গাছের পরপর পড়া তো রয়েছেই। ফলে হয়ে যাচ্ছে নিজেরা আহত। প্রচুর হয়েছে নিহত।
রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে দুদিকেই। বাকিরা পালাতে পারছে না। তার উপর তির বর্শা পাথরের চলছে অনর্গল বৃষ্টি।
মোটামুটি এসব পেরিয়ে যখন পৌঁছল বাহিনী কঠ প্রদেশের কাছাকাছি, তখন সৈন্য প্রায় অর্ধেক। বেশিরভাগ পথেই মারা গিয়েছে। যে কজন পৌঁছেছে তাদের বেশিরভাগ আহত।
বিশেষ কায়দা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপর এক বিশেষ কৌশল নিল কার্বিকা বাহিনী। বিশেষ ধরনের চুঙ্গি ব্যবহার করে অদ্ভুত একরকম আওয়াজ তুলল তারা। চারপাশের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেই আওয়াজ যখন ফিরে এল, মনে হতে লাগলো যেন বহু বহু হাজার বাহিনী রয়েছে সেই জায়গা জুড়ে।
এই অদ্ভুত আওয়াজে রীতিমতো ভ্রমে পড়ে গেল আলেক্সান্ডার বাহিনী।
তারা সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল।
পেছনে পড়ে গেল বাহিনীর একাংশ।
ঔরর্মি যুদ্ধ:
●●●●●●●●
এই সময়ে নেওয়া হল ঔরর্মি যুদ্ধ কায়দা।
ঔরমি যুদ্ধ কায়দায় সমুদ্রের ঢেউ এর তীরে আছড়ে পড়ার মত কায়দায় বারে বারে আক্রমন করা হয়।
এই কায়দায় আক্রমন করলে সঠিকভাবে বোঝা যায়না শত্রু সংখ্যা ঠিক কত।
দুইভাগে বাহিনী ভাগ হতেই শুরু হল আবার আক্রমন। মাঝে ফেলে দেওয়া হল বেশ কিছু পাথর এবং গাছ।
সবে মিলে এই সেনাবাহিনীর হয়ে গেল প্রায় বিনাশ।
দিশেহারা হয়ে গেল আলেক্সান্ডার বাহিনী।
সেনাপতি সমেত এই বাহিনীর হল শোচনীয় পরাজয়।
বন্দি করে নেওয়া হল সেনাপতি সমেত কিছু বিশেষ সেনাপ্রধানদের।
আলেক্সান্ডার বাহিনী:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপরে এলেন আলেক্সান্ডার নিজে। বাকি বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে। বেশ কিছু বাহিনী পথেই হল নিহত।
সেনাবাহিনী সেই পথে যত এগোল তত দেখতে পেল লাশ। লাশের পর লাশ।
আগে যে বাহিনী গিয়েছে তাদের অবস্থা শোচনীয়।
ভয়ের সঞ্চার হল তাদের মনে।
রাস্তায় পড়ে রয়েছে আহত হয়ে বহু বহু সৈনিক।
তাদের যত্ন দরকার। বাহিনীর বেশ কিছু সৈন্য সেই আহত সৈন্যদের যত্নে লেগে পড়ল।
মোটামুটি আহত সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর শুরু হল সামনাসামনি আক্রমন। হঠাৎ করে এসে চন্ডী সেনা আক্রমন করে মুহুর্তে মিলিয়ে যায়।
ঔরমি যুদ্ধ শৈলী অনুসরণে চলল যুদ্ধ।
কখনো এদিক থেকে। কখনো ওদিক থেকে।
মোটামুটি আলেক্সান্ডার বাহিনীকে পেছনের দিক থেকে শেষ করা চলতে থাকে। একের পর এক আক্রমণে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে ফেলা হয়।
সংখ্যায় কমতে থাকে তারা দ্রুত।
সাদা পায়রা:
●●●●●●●●●●
উপায়ান্তর না দেখে আলেক্সান্ডার বার্তা পাঠালেন। ওদিক থেকে বার্তা এল রানীর সাথে আলেক্সান্ডারের হোক দ্বন্ধযুদ্ধ।
যে জিতবে তার শর্ত মেনে নেবে অপরজন।
উপায় ছিল না আলেক্সান্ডারের।
শোনা যায় অনেক চেষ্টা করেন আলেক্সান্ডার-
তার বাহিনীর সেরা লড়াকুর সাথে রানী বাহিনীর সেরা লড়াকুর মধ্যে লড়াই করানোর জন্য...
কিন্তু রানীর একই কথা।
দ্বন্ধ যুদ্ধ:
◆◆◆◆◆
শেষে আলেক্সান্ডারকে নামতে হল যুদ্ধের ময়দানে।
শুরু হল সম্মুখ সমর।
ভয়ানক সেই যুদ্ধে আলেক্সান্ডার দাঁড়াতে পারেন নি বলে জানা যায়। দুইহাতে তরোয়াল নিয়ে রাজকুমারী কার্বিকা যেন সাক্ষাৎ চন্ডী। বিদ্যুৎ গতিতে সেই তরোয়াল সবার আগে আঘাত হানল আলেক্সান্ডারের হাতে। ঢাল পড়ে যায় হাত থেকে। সাথে সাথে মাথায় তরোয়াল বাঁটের প্রচন্ড আঘাতে ছিটকে পড়েন আলেক্সান্ডার। অপেক্ষা করেন রাজকুমারী।
আলেক্সান্ডার আবার উঠলে যুদ্ধ শুরু হয়।
এবারে রানীর তরোয়াল আঘাত করে তার পেটে। বেরিয়ে আসে অন্ত্র।
পরাজয় স্বীকার করে নেন আলেক্সান্ডার।
জরিমানা:
●●●●●●●●
শর্ত অনুযায়ী বহু অর্থ দিতে হয় জরিমানা। আর কখনো সে আক্রমন করবে না কঠ রাজ্য। এই মর্মে সন্ধি করে বাকি সেনা নিয়ে আলেক্সান্ডার ফিরে আসেন।
ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন বন্দী হওয়া সেনাপ্রধানদের।
আহত-নিহত:
◆◆◆◆◆◆◆◆
আলেক্সান্ডারের কাছে ছিল মাত্র তিরিশ হাজার সেনা।
ত্রিশ হাজারের বেশিরভাগ অসুস্থ। আহত।
বাকি প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশিরভাগ মারা যায়।
বেশ কিছু সেনা গুরুতর রকমের অসুস্থ।
উল্টোদিকে
কার্বিকা সেনার প্রায় 2800 জন মারা যান বলে জানা যায়। মারা যান চন্ডী বাহিনীর চার প্রধান- জয়া, গরিন্য,সৌরিমিনি এবং মৃদুলা।
এই ঘটনার পরে আলেক্সান্ডার ছয় মাসের বেশি তার শিবিরে বসে থাকেন বলে জানা যায়।
সুস্থ্ হন নিজে। সুস্থ হয় তার সেনাদল।
✍️ Prithwis Sen
তথ্য সহায়তা-
রাজকুমারী কার্বিকার সাথে আলেক্সান্ডারের এই যুদ্ধের বর্ননা পাওয়া যায় বিভিন্ন পুরোন দস্তাবেজে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
(১) Hellenistic Babylonia।
(২) Political History of Ancient India~ রায়চৌধুরী।
■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■
এরপরে কি হয়?
সেই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে...
একদল বলেন আলেক্সান্ডার তার শর্ত মেনে কখনও আসেন নি আর কঠ গনরাজ্য।
তিনি ভারতে প্রবেশ করেন তক্ষশীলা দিয়ে।
আরেকদল বলেন যে-
একদিন আলেক্সান্ডার তার অবশিষ্ট কয়েক লাখ সেনা নিয়ে অতর্কিতে আক্রমন করেন কঠ গনরাজ্য।
তবে গনরাজ্যের স্বাভিমানি প্রজারা কেউ আত্মসমর্পণ করেন না। অসম যুদ্ধে সামনাসামনি লড়াই করে মৃত্যু বরন করেন সকলে।
চন্ডী বাহিনীর সবাই মারা যান। বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে দিতে রাজকুমারী কার্বিকাও মারা যান। এই যুদ্ধে।
কঠ গনরাজ্য লুট করে বিনষ্ট করা হয়।
তারপর এই পথ ধরেই তক্ষশীলা প্রবেশ করেন আলেক্সান্ডার।
এরপর হয় রাজা পুরুর সাথে যুদ্ধ।
আলেক্সান্ডারের সাথে রাজা পুরুর যুদ্ধ:
★★★★
প্রাচীন ভারতে মহিলাদের কখনোই ঘরে বসিয়ে রাখা হত না। রীতিমতো তারা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতেন। বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে মিলেছে তার প্রমান। যেমন রানী বাই (রাজা দাহিরের স্ত্রী), রানী দিদ্দা, রানী ভবশঙ্করী থেকে আধুনিক যুগে রানী লক্ষীবাই থেকে রানী অহল্যাবাই হোলকার। সকলেই নিজেদের কর্ম দক্ষতা প্রমান করেছেন।
তবে সেসব ইতিহাস আজ কোথায়?
প্রয়োজন মনে করেনি বিভিন্ন নামজাদা ইতিহাস লেখকেরা। এক্ষেত্রেও হয়েছে তাই।
আলেক্সান্ডারকে The Great প্রমান তো করতেই হত। নাহলে পরবর্তীতে প্রমান করে যাবে না বিদেশী শক্তি এসে পুষ্ট করেছে ভারতীয়দের।
Aryan invasion theory গেলাতে গেলে আলেক্সান্ডারকে মহান হতেই হত। হতেই হত দিগ্বিজয়ী।